বাজি ধরছি, সচিনের কাছেও
ম্যাচটা বিরাট চ্যালেঞ্জ
ভীষণ ভীষণ কঠিন একটা টেস্ট ম্যাচ নিজের শহরের মাঠে খেলতে নামছে সচিন তেন্ডুলকর। এবং সেটা অবশ্যই মুম্বইয়ে দেশের হয়ে জীবনে শেষ বারের মতো ব্যাট হাতে ক্রিজে নামবে বলে। আবেগের মাত্রাটা প্রচণ্ড রকমের বেশি থাকবে। চাপের মুখে বড় মঞ্চে সচিনের জ্বলে ওঠার ক্ষমতা নিয়ে স্বভাবতই কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু ওয়াংখেড়েতে এ বার ওর মনে একটা চিন্তা সর্বদা ঘুরপাক খাবে, যেটা এর আগে কোনও দিন হয়নি।
চিন্তাটা হল: এই টেস্টের পর আমি আর কোনও দিন ভারতের হয়ে ব্যাট ধরব না! এ রকম একটা স্মরণীয় মুহূর্তে সফল হওয়ার চ্যালেঞ্জ আমি যেন নিতে পারি। সফল হওয়ার সুখ নিয়ে যেন ক্রিকেটজীবন শেষ করতে পারি। ‘যেহেতু এত বছর ধরে সেরাদের বিরুদ্ধে সফল হয়ে এসেছি, সে জন্য আমি ভীষণ ভীষণ ভাল’—এ ধরনের চিন্তায় নিজেকে নিজে উদ্দীপিত করে তোলার ভাবনাও এ রকম সময়ে সচিনের মনের ভেতর থাকবে। আসলে যারা চ্যাম্পিয়ন, যারা নিজেদের পেশায় চূড়ান্ত সফল, তাদের কাছে অবসরের সময়টা একটা অদ্ভুত মুহূর্ত! এই সময় তাদের সবচেয়ে দরকার গোটা পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে থিতু করে তোলা।
কোনও সন্দেহ নেই যে, সচিনের বিদায়ী ম্যাচ ঘিরে মুম্বইয়ের আবহ দুর্ধর্ষ থাকবে। পুরো ক্রিকেট বিশ্বের চোখ বৃহস্পতিবার থেকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের দিকে থাকবে। গ্যালারির প্রতিটা আসন ভর্তি তো থাকবেই। ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম গ্রেট প্লেয়ারকে সম্মান জানানোর যাবতীয় উৎসব ইতিমধ্যেই এমসিএ শুরু করে দিয়েছে। যে উৎসব আগামী কয়েক দিনও চলবে। ইডেন তার প্রিয় সচিনের জন্য যে উৎসব গত সপ্তাহে করেছে, ওয়াংখেড়েতে আগামী ক’দিন তার দ্বিগুণ মাতামাতি হলেও আমি অবাক হব না। সত্যি বলতে কী, ভারতের বিখ্যাত সন্তান সচিন তেন্ডুলকরের অসাধারণ কেরিয়ারকে যে রকম ভাবে ক্রিকেটবিশ্ব সম্মান জানিয়ে এসেছে, তার জন্য আমি গোটা ক্রিকেটমহলের পিঠ চাপড়ে দিতে চাই। এত এত বছর ধরে সচিন যা-যা অর্জন করেছে, তার প্রতিটি কণা অর্জনের পুরোপুরি যোগ্য ও। এবং যেটা ভাবীকালের পক্ষে ভাঙা প্রচণ্ড কঠিন।

