রতনের ফাঁদে পড়ে এখনও পস্তাচ্ছেন প্রবীর
র্ট স্ট্রিটের ৯এ বাড়িটি শুধু নয়, রতনলাল নাহাটা তাঁর জালিয়াতির কারবারে প্রায়শই ৯বি এবং ৯সি-র জমিও নিজের বলে দাবি করতেন। কলকাতার এক প্রোমোটার প্রবীর ঘোষকে তিনি এই টোপ দিয়েই প্রলুব্ধ করেছিলেন।
২০০৯ সালে রতনলালের কাছে গিয়েছিলেন প্রবীর। প্রবীরের বয়ান অনুযায়ী, নগেন্দ্রনাথ সিংহ নামে এক দালালের হাত ধরে রতনলালের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। প্রবীরের দাবি, রতনলাল তাঁকে বলেন শুধু ৯এ-র ১৭ কাঠা জমি নয়, ৯বি এবং ৯সি মিলিয়ে পুরো ৩৫ কাঠা জমিই তাঁর। তিনিই সমস্ত জমির মালিক। এই জমিতে তিনি আবাসন গড়তে চান। প্রবীর জানাচ্ছেন, এই সব কথার্বাতা হওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন মমতা অগ্রবাল, মমতার ভাই উমঙ্গ অগ্রবাল এবং মেলিসা ওয়ার্ড ও রাজরূপ দোশি নামে আরও দু’জন।
এঁরা কারা? মেলিসা ছিলেন মমতার বন্ধু। মমতার সঙ্গেই স্কুল চালাতেন তিনি। বর্তমানে আমেরিকা নিবাসী। আর রাজরূপ দোশিকে নিজের ভগ্নীপতি বলে পরিচয় দিয়েছিলেন রতন। রতনের প্রতারণা ব্যবসার সঙ্গে এঁরাও কি যুক্ত ছিলেন? জানা যায়নি। শর্ট স্ট্রিটের ঘটনায় মমতা ধরা পড়ার পরে ব্যাঙ্কক থেকে কলকাতায় এসেছেন উমঙ্গ। তাঁর বক্তব্য, “বোনকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা জালিয়াতির মধ্যে ছিলাম না। দরকারে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাব।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, কী দেখে রতনের কথায় বিশ্বাস করেছিলেন প্রবীর? কোন দলিলের ভিত্তিতে? প্রবীরবাবু বুধবার বলেন, “রতনলাল আমার সঙ্গে যেমন আন্তরিক ভাবে কথা বলেছিলেন, তাতে ওঁকে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তার সঙ্গে দলিলের যে ফটোকপি আমাকে দেওয়া হয়েছিল, তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে চুক্তি সই করি।” ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০০৯-এর ২ জুন। ঠিক হয়, আবাসন করে যা মুনাফা হবে তার ৬০% পাবেন রতনলাল। প্রবীরের বিশ্বাস অর্জনের জন্য রতনলাল জমির মাটি পরীক্ষার (সয়েল টেস্ট) রিপোর্টও দেখান। সেই পরীক্ষাটি ২০০৫ সালে করানো হয়েছিল।
প্রবীরের মোহভঙ্গ হতে শুরু করে এর কয়েক মাস পর থেকে। পুরসভা থেকে নকশা অনুমোদনের জন্য জমির আসল দলিলের প্রয়োজন ছিল। রতনলাল তখন প্রবীরের হাতে ৯এ-র একটি দলিল তুলে দেন। তাতে লেখা ছিল, ১৯৯৯ সালে করা ৯এ শর্ট স্ট্রিটের জমি শৈলবালা সেন নামে এক মহিলা রতনলালকে বিক্রি করেছেন। প্রবীর স্বভাবতই প্রশ্ন তোলেন, ৯বি আর ৯সি-র দলিল কোথায়? রতনলাল তখন বলেন, জমি সবেমাত্র তাঁর হাতে এসেছে। দলিল তৈরির কাজ চলছে। দলিলে সই করার জন্য তিনি মমতা আর উমঙ্গকে লন্ডন পাঠিয়েছেন। জমির মালিকেরা সেখানেই থাকেন।
৯বি এবং ৯সি-র মালিক আদতে শৈলবালারই দুই ভাসুরপো দ্বারকানাথ ও অমিয়নাথ সেন। দুজনেই কলকাতায় থাকেন। কিন্তু রতনলালকে তখনও পুরোপুরি অবিশ্বাস করেননি প্রবীরবাবু। পুরসভায় যেতেই ছবিটা তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়। প্রবীরবাবু বলেন, “৯এ-র দলিল নিয়ে পুরসভায় পৌঁছে দেখি, জমির সাবেক মালিক শৈলবালা সেন। জমির হাতবদলের পর নতুন মালিক হার্টলাইন নামে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা। রতনলাল কেউ না। মুম্বইয়ে লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে মূল দলিলের সার্টিফায়েড কপি জোগাড় করি আমি।”
