ইস্তফা দিতে রাজি হয়ে গেলেন ফালোপা
ইস্টবেঙ্গলে ফিরতে চেয়ে আবেদন করলেন মর্গ্যান
মার্কোস ফালোপা জমানা শেষ হয়ে গেল লাল-হলুদে। মরসুমের কোনও টুর্নামেন্ট এখনও অর্ধেক গড়ায়নি। তা সত্ত্বেও মাত্র দশ ম্যাচ কোচিং করানোর পরই তীব্র চাপের মুখে ইস্তফা দিয়ে দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলিয়ান কোচকে। পড়শি ক্লাব মোহনবাগানে এ রকম ঘটনা ঘটলেও ইস্টবেঙ্গলের দীর্ঘ ইতিহাসে যা সম্ভবত নজিরবিহীন।
আজ বুধবার কলকাতা লিগে পিয়ারলেসের বিরুদ্ধে শেষ বার রিজার্ভ বেঞ্চে বসবেন ফিফার হয়ে পঁচাত্তরটি দেশে কোচিং করিয়ে আসা ফালোপা। তার পরই সরকারি ঘোষণা করবেন তিনি স্বয়ং। মঙ্গলবার বিকেলে ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর এ রকমই ‘চিত্রনাট্য’ তৈরি হয়েছে। আজ তা ইস্টবেঙ্গল মাঠে ‘মঞ্চস্থ’ হওয়ার কথা। ফালোপার বাড়ি থেকে আলোচনা সেরে বেরিয়ে সন্তোষবাবু শুধু বললেন, “ফালোপা ছেলের অসুস্থতা নিয়ে খুব চিন্তিত। দেশে গিয়ে ছেলের চিকিৎসা করাতে চাইছে। সে জন্যই ব্রাজিল চলে যেতে চাইছে। আমরা রাজি হয়েছি। বিকল্প কোচ খুঁজছি। এর বেশি কিছু বলব না। কাল যা বলার ম্যাচের পর ফালোপাই বলবে।”
চললেন ফালোপা। হয়তো আগের কোচ মর্গ্যানকেই জায়গা
ছেড়ে দিতে। মঙ্গলবার প্র্যাক্টিসের পর। ছবি:শঙ্কর নাগ দাস।
ফালোপা কবে সরবেন তা নিয়ে কয়েক দিন ধরে চলা জল্পনার অবসান হলেও তাঁর জায়গায় কে কোচ হবেন এবং কবে তিনি যোগ দেবেন তা নিয়ে হঠাৎ-ই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। আর্মান্দো কোলাসো কোচ হচ্ছেন, গত কয়েকদিন ধরে এটাই শোনা যাচ্ছিল। কোলাসো নিজেও তা বলে যাচ্ছিলেন সংবাদমাধ্যমকে। গোয়ায় তাঁর গ্রামে উৎসবও শুরু হয়ে গিয়েছে। পড়েছে ব্যানারও। কিন্তু ফুটবল সচিব নিজেই ধন্ধ তৈরি করে দিয়েছেন এ দিন। ফালোপার সঙ্গে ‘সন্তোষজনক’ আলোচনার পর রাতে তিনি বলে দিয়েছেন, “কোলাসোর সঙ্গে এখনও চুক্তি হয়নি আমাদের। সে জন্যই এখনও বলব না, ও-ই কোচ হবে। আরও একটি-দু’টি নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। সচিবই সব কিছু দেখছেন।” ক্লাব সূত্রের খবর, সবাইকে চমকে দিয়ে ট্রেভর জেমস মর্গ্যান এ দিন রাতেই ইস্টবেঙ্গলে ফিরতে চেয়ে ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদারের কাছে আবেদন করেছেন। ই-মেল করে। ক্লাব সচিব রাজি হলেই ফের চিডি-মেহতাবদের কোচিং করাতে দেখা যাবে ব্রিটিশ কোচকে। হোম-সিক হয়ে পড়ায় পরিবারের সঙ্গে সময় কটাবেন বলে মরসুমের শুরুতেই কোচের পদ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গিয়েছিলেন মর্গ্যান। বলে গিয়েছিলেন, চার-পাঁচ মাস পর কোচিং করাবেন কি না ভাববেন। মাঝে অবশ্য আইএমজি-আরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারদের কোচিং করাতে মুম্বই এসেছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, ইস্টবেঙ্গলের কিছু সিনিয়র ফুটবলারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে তাঁর। কর্তাদের মতোই। ক্লাবের এই খারাপ সময়ে তাদের অনুরোধ ফেলতে না পেরে সচিবের মন পেতে অকল্পনীয়ভাবে ইস্টবেঙ্গলে ফিরে আসার আবেদন করেছেন মর্গ্যান।
