বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে বন্দুকে সায় নেই কেন্দ্রের
গ্নেয়াস্ত্র নয়, বরং বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলির সঙ্গে সরকারের সমন্বয়কেই এখন বেশি জরুরি বলে মনে করছে কেন্দ্র।
শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের পরে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলির রক্ষী ও বাউন্সারদের নিয়ে নতুন ভাবনা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। কলকাতায় ওই জমি-সংঘর্ষের ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে স্পষ্ট, বেআইনি কাজে লাগানো হয়েছিল ওই নিরাপত্তা রক্ষীদের। এবং এমন ঘটনা যে আরও ঘটছে তার আঁচও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে মন্ত্রকের কর্তাদের এখন ভাবনা, খালি হাতেই যে রকম দাদাগিরি চলছে, বন্দুক হাতে উঠলে কি আর রক্ষা থাকবে?
বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলির রক্ষী ও বাউন্সারদের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণে যে যথেষ্ট ফাঁকফোকর রয়েছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শর্ট স্ট্রিট। তাই দাদাগিরির সমস্যার জুতসই দাওয়াই না মেলা পর্যন্ত বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিতে চাইছে না কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, বেশ ক’টি রাজ্যও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাকে বন্দুক বা রাইফেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
শর্ট স্ট্রিটে জমি দখলের অভিযানে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী প্রসেনজিৎ দে ও পিকলু আচার্যের। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে কৌশিক আঢ্য। নিরাপত্তা সংস্থার এই সব কর্মীকে ভয় দেখানো, জমি দখলের মতো বেআইনি কাজে লাগানো হচ্ছে, কলকাতার ঘটনায় তা প্রকাশ্যে এসেছে। এই সব নিরাপত্তা রক্ষীদের নিজেদের নিরাপত্তা কতটুকু, সেই প্রশ্নও উঠছে। এই কারণেই বেসরকারি নিরাপত্তা শিল্পের সঙ্গে সরকারের আরও বেশি সমন্বয় প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বরিষ্ঠ নিরাপত্তা উপদেষ্টা কে বিজয় কুমার। তাঁর বক্তব্য, “বেসরকারি রক্ষীদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সরকার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। অন্যান্য অস্ত্রই সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা কাঠামো যাতে না ভাঙে, তা দেখার জন্যই সরকার ও এই শিল্পের মধ্যে গভীর সমন্বয় প্রয়োজন।”
বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে লাগাম পড়াতে ২০০৫ সালে ‘প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সি রেগুলেশন অ্যাক্ট’ তৈরি করে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গেও সেই আইন কার্যকর হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, সংস্থাগুলিকে লাইসেন্স নিতে হবে। আইনে বেঁধে দেওয়া মাপকাঠি অনুযায়ী রক্ষীদের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করতে হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যে তা হয় না, তা ভালই বুঝছে সরকার। বেসরকারি সংস্থাগুলি যুক্তি দেয়, প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ থাকে না। কিন্তু বিজয় কুমারের যুক্তি, “প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ঢিলে দিলে চলবে না।”
শর্ট স্ট্রিটের ঘটনায় ৮ জন নিরাপত্তা রক্ষী ও ১০ জন বাউন্সারকে কাজে লাগানো হয়েছিল। এদের মধ্যে চার জন মহিলাও ছিলেন। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই নিরাপত্তা সংস্থায় নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী বলে কিছু ছিল না। প্রয়োজন মতো ভাড়া করা হত। তাঁদের ভিআইপি নিরাপত্তার পাশাপাশি জমি দখল, ভয় দেখিয়ে পাওনা আদায়ের মতো কাজেও লাগানো হত। অথচ আইন অনুযায়ী বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীদের সেই এক্তিয়ারই নেই। আবার যাঁরা নিরাপত্তা সংস্থায় রক্ষী বা বাউন্সার হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে নিজের এলাকায় দাদাগিরি করছেন, এমন অভিযোগও উঠছে। নিরাপত্তা রক্ষীদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা অবশ্য এর আগেও প্রকাশ্যে এসেছে। গত বছর মুম্বইয়ের এক আবাসনে বাঙালি আইএএস-অফিসারের কন্যা পল্লবী পুরকায়স্থ নৃশংস ভাবে খুন হন। ওই আবাসনের নিরাপত্তা রক্ষীই এ কাজ করেছিল বলে জানা যায়। তার পরেও এক দফা তোড়জোড় শুরু হয়েছিল বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা ও তাদের রক্ষীদের লাগাম পরানোর। বাস্তবে যে তা হয়ে ওঠেনি, শর্ট স্ট্রিটই তার বড় প্রমাণ।
কী বলছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন? তাঁদের বক্তব্য, দেশ জুড়ে এত এটিএম পাহারা দেওয়া ও সেগুলিতে টাকা আনা-নেওয়ার সময় বেসরকারি রক্ষীদের কাজে লাগানো হয়। অথচ তাঁদেরই নিধিরাম করে রাখা হচ্ছে। দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির সংগঠন ক্যাপসি (সেন্ট্রাল অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট সিকিউরিটি ইন্ড্রাস্ট্রি)-র চেয়ারম্যান কুমার বিক্রম সিংহের বক্তব্য, গোটা বিশ্বে বেসরকারি নিরাপত্তা শিল্পে অপরাধের হার সব থেকে কম। মাত্র ১.২৮ শতাংশ। তাঁর মতে, “এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট নীতিনিয়ম আছে। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে আইন মেনে চলতে হবে। রক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও সামাজিক সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে।” শিল্পমহল চায়, বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীদের দক্ষ শ্রমিকের তালিকাভুক্ত করে তাঁদের জন্য ন্যূনতম বেতনের বন্দোবস্ত করা হোক। বণিকসভা ফিকি-র তরফেও এ জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, দেশে জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের অনুপাত যথেষ্ট কম। কিন্তু নিরাপত্তার কাজ করতে গিয়ে বেসরকারি রক্ষীরা নিজেদের হাতে আইন-শৃঙ্খলা তুলে নিক, অধিকাংশ রাজ্য প্রশাসনই তা চায় না। আর সেখানেই দেখা দিচ্ছে সমস্যা। দুইয়ের মধ্যে বিরোধ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পুলিশবাহিনীর তুলনায় বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। যে হারে বেসরকারি রক্ষী নিয়োগ চলছে, তাতে খুব সহজেই এটা তিন গুণে পৌঁছবে। সিআইএসএফ-এর প্রাক্তন স্পেশ্যাল ডিজি মঞ্জরি জরুহরের বক্তব্য, “সরকারের উচিত এই বেসরকারি রক্ষী বাহিনীকে পুলিশের বর্ধিত বাহিনী হিসেবে কাজে লাগানো। সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দিকগুলি এদের হাতে দেওয়ার কথাও ভাবা উচিত।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.