কলেজের গোলমাল সামলান। নইলে পাড়ায় টেকাই দায় হয়ে উঠছে। কোচবিহার কলেজের অধ্যক্ষের কাছে এই মর্মে স্মারকলিপি দিলেন কলেজ-লাগোয়া এলাকার মহিলারা। সেই সঙ্গে হুমকি দিলেন, কলেজের ছাত্রদের জন্য তাঁদের ভোগান্তি চলতে থাকলে কলেজের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেবেন।
দুই সপ্তাহ ধরে ছাত্র সংগঠনগুলির সংঘর্ষে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কোচবিহার কলেজ। ৭ নভেম্বর ছাত্র পরিষদ-টিএমসিপি সমর্থকরা কলেজে ভাঙচুর চালায়। ৯ নভেম্বর টিএমসিপি-ছাত্র পরিষদ সংঘর্ষ জখম হয় ৫ জন। ১৩ নভেম্বর তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়ায় আতঙ্কে বন্ধ সংলগ্ন এলাকার দোকান। কলেজকে কেন্দ্র করে গোলমালের আঁচ পড়ছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও। |
দফায় দফায় ছাত্র সংঘর্ষ |
• ৭ নভেম্বর ছাত্র পরিষদ ও টিএমসিপি সমর্থকদের গোলমাল। কলেজে ভাঙচুর।
• ৯ নভেম্বর ফের ছাত্র সংঘর্ষে উত্তেজনা। টিএমসিপি-ছাত্র পরিষদ সংঘর্ষে জখম ৫।
• ১৩ নভেম্বর তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তেজনা। আতঙ্কে বন্ধ লাগোয়া এলাকার দোকানপাট। |
|
স্থানীয় এক বাসিন্দা সুমিত্রা পাল বলেন, “আমরা রাজনীতি বুঝি না। এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কিন্তু যে ভাবে কলেজের গোলমালের সময় পাড়ায় বাইক বাহিনী ঢুকে পড়ে তাতে পাড়ার পুকুরে কাজ করতে যাওয়া মহিলাদের দিশেহারা হয়ে দৌড়ে পালাতে হয়। বাড়িতে থাকতেও ভয় হচ্ছিল।” এক সুরে সঞ্চিতা রায়, বুলা রায়রা জানিয়েছেন, “বারবার এ ভাবে কলেজের গোলমাল রাস্তায় আসবে আর আমরা নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যায় পড়ব, এটা হতে পারে না। বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষকে বলেছি, ফের এমন সমস্যা হলে কলেজের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেব। আমরা শান্তি চাই।” তাঁদের অভিযোগ, শান্তিশৃঙ্খলা রাখার ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে পুলিশ, কোনও মহলেরই হেলদোল নেই। তাই একজোট হয়ে আন্দোলনে নামতে হয়েছে এলাকার মহিলাদের।
কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ দেবনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, “কলেজের গোলমাল ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে আমাদের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পুরো বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবালের আশ্বাস, “অবস্থা বুঝে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২ নম্বর কালীঘাট রোড এলাকায় রাস্তার ধারেই কোচবিহার কলেজ। শহরের বাসিন্দাদের পাশাপাশি সংলগ্ন গুড়িয়াহাটি এলাকার বাসিন্দারা কলেজ লাগোয়া ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদেরও যাতায়াতের ভরসা ওই রাস্তা। কিন্তু ছাত্র সংগঠনগুলির গোলমাল সংঘর্ষের রেশ এসে পড়ছে রাস্তায়। কখনও লাঠি নিয়ে মারপিট চলছে, কখনও বাইকবাহিনী অলিগলিতে দাপাচ্ছে। গত বুধবার পরিস্থিতি এতটাই তেতে ওঠে যে এলাকার অনেক দোকানপাট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা। বিপাকে পড়ছেন ছাত্রছাত্রীরাও। এক অভিভাবিকা স্বপ্না শীল বলেন, “মেয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ও কলেজে গিয়ে না ফেরা পর্যন্ত চিন্তায় থাকি।”
কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা? উত্তরবঙ্গের টিএমসিপি আহ্বায়ক বরুণ দত্ত বলেন, “এলাকায় যাতে গোলমাল না হয় তা দেখা হবে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেছেন, “দোষী যেই হোক, পুলিশের উচিত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া। না হলে এর ফল শহরের বাসিন্দাদের ভুগতে হবে।” গত ১৩ নভেম্বর জেলা ছাত্র পরিষদের সমস্ত পদাধিকারীরা টিএমসিপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু সে দিনও রাতে কলেজের সামনে বোমা পড়েছিল। দুই দলের সংঘর্ষ এখন তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে পরিণত হয় কি না, সেই আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। |