বন্দুক পাঁচটি, বোল-চালে নাহাটা যেন ছবির ভিলেন
কটা নয়, তাঁর নামে পাঁচ-পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স। কয়েক জন আইপিএস-সহ উচ্চপদস্থ বেশ কিছু পুলিশকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। থানায় গেলেও কোমরে গোঁজা থাকত পিস্তল। থানায় নতুন অফিসার এলে তাঁর ‘আপ্যায়নের’ ব্যবস্থাও করতেন তিনি। কারও সঙ্গে জমি নিয়ে ‘ডিল’ করার সময়ে সামনের টেবিলে পিস্তলটা রেখে বসতেন।
ইনিই হলেন রতনলাল নাহাটা।
শর্ট স্ট্রিট-কাণ্ডের তদন্তে নেমে রতনলাল সম্পর্কে যে সব তথ্য পুলিশের সামনে আসছে, তা থেকে তাঁকে মনে হবে যেন হিন্দি ছবির ঠান্ডা মাথার কোনও খলনায়ক।
“আসুন, আসুন অফিসার। নমস্কার। থানায় নতুন জয়েন করেছেন বুঝি? ভাল, ভাল। কোল্ড ড্রিঙ্ক নিন। চাইলে গরম কিছুও নিতে পারেন। আমার এখানে সব কিছুরই ব্যবস্থা আছে।” বছর দেড়েক আগে ৯-এ শর্ট স্ট্রিটে ঢুকে রতনলাল নাহাটার কাছ থেকে এমনই অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন শেক্সপিয়র সরণি থানায় সদ্য যোগ দেওয়া এক অফিসার। পুলিশি সূত্রের খবর, তখন রেস্তোরাঁর সঙ্গে বেআইনি একটি হুক্কা বার চালাতেন রতনলাল। ওই খবর পেয়েই হানা দিয়েছিলেন এক ডাকাবুকো অফিসার। তখনই ওই ভাবে তাঁকে স্বাগত জানান রতনলাল।
শর্ট স্ট্রিটের বাড়িতে রোগশয্যায় রতনলাল নাহাটা। রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারও। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
সেই এক বারই। লালবাজারের ‘অনেক উপরতলা’ থেকে প্রচণ্ড ধমক খেয়ে ওই অফিসার আর কোনও দিন ওই চৌহদ্দিতে যাননি। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “কে এই রতনলাল যে তাঁর নামে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হল! তিনি কোনও শিল্পপতি নন, কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, এমনকী তাঁকে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ীও বলা যেতে পারে না। বড়জোর জমির দালাল। কিন্তু কী এমন তাঁর নিরাপত্তার আশঙ্কা ছিল যে, তাঁকে পাঁচটি বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হল!” এই সূত্রে গোয়েন্দারা কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েক জন আইপিএস অফিসারের নাম জানতে পারছেন। যাঁদের সঙ্গে রীতিমতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল রতনলালের। ওই অফিসারদের নাম নিয়ে এত দিন পরে লালবাজারে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, পাঁচটি লাইসেন্সের মধ্যে দু’টি ছিল বড় বন্দুকের, তিনটি ছোট বন্দুক, অর্থাৎ রিভলভার-পিস্তল জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্রের। সোমবার ভোরে ৯-এ শর্ট স্ট্রিটে অনুপ্রবেশকারীদের উপরে দু’টি বড় বন্দুক থেকেই গুলি চালানো হয়েছিল। তার মধ্যে একটি দোনলা বন্দুক ও অন্যটি একনলা স্পোর্টিং গান। বাকি তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র কোথায় গেল, খোঁজ করছেন গোয়েন্দারা। তবে তার মধ্যে একটি পিস্তল গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে খোয়া গিয়েছে বলে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছিল।
গোয়েন্দারা এটাও জেনেছেন, মমতা অগ্রবালকে বন্দুক চালানো শিখিয়েছিলেন খোদ রতনলাল। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে কালীপুজো-দেওয়ালির রাতে ওই শর্ট স্ট্রিটের বাড়ির ছাদ থেকে গুলিও চলত। যাতে অন্য বাজি-পটকার আড়ালে গুলির শব্দ আলাদা করে বোঝা না যায়। সেই সুযোগেই মমতাকে হাতে ধরে বন্দুক চালানোর তালিম দিতেন রতনলাল।”
শর্ট স্ট্রিট-কাণ্ডের এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “আমাদের হিসেব মতো শর্ট স্ট্রিটে সোমবার রাতে সাত রাউন্ড গুলি চলেছিল। তার মধ্যে চারটি গুলিই চার জন অনুপ্রবেশকারীর গায়ে লাগে। দু’জন নিহত ও দু’জন আহত হন। অর্থাৎ, সাতটির মধ্যে মাত্র তিনটি গুলি নষ্ট হয়েছিল। বন্দুক চালানোয় অভ্যস্ত না হলে এটা সম্ভব নয়। ময়না-তদন্ত রিপোর্ট বলছে, প্রায় ছ’ফুট দূর থেকে গুলি চালানো হয়েছিল।” ওই অফিসার বলেন, “মমতা অগ্রবাল যে পাকা বন্দুকবাজের মতো গুলি চালাচ্ছেন, সেটা সিসিটিভি-র ফুটেজেই ধরা পড়েছে। বাড়িতে বহিরাগত একদল লোক ঢুকেছে, এ হেন মানসিক চাপে মাথা ঠান্ডা রেখে গুলি করা কঠিন। শর্ট স্ট্রিটের বাড়ির ভিতর থেকে যে-ই গুলি চালিয়ে থাকুক, তার স্ট্রাইক রেট কিন্তু প্রায় ৬০ শতাংশ।”
কিন্তু নাহাটা এতগুলো আগ্নেয়াস্ত্র রাখতেন কেন? লালবাজারের এক কর্তার কথায়, “কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় সম্পত্তির দখলদারি, লেনদেনে যুক্ত হয়ে অন্তত দু’শো কোটি টাকার মালিক হন রতনলাল। শুধু ৯-এ শর্ট স্ট্রিটের জমিটাকে কুমিরছানার মতো দেখিয়ে, বহু বার জাল দলিল তৈরি করে, জাল উইল তৈরি করে ৩০ কোটি টাকারও বেশি রতনলাল রোজগার করেছিলেন। সে জন্য তাঁর নিরাপত্তার আশঙ্কা সব সময়েই ছিল। বন্দুক রাখা মূলত সেই কারণেই। তা ছাড়া, বন্দুক রাখা ছিল তাঁর কাছে স্টেটাস সিম্বল।”
এত টাকা রোজগার করলেও গত তিন বছর বিভিন্ন রকম রোগে আক্রান্ত রতনলাল নাহাটার খাদ্য বলতে ছিল পাকা পেঁপে কিংবা কাঁচা পেঁপে সেদ্ধ। আর সোমবারের ঘটনার পরে কার্যত কিছু মুখেই তুলতে পারছেন না তিনি। স্যালাইন ও অক্সিজেন চলছে।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.