নতুন মন্ত্র দিচ্ছে মন্ত্রণাসভা
কথা কম, সভাও কম, বরং একটু বিশ্রাম নিন
গোটা দল বাজি ধরেছে তাঁর উপরে। তিনি নিজেও চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু তাঁর এতটুকু পদস্খলনই যে দেশ জুড়ে বিপাকে ফেলে দিচ্ছে দলকে! তা হলে উপায়? নরেন্দ্র মোদীর জন্য সেই উপায়টাই খুঁজে বের করতে মরিয়া বিজেপির থিঙ্কট্যাঙ্করা। দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর জন্য তাই আপাতত তাঁরা একটা তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন। মোদী কী করবেন আর কী করবেন না, তালিকা ধরে ধরে সেটাই তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
মোদীর যে বিষয়টি নিয়ে এখন সবথেকে বেশি আতঙ্কে বিজেপি, তা হল ইতিহাসের পথে হাঁটতে গেলেই বারবার হোঁচট খাচ্ছেন দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তক্ষশীলা বা গুপ্ত-মৌর্য বংশের মধ্যে গুলিয়ে যাওয়ায় ভুল তো হয়েইছে, সম্প্রতি জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামও ভুল পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহার করায় কপালে ভাঁজ পড়েছে বিজেপির। কারণ, শ্যামাপ্রসাদ বিজেপির কাছে এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাঁকে নিয়ে কোনও রকম ভুল হওয়ার কথা নয় নেতাদের। সেই ভুল কি না দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর মুখে! মোদী অবশ্য পর ক্ষণেই ভুল শুধরে নিয়েছিলেন। তাতেও আতঙ্ক কাটছে না বিজেপিতে। বিষয়টা আঁচ করে তাই দলের থিঙ্কট্যাঙ্কের পরামর্শ, ঐতিহাসিক তথ্য পেশের সময় সতর্ক থাকুন। না হলে গোটা দলের ভাবমূর্তিতেই আঁচ পড়ছে।
একই ভাবে রাজনাথ সিংহ-অরুণ জেটলির মতো নেতারা মোদীকে পরামর্শ দিয়েছেন, অধিক সভায় হিতে বিপরীত হচ্ছে। শুধু ছত্তীসগঢ়ে নয়, বিধানসভা ভোটের মুখে আগামী সপ্তাহদুয়েক বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে। তাঁর সভায় ভিড়ও এখন আলোচনার বিষয়। যেখানে অপেক্ষাকৃত কম ভিড়, সেখানে বলাবলি শুরু হয়েছে, মোদীর সভা সফল হল না। এ জন্য মোদীকে ছোট ছোট সভা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আগে ৩-৪টি লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে এক-একটি বড় সভার আয়োজন করা হচ্ছিল। এখন ১০-১২টি বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে সভা করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, দলের নেতাদের পরামর্শ, বিধানসভা ভোট হয়ে গেলে অন্তত মাস দুয়েক বিশ্রাম নিন মোদী। পরে লোকসভার জন্য ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে ফের তেড়েফুঁড়ে নামানো যাবে।
দিল্লিতে মোদীর প্রচার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, “ভিড়ের নিরিখে সভা সফল না ব্যর্থ, সে সব বিতর্ক অমূলক। মোদীর সভায় এমনিতেই প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে। এর মধ্যে ২০-৩০ শতাংশ লোককে দল সভায় নিয়ে আসতে পারে। বাকিরা কিন্তু স্বেচ্ছায় আসছেন। তবে এটাও ঠিক, ছোট ছোট করে সভা করলে সেই এলাকার আরও অনেক বেশি সংখ্যক লোক মোদীর সভায় আসতে পারেন।” বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন, প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর নাম অনেক আগেই ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের জেতা-হারার দায়ও তাঁর উপরেই বর্তাবে। বুঝছেন মোদীও। তাই তিনি ঢেলে প্রচার করছেন বিধানসভা ভোটে। এবং রাজ্যে-রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে কেন্দ্র-বিরোধী প্রচারের অভিমুখ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রকে তোপ দাগা ঠিক আছে। কিন্তু ওই সব সভায় আসা সাধারণ মানুষ নিজেদের এলাকাগত সমস্যাও শুনতে চান মোদীর মুখে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছেন দলের নেতারা। মোদীর সব সভার আগে দিল্লির দফতর থেকেই তাঁর কাছে স্থানীয় সমস্যাগুলির নিয়ে তথ্য পাঠানো হচ্ছে। যাতে তিনি সেগুলি বক্তৃতায় তুলতে পারেন।
বিজেপি নেতৃত্বকে ভাবাচ্ছে আরও কয়েকটি বিষয়। সম্প্রতি দলের তরফে একটি সমীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, যুব সমাজ মোদীর প্রতি আকৃষ্ট হলেও তাঁদের অধিকাংশই জানেন না, বিজেপির প্রতীক কী! তাই মোদীকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, বক্তৃতার মাঝে তিনি যেন দলের প্রতীক চিহ্ন সম্পর্কেও জনতাকে বোঝান। সভাপতি রাজনাথ সিংহ ইতিমধ্যেই রাজ্যে-রাজ্যে বিজেপি নেতাদের দলের প্রতীক চিহ্নকে আরও বেশি করে চেনানোর জন্য প্রচার চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নতুন মন্ত্র
করুন
নিছক বক্তৃতা নয়, দলের প্রতীকটাও চেনান নবীন প্রজন্মকে।
প্রধানমন্ত্রী হলে কী করবেন, বলুন সে কথাও।
আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে চাই ছোট ছোট সভা।
স্থানীয় সমস্যার কথা বলুন। আপনার মুখেও মানুষ তা-ই শুনতে চায়।
সভায় বিনয়ী হোন। আত্মবিশ্বাসকে যেন অহঙ্কার মনে না হয়।
করবেন না
দুমদাম ঐতিহাসিক তথ্য দেবেন না। শ্যামাপ্রসাদ বা তক্ষশীলা নিয়ে যে ভুল করেছেন, তা বারবার করলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
এত বেশি সভা নয়। বেশি সভা মানেই বেশি বিতর্ক।
সম্ভাব্য শরিকদের বিরুদ্ধে কটূক্তি নয়। বরং দিন সদর্থক বার্তা।
মেরুকরণের হাতছানিতে পা নয়। একটি বেঁফাস মন্তব্যেও ঘুরে যেতে পারে ভোট।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর নরম নয়।
 
মোদীর বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ প্রায়শই উঠছে। তা হল, মোদী তো শুধুই কেন্দ্রের সমালোচনা করছেন! তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে কী করবেন, সে কথা তো বলছেন না! তাই মোদীকে বিকল্প পথের সন্ধান দিতেও বলা হচ্ছে। আবার সেটা করতে গিয়েও দু’একটা ক্ষেত্রে বিপদ হচ্ছে! হরিয়ানার সভায় মোদী রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পাকিস্তান সম্পর্কে সুর নরম করেছিলেন। দলের মধ্যেই তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। দলের নেতাদের পরামর্শ, এখনই এমন নরম অবস্থান নেওয়ার সময় আসেনি। মানুষ এখনও পাক মদতে চলা সন্ত্রাস নিয়ে গরম গরম কথাই শুনতে চায়। বিজেপির তরফেও বরাবরই পাকিস্তান এবং জঙ্গি দমন প্রসঙ্গে কড়া অবস্থান নেওয়া হয়েছে। বিজেপির চাপে মনমোহন সরকারও পাকিস্তান নিয়ে সুর চড়িয়ে রেখেছে। মোদী যেন কথাটা মাথায় রাখেন।
বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকে অন্তত ডজনখানেক দল সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মঞ্চ গড়ে কংগ্রেসের হাত শক্ত করতে ময়দানে নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে মেরুকরণের রাজনীতির ফাঁদে পা দেওয়ার ব্যাপারেও মোদীকে সতর্ক করেছে দল। এক নেতার বক্তব্য, “লোকসভা ভোটে দলের সব থেকে বড় ভরসা হল গোবলয়ের রাজ্যগুলি। সেখানে মেরুকরণের জমি প্রস্তুত। বিজেপিকে তার ফায়দা নিতেও হবে। কিন্তু মোদীকে যেন এ সব থেকে দূরে থাকেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর উচিত নয় এমন বিতর্কে জড়িয়ে পড়া।” অনেকে বলছেন, ভোটের পর শরিকদের সমর্থন লাগতেই পারে। ফলে মোদীকে সম্ভাব্য শরিকদের কাছে সদর্থক বার্তা দিতে হবে।
মোদীকে বিনয়ী হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন রাজনাথ। সভায় যাতে মোদী মাথা ঝুঁকিয়ে জনতার আশীর্বাদ কুড়োন, সে পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। রাজনাথ ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “মোদীর আত্মবিশ্বাসকেই ‘অহঙ্কার’ হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করেন বিরোধীরা। তা যে সত্যি নয়, সেটা মানুষের জানা উচিত।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.