দুর্নীতির প্রতিবাদে সরব হলেন নরসমুদা কোলিয়ারির শ্রমিক-কর্মীরা। যে সব আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠছে শুধু তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই চলবে না, যে কর্মীরা ঘুষ দিয়ে অন্যায় সুবিধা নেন, তাঁদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। সোমবার থেকেই এ নিয়ে খনি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে আসছেন শ্রমিক-কর্মীরা।
গত ৭ নভেম্বর এক খনিকর্মীর থেকে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন নরসমুদা কোলিয়ারির ম্যানেজার প্রভাতকুমার ঝা। বুধবার বিক্ষোভের সময়ে কোলিয়ারির শ্রমিক-কর্মীরা অভিযোগ করেন, ওই ম্যানেজার ঘুষ নিয়ে শ্রমিক-কর্মীদের একাংশকে অন্যায্য সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকের কাছে ন্যায্য সুবিধা পেতেও ঘুষ চেয়েছেন। শ্রমিকদের একাংশের দাবি, সংগঠন ধরে রাখতে এক শ্রেণির শ্রমিক নেতা আধিকারিকদের দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেন। ওই আধিকারিক যে দুর্নীতিতে যুক্ত তা অনেক শ্রমিক নেতা জানতেন বলে ওই শ্রমিকদের অভিযোগ। তাই শ্রমিক সংগঠনকগুলিকে বাদ দিয়েই প্রতিবাদ জানাতে নেমেছেন বলে তাঁরা জানান।
গত সোমবার থেকেই খনি কার্যালয়ের সামনে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। বুধবারও চার ঘণ্টা খনির উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভ চলে। মঙ্গলবার শ্রমিক-কর্মীরা আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে সাফ জানান, যাঁরা ঘুষ দিয়ে অন্যায্য সুবিধা ভোগ করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। |
শ্রমিক-বিক্ষোভ নরসমুদায়। —নিজস্ব চিত্র। |
বিক্ষোভকারীদের দাবি অনুযায়ী, মাটির তলায় কয়লা কাটার কাজ করার কথা বেশ কয়েক জনের। তাঁরা ঘুষ দিয়ে উপরে কাজ নিয়েছেন। অনেকে ভারী কাজের পরিবর্তে তুলনায় সুবিধাজনক কাজ করেছেন। অনেক শ্রমিক-কর্মী আবার দিনের পর দিন কাজে না এলেও হাজিরা খাতায় নাম উঠে গিয়েছে।
লাগাতার এই শ্রমিক-বিক্ষোভের জেরে ব্যতিব্যস্ত খনি কর্তৃপক্ষ বুধবার সন্ধ্যায় শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সাধারণ শ্রমিক-কর্মীদের আবার আশঙ্কা, তাঁদের দাবি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। বুধবার বিক্ষোভে হাজির জগন্নাথ হরিজন বলেন, “আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি। দুর্নীতি বন্ধ করতেই হবে।” জীতেন ধীবরের কথায়, “নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের কাজে লাগাতে হবে।” পবন রামের বক্তব্য, “ঘুষ দিয়ে যাঁরা অন্যায় সুবিধা নিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
কর্মীদের এই দাবিকে সমর্থন করেছে কোলিয়ারির আইএনটিইউসি সংগঠন। বুধবার আধিকারিকেরা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে যে বৈঠক হয় তা-ও বয়কট করে আইএনটিইউসি। সংগঠনের নেতা সঞ্জয় মাজি বলেন, “শ্রমিকদের দাবি ন্যায্য। আমরা তাঁদের সমর্থন করি বলেই বৈঠকে যাইনি।” তিনিও অভিযোগ করেন, কিছু শ্রমিক নেতা এই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে শ্রমিক-কর্মীদের দাবি ধামাচাপা দিতে চাইছেন। বুধবার বৈঠক শেষে সিটু নেতা প্রভাত ঘাঁটি, এআইটিইউসি-র বিজয় মণ্ডল, টিইউসিসি-র সুবোধ মণ্ডলেরা অবশ্য জানান, শ্রমিক-কর্মীদের কোথায় কী উপায়ে অন্যায্য ভাবে কাজে লাগানো হয়েছে, কর্তৃপক্ষকে তা এক মাসে খুঁজে বের করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে খনি কর্তৃপক্ষের তরফে থাকা এজেন্ট জে সি রায়, ম্যানেজার আর আর গোস্বামীরা যদিও জানান, বৈঠকে কোনও স্থির সিদ্ধান্ত হয়নি। |