অপেক্ষার আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। রাসমেলা শুরুর কাউন্টডাউন শেষ হবে আজ সন্ধ্যে ছ’টায়। এবারের রাসমেলার উদ্বোধন করবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন, পরিষদীয় সচিব তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন সন্ধ্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। আর ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে এদিন রাত ১০ টায় কোচবিহার মদনমোহন মন্দির চত্বরে রাস উৎসবের সূচনা করবেন জেলাশাসক মোহন গাঁধী। পুরোহিতের পাশে বসে মন্ত্রোচ্চারণ করে বিশেষ পুজো সেরে রাসচক্র ঘুরিয়ে ওই উৎসবের সূচনা করবেন জেলাশাসক। তবে এর জন্য রাসমেলার রীতি মেনে কোচবহারের জেলাশাসককে অবশ্য দিনভর উপোসও থাকতে হবে। |
শুরুর অপেক্ষা। শুক্রবার মদনমোহন মন্দিরে হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি। |
এবার মেলা চলবে ১৬ দিন। আগামী ১ ডিসেম্বর মেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। জেলাশাসক মোবন গাঁধী বলেন, “রাস উৎসব ও মেলার প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। আমি নিজেও গত বছরের মত দিনভর উপোস থেকে রাসচক্র ঘুরিয়ে উৎসবের সূচনা করতে উদগ্রীব হয়ে রয়েছি।”
মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণের আমলে ১৮১২ সালে প্রথম রাসমেলার আয়োজন হয় কোচবিহারে। সে হিসেবে এবার মেলার ২০১ বছর। মেসার প্রস্তুতির জন্য মদনমোহন মন্দির সাজিয়ে তোলার পাশাপাশি মন্দির চত্বরের পুতুল ঘর রঙ করে ঝা চকচকে করা হয়েছে। মন্দির সাজানো হয়েছে বাহারি আলোকসজ্জাতে। মেলার মাঠে শুক্রবার তাবু ফেলেছে নামকরা সার্কাস কোম্পানি। রাসমেলার মাঠ, এমজেএন স্টেডিয়াম ও লাগোয়া দু’দিকের রাস্তা জুড়ে অস্থায়ী দোকান তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। তৈরি হয়েছে নাগরদোলা। মেলার মাঠে রকমারি জিলিপির জন্য পৃথক ‘লেন’ তৈরির ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা।
রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রাসমেলার উদ্বোধন করবেন। ১ ডিসেম্বর সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পুরমন্ত্রী কোচবিহারে আসবেন। রাসমেলা ঘিরে কোচবিহার মিলন মেলার মঞ্চ হয়ে ওঠার অপেক্ষা।” কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান বীরেন কণ্ডু বলেন, “এবার তিন হাজার দোকান বসবে। ১৫ দিন মেলা হলে তা শনিবার শেষ করতে হত। পরের দিন রবিবার ছুটির দিন থাকায় একদিন মেলার মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, ফি বছর রাসমেলায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা তো বটেই কলকাতা, অসম এমনকী নেপাল ও ভূটান থেকেও ব্যবসায়ীরা পসার নিয়ে আসেন। লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে কোচবিহার শহর। মেলার মাঠে প্রতিদিন স্থানীয় ও বহিরাগত শিল্পীদের নিয়ে জলসার বন্দোবস্ত হয়েছে। পাশাপাশি, মেলায় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নজরমিনার তৈরি হয়েছে, বসেছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাও। মাঠেই তৈরি হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ চৌকি এবং হাজতও। দর্শনার্থীদের ভিড়ে সাদা পোষাকের পুলিশ কর্মীরা নজরদারি চালাবেন বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। মেলার মূল প্রবেশ পথে ‘মেটাল ডিক্টেটর’ এবং ‘ডোরফ্রেম’ বসিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থাও হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “নিরাপত্তার বিষয়ে সবরকম ব্যবস্থা হয়েছে। বাইরের জেলা থেকেও বাহিনী আনা হয়েছে।”
শেষ পর্বের প্রস্তুতি তুঙ্গে। এবার অপেক্ষা শুধু উদ্বোধনের প্রদীপ জ্বলা আর রাসচক্র ঘোরার। |