জাতীয় দলের হয়ে শেষ নেট প্র্যাকটিসে।
বুধবার ওয়াংখেড়েতে। ছবি: উৎপল সরকার।
“চব্বিশ বছর আমার পাশে থাকার জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমার জন্য আপনাদের প্রত্যেকের বার্তা হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। এত বছর ধরে
আপনাদের এই সমর্থনই আমাকে প্রেরণা দিয়েছে।”
সচিন-উৎসবের মধ্যেই অবশ্য মনে রাখতে হবে যে, ওয়াংখেড়েতে একটা টেস্ট ম্যাচ আজ শুরু হচ্ছে। যেখানে প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন থাকবে, সচিন কি পারবে, ওকে ঘিরে যাবতীয় উৎসব থেকে মন সরিয়ে নিয়ে ব্যাটিংয়ের সময় ঈগলের দৃষ্টিতে প্রতিটা বল দেখতে? যে কাজ ও এত বছর ধরে করে এসেছে! ওয়াংখেড়ে ড্রেসিংরুম থেকে সচিন যখন শেষ বারের মতো ব্যাট হাতে বেরিয়ে আসবে তখন কি নিজের বুকের ধুকপুকুনি স্বাভাবিক রাখতে পারবে ও? আমি বাজি ধরছি, সচিনের কাছেও ব্যাপারটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং হবে!
এই ভারতীয় দল অবশ্য কলকাতায় দেখিয়েছে যে, হাজারো হইচইয়ের মধ্যেও ওরা খেলাটার দিকে ফোকাসড্ থাকে। আমি নিশ্চিত, ওয়াংখেড়ের পিচে ভারতীয়রা আরও এক বার ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে। ওয়াংখেড়ের পিচ কবে কেমন থাকে সেটা দেখতে আমি আগ্রহী থাকব। মনে হচ্ছে, গ্রেট ম্যানের জন্য ওয়াংখেড়ে কিউরেটর একটা পাটা উইকেট দেবে। যে পিচে হয়তো তৃতীয় দিন থেকে টার্ন পাওয়া যাবে। তবে প্রথম দিন থেকেই টার্ন করলে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের সমূহ বিপদ। কারণ মুম্বইয়ের লাল মাটির বাউন্স কলকাতার পলিমাটির পিচের তুলনায় বেশি থাকে।
কোনও চোটটোট বাদে ভারতের প্রথম এগারোয় কোনও পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে হয় না। কলকাতায় দুর্দান্ত টেস্ট আবির্ভাবের পর মহম্মদ শামির বোলিং ওয়াংখেড়েতে দেখার জন্য আমি মুখিয়ে আছি। খুব কম সময়ের ব্যবধানে আবার ভাল পারফরম্যান্স করার মতো মানসিকতা শামির মধ্যে তৈরি হয়েছে কি না সবাই বুঝতে চাইবে। কারণ ওই মানসিকতাই ঠিক করে দেবে যে, শামি কত দিন দেশের হয়ে খেলবে! সব রকম চাপ সামলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে টিকে থাকার খিদেই বা ওর ভেতর ঠিক কতটা আছে!
ওয়াংখেড়েতে মাস্টার ব্লাস্টার
(প্রথম শ্রেণির ম্যাচে)

১৯৮৮, ১০ ডিসেম্বর: গুজরাতের বিরুদ্ধে অভিষেকে ১০০
১৯৯১-৯২: সেমিফাইনাল। দু’বছর পর সচিনের প্রত্যাবর্তন। দুই ইনিংসে সচিনের রান ৭০ আর ৮০।
১৯৯১-৯২: ফাইনাল। দ্বিতীয় ইনিংসে সচিনের ৭৫ বলে ৯৬ রান। হরিয়ানার কাছে ২ রানে হারে মুম্বই।
১৯৯৪-৯৫: ফাইনাল। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসে সচিনের সেঞ্চুরির দাপটে (১৪০ ও ১৩৯) ড্র করেও চ্যাম্পিয়ন মুম্বই।
১৯৯৯-’০০: ২৩৩ আর ১৩ রান। মুম্বই ফাইনালে।
১৯৯৯-’০০: ফাইনালে সচিনের ৫৩ আর ১২৮ রানের ইনিংস। মুম্বই ২৯৭ রানে হারায় হায়দরাবাদকে।
২০০৬-’০৭: প্রায় ছ’বছর পর রঞ্জিতে নেমে ১০৫ আর ৪৩ রান। ফাইনালে মুম্বই ১৩২ রানে হারায় বাংলাকে।


১৯৮৯- ’৯০: রঞ্জির মতো সেঞ্চুরিতেই অভিষেক। দু’ইনিংসে রান ৩৯ ও ১০৩।
ফেব্রুয়ারি ২০১৩: ১৪০ রান।
ওয়াংখেড়েতে সচিনের ইরানি ট্রফি রেকর্ড: ম্যাচ ৩। রান ২৯৫। সর্বোচ্চ ১৪০। গড় ১৪৭.৫০। সেঞ্চুরি ২।

১৯৯৩: অভিষেকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭৮।
১৯৯৭-’৯৮: শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৪৮।
১৯৯৯-’০০: দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৯৭ আর ৮।
২০০০-’০১: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭৬ আর ৬৫ রান।
২০০৪-’০৫: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সচিনের ৫ আর ৫৫ রান।
২০১২-’১৩: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসেই ৮ রান।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.