জলের গামলায় চুবিয়ে নয়, মানকুণ্ডুর ফ্ল্যাটে ন’মাসের শিশুকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে বলে জানাল পুলিশ। কেননা ময়না-তদন্তের শিশুটির পেটে জল পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার, শিশু দিবসেই আবার দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেড় বছরের মেয়েকে খুনের অভিযোগে চন্দননগর থেকে মাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ কি না, তা-ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
হুগলির এই দুই ঘটনা নিয়েই জেলা পুলিশ আপাতত কিছুটা ধন্দে।
মানকুণ্ডু স্টেশনের কাছে চারতলার ফ্ল্যাটে শিশুমৃত্যুর ঘটনাটি জানাজানি হয়েছিল বুধবার সন্ধ্যায়। ন’মাসের আর্যকে নিয়ে সে সময়ে ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন তার মা সুনন্দা চৌধুরী। তাঁর স্বামী রেলকর্মী অঞ্জন চৌধুরী তখন ব্যান্ডেলে তাঁর অফিসে ছিলেন। শাশুড়ি তৃপ্তি চৌধুরী বেরিয়েছিলেন বাইরে। তিনিই ফিরে সাড়াশব্দ না পেয়ে পড়শিদের ডাকেন।
পড়শিরা দরজার লক ভেঙে ঢুকে লেপ চাপা অবস্থায় সুনন্দাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। ঘর এলোমেলো। বাথরুমের সামনে গামলার জলে পড়ে ছিল আর্যর নিথর দেহ। প্রাথমিক ভাবে ডাকাতি বলে মনে হলেও পরে পুলিশ ধন্দে পড়ে যায়। কেননা, যদি কেউ ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকে, তাকে দরজা দিয়েই ঢুকতে হয়েছে। কেননা ওই বিকেলে পিছন দিক থেকে বেয়ে চারতলায় ওঠা প্রায় অসম্ভব। কাজেই খুনি পরিবারের পূর্ব পরিচিত বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশকে জানানো হয়েছিল, সুনন্দার সমস্ত গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু পরে ঘরেই সুনন্দা ও তাঁর শাশুড়ির গয়নার পুঁটলি পাওয়া যায়। এ দিনও তদন্তকারী অফিসারেরা ওই আবাসনে গিয়ে দফায়-দফায় সব কিছু পরীক্ষা করেন। আবাসনের পিছন দিকে ময়লা ফেলার জায়গা থেকে সুনন্দার দু’টি সোনার বালা পাওয়া গিয়েছে। তা কি ডাকাতেরা ফেলে গিয়েছে? পুলিশের মতে, দুষ্কৃতীরা বালা দু’টি লুঠ করে থাকলে কখনও বাইরে ফেলে যেত না।
বছর তিন-চারেক আগে ভদ্রেশ্বরের এক প্রভাবশালী সিপিএম নেতার মধ্যস্থতায় ওই ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করেছিলেন অঞ্জনবাবুরা। হুগলি জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন,“প্রথম থেকেই পুলিশের সন্দেহ, এটি ডাকাতির ঘটনা নয়। মহিলার শাশুড়ি যে ওই নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি ছিলেন না, তা সম্ভবত আগন্তুকের জানা ছিল।” পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন,“আমরা সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত করছি।”
চন্দননগরে খুন হওয়া দেড় বছরের মেয়েটির মৃতদেহ বস্তায় ভরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল চৌকির নীচে। পুলিশ জানায়, শিশুটির নাম নন্দিনী চৌধুরী। তার মা আরতি চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের দাবি, জেরায় আরতি মেয়েকে খুনের কথা কবুল করেছেন। সাড়ে তিন বছরের ছেলের চোখের সামনেই ঘটনাটি ঘটে বলেও জানিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মালাপাড়ায় একটি ঝুপড়িতে স্বামী এবং শাশুড়ি এবং দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন আরতি। স্বামী সুরেশ ডেকরেটরের কাজ করেন। জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপ খোলার কাজে ব্যস্ত থাকায় বুধবার রাতে তিনি বাড়ি ফেরেননি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নন্দিনীর খোঁজ মেলেনি। সুরেশের মা সুষমাদেবী বিষয়টি পড়শিদের জানান। সকলে আরতিকে চেপে ধরেন। এর পর আরতিই তাদের জানান, চৌকির নীচে বস্তায় ভরে রাখা আছে মেয়ের দেহ। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়।
সুরেশ বলেন, “বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরনোর সময়েও মেয়েকে দেখে যাই। বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রী যখন বলল মেয়ে মায়ের কাছে আছে, কোনও সন্দেহ করিনি। দেহ উদ্ধারের পরে ছেলের মুখে সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাই। আরতি কেন এমন করল, ভাবতেই পারছি না।” এসডিপিও (চন্দননগর) সৈকত ঘোষ বলেন, “কী কারণে বাচ্চাটাকে খুন করা হল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |