শর্ট স্ট্রিটের জমি দখল অভিযানের মূল পান্ডাদের চিহ্নিত করে ফেলার পরে এখন সেই জমির মালিকানা নিয়ে তদন্ত শুরু করতে চলেছে কলকাতা গোয়েন্দা-পুলিশ। এই কাজে যেমন রেজিস্ট্রি অফিস ও কলকাতা পুরসভার সাহায্য নেওয়া হবে, তেমন বিভিন্ন আদালতে ওই জমি সংক্রান্ত মামলার নথিও যাচাই করা হবে বলে পুলিশ-সূত্রে জানানো হয়েছে।
লালবাজারের এক কর্তা বুধবার জানান, ৯এ শর্ট স্ট্রিটের জমিটি বিভিন্ন সময়ে একাধিক ব্যক্তিকে বিক্রি করা হয়েছে। তা নিয়ে প্রতারণার একাধিক অভিযোগও রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে জমিটির প্রকৃত মালিককে খুঁজে পেতে কিছুটা অসুবিধে হতে পারে। উপরন্তু জমিটি ঘিরে বিভিন্ন আদালতে মামলা থাকার ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তাদের অনেকে।
আর এ প্রসঙ্গেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কলকাতা হাইকোর্টে চলতে থাকা মালিকানার মামলাটি। কী রকম?
লালবাজার-সূত্রের খবর: শর্ট স্ট্রিটের ওই জমি নিয়ে হাইকোর্টে তিনটে মামলা হয়েছে। এই তিনটি মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে শুধু একটির সেটি হল মিউটেশন সংক্রান্ত। বাকি দু’টির মধ্যে জমির মালিকানা সংক্রান্ত মূল মামলাটি রয়েছে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে। অন্যটি উচ্ছেদ বিষয়ক। মিউটেশন-মামলায় হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোন জমি কার নামে মিউটেশন হবে, তা পুরসভার এক্তিয়ারে। আপাতত মালিকানা-মামলার দিকেই তদন্তকারীরা নজর রাখছেন। পুলিশ ও আইনজীবী মহলের একাংশের মতে, ওই মামলায় যে পক্ষ জিতবে, উচ্ছেদ-মামলার রায়ও তাদের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা।
২০১১ সালের ৩০ জুন জমির দখলদারি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দাখিল করেছিলেন ৯এ শর্ট স্ট্রিটের জমিটির আদত মালিক শৈলবালা সেনের দুই নাতনি রুমি সেন ও রাখী সেন। তাঁরা মামলা করেছিলেন সঞ্জয় সুরেখা, মুম্বইয়ের হার্টলাইন সংস্থা ও আরও তিন জনের বিরুদ্ধে। হার্টলাইন আদালতে নথিপত্র পেশ করার পরে দাবি করে, শৈলবালাদেবী ১৯৯৯ সালে তাদের কাছেই জমিটি বিক্রি করে দিয়েছেন, যা পরে তাদের থেকে কিনে নেন সঞ্জয় সুরেখা।
অন্য দিকে আবেদনকারীদের বক্তব্য ছিল, তাঁরাই ওই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক, তাই তাঁরা জমিটি অন্য এক জন (রতনলাল নাহাটা)-কে বিক্রি করেছেন।
লালবাজার-সূত্রের খবর: বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে বাদীপক্ষের দু’টি আবেদন ইতিমধ্যে খারিজ হয়ে গিয়েছে। মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত বিবাদীরা যাতে জমির দখল নিতে না-পারেন, সে জন্য তাৎক্ষণিক অন্তর্বর্তী নির্দেশ চেয়ে আবেদন দু’টি পেশ করা হয়েছিল। ২০১১ সালের ৩০ জুন সে দু’টিকে খারিজ করার সময়ে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, শৈলবালা তাঁর দুই নাতনির নামে উইল করলেও তার প্রোবেট নেওয়া হয়নি। এ দিকে পুলিশ-সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মে মাসে সঞ্জয় সুরেখা ৯এ শটর্র্ স্ট্রিটের জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদ করতে চেয়ে হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ চেয়েছিলেন। গত ২৪ জুন মামলাটির শুনানিও হয়েছিল। সেখানে কী হয়েছে, সে ব্যাপারে লালবাজার এখন খোঁজ-খবর নিচ্ছে।
এই রকম একটা অবস্থায় বিচারপতির রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন তদন্তকারী থেকে বাদী-বিবাদী মামলার সব পক্ষই। “মালিকানার ফয়সালা হয়ে গেলে এত সব কাণ্ডের কিছুই হয়তো ঘটত না।” মন্তব্য করেছেন এক গোয়েন্দা-কর্তা। |