আর দিন ৬
প্রথম টেস্টের সতীর্থের ২৪ বছর পরে ফিরে দেখা
পনেরো বছরেই আমাকে পেটানো
দেখে ওর জাত বুঝেছিলাম: মনিন্দর
তেন্ডুলকর-রূপকথা চার বিভিন্ন দশক ধরে যার মৌতাতে প্রত্যেক ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয় পূর্ণ, সেই মধুর কাহিনির আর শেষ পাঁচ দিন! মানে, ওয়াংখেড়েতে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টের পাঁচ দিন। আর যত সচিন তেন্ডুলকরের সেই চূড়ান্ত বিদায়ক্ষণ এগিয়ে আসছে, ততই ক্রিকেট-ঈশ্বরকে ঘিরে পিছন ফিরে দেখা চলছে প্রাক্তনীদের মহলে।
যেমন মনিন্দর সিংহ।
“আমি সে দিন মাঠের ভেতর ছিলাম, যে দিন সচিন প্রথম ভারতের হয়ে খেলেছিল,” গর্বের সঙ্গে বলেন প্রাক্তন আন্তর্জাতিক বাঁহাতি স্পিনার। ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৯। করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সচিনের আবির্ভাব টেস্টের চব্বিশ বছর পরেও যেন সে দিনটা চোখের সামনে ফুটে উঠছে মনিন্দরের। “অত ছোট ছেলের মধ্যেও সে দিন জীবনের প্রথম টেস্ট খেলার কোনও টেনশন দেখিনি। ষোলো বছরের কিশোরও কী অদ্ভুত শান্ত! আমাদের সেই টিমে কপিল দেবের মতো তত দিনে কিংবদন্তি হয়ে ওঠা ক্রিকেটার ছিল। তবু ষোলো বছরের সচিনকে ভারতীয় দলে বেমানান লাগেনি। আর সচিনও ড্রেসিংরুমে তখনই থাকত যেন নিজের বাড়িতে রয়েছে এমন স্বচ্ছন্দ, স্বাভাবিক ভঙ্গিতে,” বললেন মনিন্দর।
চব্বিশ বছর আগে ভারতীয় দলের পাকিস্তান সফর আর সচিন তেন্ডুলকর বলতেই দু’টো ঘটনা সব সময় উঠে আসে।
এক) আব্দুল কাদিরকে এক ওভারে চারটে ছক্কা মারা।
দুই) ওয়াকার ইউনিসের বাউন্সারে নাক থেকে রক্ত ঝরার পড়েও ক্রিজ না ছেড়ে হাফসেঞ্চুরি করে টেস্টে ভারতের হার বাঁচানো।
সচিন তেন্ডুলকরের কিংবদন্তি হয়ে ওঠার সেই প্রথম সোপান। যদিও তাঁর অভিষেক টেস্টের এক সতীর্থ এই ধারণার সঙ্গে একমত নন। মনিন্দর বলে দিলেন, “কাদির আর ওয়াকারের কেস দু’টো দেখা আর জানার পর গোটা ক্রিকেট বিশ্বের মালুম হয়েছিল, সচিন এক জন ভেরি স্পেশ্যাল প্রতিভা। তবে আমার কাছে এই ভেরি স্পেশ্যাল প্রতিভার ব্যাপারটা তারও আগে ধরা পড়েছিল।”
ঘটনাটা কী?
মনিন্দর বললেন, “সেটা রঞ্জিতে দিল্লি বনাম মুম্বই একটা ম্যাচ। সচিন টেস্টে আসার এক বছর আগে। তখন ওর পনেরো বছর বয়স। আমি তখন ইন্ডিয়া টিমে রেগুলার। কিন্তু সেই ম্যাচে একেবারে বাচ্চা মুখের সচিন আমার বোলিং নিয়ে সত্যি বলতে কী ছেলেখেলা করেছিল। আমি খেলার পর মাঠ থেকে সটান আমার কোচ গুরচরণ সিংহের কাছে চলে গিয়েছিলাম। আর সে দিনই তাঁকে বলেছিলাম, ‘স্যার, দয়া করে সচিন তেন্ডুলকর নামটা মনে রাখবেন। এই বাচ্চা ছেলেটা লম্বা রেসের ঘোড়া।’ কিন্তু তা-ও বলব, সে দিন ভাবতেও পারিনি, সেই রেস সচিন টানা চব্বিশ বছর ধরে দেবে আর সব সময় ফার্স্ট হবে।’
ভারতীয় ক্রিকেট অলিন্দে কান পাতলে শোনা যায়, সেই পাকিস্তান সফরেই ষোলো বছরের সচিনের টেস্ট অভিষেক ঘটার কোনও কার্যকারণ ছিল না। কিন্তু রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরের জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী ভেবেছিল, এর পরেই ভারতের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের চেয়ে বিস্ময় বালকের বরং পাকিস্তানের পিচেই জীবনের প্রথম টেস্ট খেলে ফেলা তুলনায় নিরাপদ। কিন্তু মনিন্দরের ব্যাখ্যা, “সচিনের মধ্যে জন্মগত একটা পরিণতবোধ ছিল। সেই ষোলো বছরেই। ফলে ভারতের সর্বকালের কনিষ্ঠতম টেস্ট প্লেয়ার হওয়ার কীর্তি যেমন গড়তে পেরেছিল, তেমনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনের গোড়াতেই ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলিং আক্রমণ সামলে ছিল। আর সেই ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলিংয়ের সামনে ওকে অত ছোট বয়সেও ভয়ার্ত বা কোনও চাপে থাকতে দেখা যায়নি। সম্ভবত সেই ক্ষমতাটা সচিন তখনই অর্জন করেছিল আরও বাল্যকাল থেকে ক্রিকেট মাঠে ওর কঠোর অনুশীলন, পরিশ্রম থেকে। আর কঠোর পরিশ্রমই ওকে ছোট থেকেই আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।”
কিশোর সচিনেরও পরিণতিবোধ বোঝাতে গিয়ে মনিন্দর বললেন, “সেই পাকিস্তান সফরেই দেখেছিলাম, সচিন বড় রান করলে তেমন রোমাঞ্চিত হয় না। আবার রান না পেলে হতাশায় ভেঙেও পড়ে না। আমার মতে সচিনের দীর্ঘ চব্বিশ বছরের টেস্ট জীবনে কার্যত কখনও ব্যাডপ্যাচ না আসার এটাই অন্যতম ফ্যাক্টর। সাফল্যে ভেসে না যাওয়া, আবার ব্যর্থতায় ভেঙেও না পড়া এটাই সচিনের গ্রেট ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পিছনে সবচেয়ে বড় গুণ।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.