ডামরায় কেন ছড়াল ডায়েরিয়া, মতান্তর
পরিশোধিত জল পান করেই ডায়েরিয়া ছড়িয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। পুর কর্তৃপক্ষের আবার দাবি, জল নয়, খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্যই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বাসিন্দারা।
আসানসোল পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ডামরা নবীনপল্লি এলাকায় ডায়েরিয়ার প্রকোপের কারণ নিয়ে এমনই মতভেদ তৈরি হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে। এরই মাঝে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এলাকায় পর্যাপ্ত পরিস্রুত জল সরবরাহ করা হোক।
গত শনিবার থেকে ওই ডামরা এলাকায় ডায়েরিয়া দেখা দিয়েছে। মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩২। মৃত্যু হয়েছে ছ’বছরের একটি শিশুর। তিন জনকে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে বুধবার নতুন করে কারও অসুস্থ হওয়ার খবর মেলেনি। এলাকায় স্বাস্থ্য দফতরের অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির রয়েছে। সেখান থেকে ওষুধ এবং ওআরএস বিলি হয়েছে।
কেন এলাকায় হঠাৎ ডায়েরিয়া ছড়াল, সে প্রশ্নে মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক কেকা মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিক অনুমান, অপরিশোধিত জল পান করেই এ রকম ঘটেছে। পর্যাপ্ত ওষুধ দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের পরিস্রুত জল পানের পরামর্শ দিয়েছি।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, আধিকারিকেরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, এলাকার একটি পুকুর ও একটি অনেক পুরনো কুয়োর জল মাঝে-মাঝে বাসিন্দারা পান করতে বাধ্য হন। অনুমান, সম্প্রতি এই জল পান করেই বাসিন্দারা অসুস্থ হয়েছেন। নবীনপল্লিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা একটি ইটভাটায় কাজ করেন। প্রায় পাঁচশো জনের বাস সেখানে। ইটভাটার মালিকের তৈরি শ্রমিক আবাসনেই তাঁদের বহুবছরের বাস। অন্য নানা সমস্যার সঙ্গে পানীয় জলের সঙ্কটের অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। এমনই এক বাসিন্দা গণেশ সিংহ সর্দারের কথায়, “আমরা কলের জল পাই না। বহু দূর থেকে জল বয়ে আনতে হয়। যখন সেখানেও জল পাই না, পুকুর ও কুয়োর জল ব্যবহার করতে বাধ্য হই।” দুর্গা মুন্ডা নামে আর এক জন জানালেন, ঘরের পুরুষদের সঙ্গে তাঁদেরও কাজে যেতে হয়। দূর থেকে জল বয়ে আনা যায় না। পাড়ার কলেও জল পড়ে না। তাই পুকুর, কুয়োর জলেই সব কাজ সারতে হয়।
ডামরা নবীনপল্লি এলাকায় ছবি দু’টি তুলেছেন শৈলেন সরকার।
বাসিন্দাদের এই অভিযোগে ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, পল্লি লাগোয়া একটি পুকুরে যাবতীয় নোংরা ফেলার কাজ হয়। চারদিকে ছড়ানো প্রতিমার কাঠামো। সেখানেই স্নান, কাপড় কাচা, বাসন মাজা চলছে। আবার সেই জলই কাপড় দিয়ে ছেঁকে রান্না ও খাওয়ার জন্য তোলা হচ্ছে। ইটভাটার মাঝে একটি বহু পুরনো কুয়ো আছে। আগাছায় ভরে গিয়েছে সেটি। বাসিন্দারা জানান, মাঝে-মাঝে সেই জলও পান করতে হয়। ইটভাটার শ্রমিকদের জন্য পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা ইটভাটা মালিকেরাই বা করছেন না কেন? ইটভাটার মালিক ময়ূর মাজির জবাব, “আমি পাইপলাইন পেতে এই পল্লিতে কল টেনেছিলাম কাছের একটি জলাধার থেকে। প্রথম কিছু দিন জল পড়েছে। এখন আর পড়ে না।” তিনি অভিযোগ করেন, তিনি এই সমস্যার কথা বহু বার পুরসভাকে জানালেও কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। এলাকার বাসিন্দারা জানান, পল্লিতে শ’খানেক ভোটার আছেন। ভোট চাইতে আসা নেতাদের জলের সমস্যার কথা অনেক বার বলেছেন। কিন্তু ফল হয়নি।
ওই অঞ্চলে অপরিশোধিত জল পানেই ডায়রিয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য আধিকারিকের এই তত্ত্ব মানতে নারাজ স্থানীয় কাউন্সিলর তথা পুরসভার চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাঁর দাবি “খোঁজ নিয়ে জেনেছি, দিন কয়েক আগে এলাকায় এক জন মুরগির ছাল-চামড়া বিক্রি করতে এসেছিল। এলাকার বাসিন্দারা কেউ কেউ সে সব কেনেন। তা থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে বাসিন্দারা অসুস্থ হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।” জিতেন্দ্রবাবুর আরও দাবি, এলাকায় পর্যাপ্ত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। সে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। এ ছাড়া পুকুর ও কুয়োয় প্রতিষেধক ছড়ানো হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও আশ্বাস তাঁর।
উপরে, এই পুকুরের জল পান করার ফলেই রোগ ছড়ায় বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের। বাঁ দিকে, আগাছায় ভরা বহু পুরনো এই কুয়োর জলও ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.