তা হলে রতনলাল গোড়ায় প্রবীরকে কোন দলিল দেখিয়েছিলেন? পুলিশের অনুমান, শৈলবালা সেনের সঙ্গে হার্টলাইনের যে চুক্তি ১৯৯৯-এ হয়েছিল, তার একটি কপি ছিল রতনলালের কাছে। সেই কপিতে হার্ট-লাইনের জায়গায় সাদা কালির প্রলেপ লাগিয়ে নিজের নাম বসিয়েছিলেন রতনলাল। তারই ফটোকপি তুলে দিয়েছিলেন প্রবীরের হাতে। ফটোকপি দেখেই টাকা দিতে রাজি হলেন প্রবীর? আক্ষেপ ঝরে তাঁর গলায়, “আমার মাথা কাজ করছিল না। রতনলাল মাঝে মাঝেই খোঁটা দিচ্ছিল যে, আমি পারব না। অন্য কাউকে দিয়ে করাবে। ভয়ে তড়িঘড়ি চুক্তি করি।”
প্রবীরের দাবি, রতনলালকে এক কোটি ৩১ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ জানাচ্ছে, পরের বছর দ্বারকানাথের মেয়েদের কাছ থেকে রতনলাল ৯এ-র জমি কিনেছেন বলে যে দলিল পাওয়া যাচ্ছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে এক কোটি ৩১ লক্ষ টাকাই দিয়েছেন তিনি! তবে দ্বারকানাথের পরিবার আর ওই জমির মালিক নন জেনেও রতনলাল কেন তাঁদের এত টাকা দিতে গেলেন, সেই ধোঁয়াশা এখনও কাটাতে পারেনি পুলিশ।
প্রতারিত হয়েছেন বোঝার পরে রতনের কাছে টাকা ফেরত চাননি? প্রবীরবাবু বলেন, “আমি টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিতে গিয়েছিলাম। মমতা আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। না গেলে আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করার হুমকি দেন।” এর পরেই আইনের দ্বারস্থ হন প্রবীরবাবু। আইনজীবীর পরামর্শে আরও একবার ফিরে যান রতনলালের কাছে। সঙ্গে লুকনো টেপ রেকর্ডার। রতনলাল তখনও তাঁকে বলেন, ৯এ-র জমি তাঁরই। ৯বি এবং ৯সি-র দলিল সই হয়ে এসে গিয়েছে। আবাসন বানানো শুধু সময়ের অপেক্ষা।
এই সমস্ত কথোপকথন টেপ করে নেন প্রবীর। শেক্সপিয়র সরণি থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন রতনলালের নামে। গ্রেফতার হয় রতনলাল। তাঁকে সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু রতনলালের খুঁটির আসল জোরটা টের পাওয়া যায় এর পরে। সমাজের উঁচুতলার বহু মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল রতনলালের। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বসে নির্ভয়ে এমন ঢালাও জুয়াচুরি সেই কারণেই এত দিন চালাতে পেরেছেন তিনি, মানছে পুলিশও। রতনলাল ধরা পড়ার পরেই নানা মহল থেকে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়া রতনলালকে পরবর্তী সাত দিনের জন্য শহরের একটি বিলাসবহুল হাসপাতালে রাখা হয়। পরে তিনি জামিন পেয়ে যান।
টাকা এখনও ফেরত পাননি প্রবীর। উপায়ান্তর না দেখে এই বছরে হাইকোর্টে মামলা করেছেন। টাকা পেলেই তিনি খুশি। আর কিছু চান না। বাকিটা খেদোক্তি, “কী যে মতিভ্রম হল! আমার দুর্ভাগ্যই আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল রতনলালের কাছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.