মাঠের পাশে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে এক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল পুলিশ। কিছু দিন পরে এক মহিলা শিশুটিকে নিজের সন্তান দাবি করে তাকে ফেরত চান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে মেনে নেওয়ার পরে তদন্ত শুরু করে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি)। তদন্ত করে খানিকটা নিশ্চিত হলেও মহিলা বাপের বাড়ির একাধিক ঠিকানা বলায় সংশয়ে সিডব্লিউসি। শেষে ওই মহিলা ও শিশু, দু’জনকেই কোনও হোমে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২ অক্টোবর সকালে এমএএমসি ফুটবল মাঠের পাশে জঙ্গলে শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। তখন থেকে শিশুটি সেখানেই চিকিৎসক-নার্সদের কাছে বেড়ে উঠছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে এক মহিলা এসে দাবি করেন, ওই শিশুটি তাঁর সন্তান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন। পুলিশের কাছে শম্পা সিংহ নামে ওই মহিলা জানান, তাঁর বাপের বাড়ি বর্ধমানের ছোটনীলপুর শ্রীপল্লিতে। স্বামী যশরাম সিংহ উত্তরপ্রদেশে কাজ করেন। বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। গত ২২ জুলাই বধর্মান মেডিক্যালে তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। সেই সংক্রান্ত কাগজপত্রও দেখান তিনি পুলিশকে। |
দুর্গাপুর হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র। |
শম্পাদেবী পুলিশের কাছে দাবি করেন, আর্থিক দুরবস্থার কারণে তিনি ছেলেকে নিয়ে ট্রেনে ভিক্ষা করতেন। ২ অক্টোবর সকালে ছেলেকে দুর্গাপুরের প্ল্যাটফর্মে রেখে কল থেকে জল ভরতে যান। ফিরে দেখেন, শিশু উধাও। দিন কয়েক পরে স্টেশনের অন্য ভিখারিদের থেকে পুলিশ একটি শিশুকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে বলে জানতে পারেন।
শম্পাদেবীকে জেরা করে সন্তুষ্ট হয়ে পুলিশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানায়, শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হলে তাদের আপত্তি নেই। এর পরে মহিলা হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাসের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু সুপার বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী শিশুটিকে ভর্তি করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিষয়টি সিডব্লিউসি-কে জানাই। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে একমাত্র সিডব্লিউসি।” তিনি জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে এসে ওই মহিলা শিশুটির সঙ্গে দেখা করেন। রোজ ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিডব্লিউসি-র চেয়ারম্যান অবসর নিয়েছেন বছরখানেক আগে। তার পর থেকে কমিটি চালাচ্ছেন চার সদস্যই। তাঁদেরই এক জন সত্যজিৎ দাশগুপ্ত জানান, কয়েক বারের চেষ্টায় ওই মহিলা ও তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন তাঁরা। কিন্তু মহিলা বাপের বাড়ি হিসেবে বর্ধমানের নানা ঠিকানা উল্লেখ করেছেন। সত্যজিৎবাবু বলেন, “অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এই ধরনের ঘটনাগুলি বেশ জটিল। ওই মহিলা বাপের বাড়ির একাধিক ঠিকানা বলায় আমাদের সংশয় হয়।” তিনি জানান, আগেও ওই মহিলার এক সন্তান হারিয়ে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। ফের যাতে তেমন না ঘটে সে জন্য মা ও শিশুকে এক সঙ্গে কোনও হোমে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। মা-শিশুকে এক সঙ্গে রাখার মতো সরকারি কোনও হোম জেলায় নেই। সে জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত কাটোয়ার একটি হোমে দু’জনকে রাখার পরিকল্পনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সব দিক খতিয়ে দু’এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, নার্সদের কোলে চেপে ঘুরছে শিশুটি। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে বলে নার্সেরা তার নাম রেখেছেন হাবুল। শম্পাদেবী বলেন, “হাবুল কবে আমার কাছে ফিরবে, আশায় বসে আছি।” |