আজ রাতে এসে পৌঁছলেন দিল্লি। কাল সকালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক সেরেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন দুপুর সাড়ে বারোটার চাটার্ড ফ্লাইটে উড়ে যাবেন কলকাতায়। এক সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশের রাজধানীতে। সন্ধে সাতটায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনের অফিসে বৈঠক করবেন তিনি। আলোচনা হবে রাজ্যে বাণিজ্য সম্ভাবনা এবং ব্রিটিশ বিনিয়োগ নিয়ে।
রাজ্য প্রশাসন মনে করছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠক পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শিল্প ও আর্থিক পরিস্থিতির সাপেক্ষে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সামনেই লোকসভা নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের ভূমিকা ও অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া মমতা চেষ্টা করছেন রাজ্যে যতটা সম্ভব বিনিয়োগ টানতে। এই লক্ষ্যে দিল্লি এবং মুম্বইয়ে শিল্প সম্মেলনও করেছেন তিনি। ক্যামেরনের পশ্চিমবঙ্গ সফরকে তাই স্বাগত জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
ব্রিটিশ সরকারও গত কয়েক মাস ধরে হোমওয়ার্ক করেছে ভারতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে। ফ্রান্স, জার্মানি এবং আমেরিকার মতো দেশ ভারতের বাজারে বিনিয়োগ করতে যতটা তৎপরতা দেখাচ্ছে, সে তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে ব্রিটেন। তাই ক্যামেরনের এ বারের সফর ভারতের বাজার ধরার জন্য মরিয়া চেষ্টা বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।
নয়াদিল্লিতে ব্রিটিশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, গুজরাত ও পশ্চিমবঙ্গ শিল্পায়নের মাপকাঠিতে দুই মেরুতে থাকা দু’টি রাজ্যকে ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের নিশানা করেছেন ব্রিটিশ কর্তারা। গুজরাতকে দেখা হচ্ছে প্রভূত বিনিয়োগ সম্ভাবনার দৃষ্টিকোণে। আর পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার বাণিজ্য সম্ভাবনা এখনও খতিয়ে দেখা হয়নি। মাঠ এখনও খালি পড়ে রয়েছে।
ব্রিটিশ নেতৃত্বের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম সরকারকে পরাজিত করে যে নেত্রী সরকার গড়তে পারেন, গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় তাঁর ভূমিকা যথেষ্ট। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থানগত গুরুত্বও ব্রিটেনের কাছে কম নয়। বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী। দূরে নয় মায়ানমারও। বাংলাদেশের সফল ইসলামিক গণতান্ত্রিক কাঠামো নিয়ে আমেরিকা ব্রিটেন-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যথেষ্ট উৎসুক। মায়ানমারেও গণতন্ত্র ফিরে আসার পর সেখানে নিজেদের পায়ের ছাপ রাখতে চাইছে পশ্চিম বিশ্ব। পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে এই সব রাষ্ট্রে পৌঁছনো যায় কি না তা-ও খতিয়ে দেখবে ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল।
বেলা আড়াইটায় কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছবেন ক্যামেরন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে থাকবেন স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি সফর এটা। কলকাতায় থাকবেন মোট সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। রাত ৮টায় কলকাতাকে বিদায় জানিয়ে তিনি উড়ে যাবেন শ্রীলঙ্কায় কমনওয়েথ সম্মেলনে যোগ দিতে। বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে থাকবেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
নবান্ন সূত্রের খবর, ক্যামেরন নিজেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তাতে সাড়া দিয়েই মমতা তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনের অফিসে গিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী হবেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র।
তবে এই বৈঠকের আগে ব্রিটিশ উপনিবেশের স্মৃতিচিহ্নগুলি দেখে যেতে খুবই আগ্রহী ক্যামেরন। তাই আজ কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই ক্যামেরন সোজা যাবেন সাবেক ডালহৌসি স্কোয়্যারে। হাওড়া ব্রিজ দেখারও কথা রয়েছে তাঁর। তবে সম্ভবত তা মিলেনিয়াম পার্ক এলাকা থেকেই। সেখান থেকে তিনি যাবেন আকাশবাণী ভবনে। রেডিও সাক্ষাৎকার এবং একটি ব্রিটিশ টিভি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে সওয়া চারটে নাগাদ তিনি রওনা দেবেন জোকার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে। সেখান ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব সেরে তিনি ফিরে আসবেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের অফিসে। কলকাতায় তাঁর শেষ কর্মসূচি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ২০ মিনিটের বৈঠক। এর পর রওনা দেবেন কলম্বো। ব্রিটেনের এক সময়ের উপনিবেশগুলির রাষ্ট্রনেতাদের সম্মেলনে যোগ দিতে।
|