এখনও কোনও লিখিত চুক্তি না হওয়া সত্ত্বেও যেভাবে পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচ কোলাসো হইচই শুরু করেছেন, সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছেন তাতে ক্লাবের একটি বড় অংশ বিরক্ত। ক্ষুব্ধও। কর্তাদের অনেকেই মনে করছেন, ডার্বি ম্যাচের আগে দলকে চাঙ্গা করতে পারেন একমাত্র মর্গ্যানই। কারণ এই টিমটা হাতে করে গড়ে তুলেছিলেন তিনিই। তবে অন্যরা চাইলেও সচিব-ই এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গিয়েছে। আজ কলকাতা লিগ ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ সেই ১৯ নভেম্বর জর্জ টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে। কারণ, ইস্টবেঙ্গল-আর্মি একাদশ ম্যাচ হচ্ছে না। সেনারা গোয়ায় একটি টুর্নামেন্ট খেলতে চলে যাচ্ছে বলে চিঠি দিয়েছে আই এফ এ-তে। ফুটবল সচিবকে প্রশ্ন করা হয়, ফালোপা চলে গেলে বৃহস্পতিবার থেকে কোচিং করাবে কে? সন্তোষবাবু বলে দেন, “কেন, রঞ্জন চৌধুরী কী জন্য আছে!” তাঁর কথাতেই স্পষ্ট মর্গ্যানের জন্য দু’একদিন অপেক্ষা করতে চান তিনিও।
হঠাৎ-ই মর্গ্যানের নাম ভেসে উঠেছে লাল-হলুদে। কোলাসোর অবশ্য তাতে কোনও হেলদোল নেই। গোয়ার বাড়িতে চিডি-মোগাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য কয়েক দিন ধরেই কিট সাজিয়ে বসে রয়েছেন আর্মান্দো। ফালোপা নিজেই ইস্তফা দিয়ে সরে যাচ্ছেন শুনে বললেন, “আরে, ও তো ডার্বি পর্যন্ত থাকতে চেয়েছিল। যাক। ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সঙ্গে এ বার কথা বলতে হবে। আমার একটা কোর্ট কেস আছে রবিবার। তারপর যাব ঠিক করেছিলাম, দেখি কী হয়।” কথা বলে মনে হল সরকারি ভাবে কিছু না হলেও লাল-হলুদের দায়িত্ব মানসিক ভাবে নিয়ে ফেলেছেন কোলাসো। পরিস্থিতি যা তাতে শেষ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পাবেন কি না তা নিয়ে বড় প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হয়েছে মর্গ্যানের মেলের পর।
কোচের ইস্তফার ব্যপারে আলোচনা করতে মঙ্গলবার বিকেলে ফালোপার বাড়িতে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবল সচিব। এ দিন সকালে অনুশীলনের পর অবশ্য পেশাদার ফালোপা বুঝতে দেননি তাঁর মনোভাব। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু সিনিয়র ফুটবলার কর্তাদের কাছে নানা অভিযোগ করেছিলেন। সেটা জেনে এত দিন চুপ থাকলেও এ দিন মুখ খুলেছেন ফালোপা। “কিছু সিনিয়র ফুটবলার টিমে নিজেদের কোচের চেয়েও বড় মনে করছে। তারা নিজেদের তারকা ভেবে বসে আছে। ওদের কিছু বলা যাবে না। বললেই গণ্ডগোল,” বলে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পর কোলাসো সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই রেগে গিয়েছেন ফালোপা। “এ সব রটনা। যারা আমাকে হিংসা করছে তারাই এ সব রটাচ্ছে।” আবার পরক্ষণেই তিনি অবশ্য সাংবাদিকদের ব্রাজিলে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। “আপনারা যদি রিও-তে কোপা কাবানা বিচ দেখতে আসেন তবে আমি সাহায্য করব।” অনুশীলনে চিডি-মোগাদের স্ট্র্যাটেজিও বোঝান তিনি। তা হলে কি ইস্তফা দেওয়ার ব্যাপারে দোটানায় ছিলেন ফালোপা? চেয়েছিলেন, ডার্বি পর্যন্ত থেকে যেতে? প্রশ্ন উঠেছে এ জন্যই যে, আগের দিন ডার্বি নিয়ে যিনি ফুটবলারদের বুঝিয়েছিলেন-- কী এমন হল যে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ‘ছেলের অসুস্থতার জন্য’ ইস্তফা দিয়ে দেশে ফিরে যেতে চাইছেন। ফালোপার উত্তর মেলেনি। উত্তর দেননি এস এম এসেরও। ফোন করলে তাঁর স্ত্রী অ্যানা ফোন ধরেছেন। বলে দিয়েছেন, “মি: ফালোপা যা বলার কাল সাংবাদিক সম্মেলন করে বলবেন।”
ফালোপা কোনও বোমা ফাটান কি না সেটা বোঝা যাবে আজ ম্যাচের পর। তবে জানা দিয়েছে, চুক্তির শর্ত মেনে মাত্র এক মাসের বেতন নিয়েই ছেলে গোলকিপার কোচ কাম ফিজিও আমেরিকো ওরফে বাবাইকে নিয়েই দেশে ফিরে যাচ্ছেন তিনি। কারণ, যে ভাবে তাঁর উপর ঘরে এবং বাইরে চাপ বাড়ছিল তাতে ইস্তফা দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। ইস্টবেঙ্গল তাদের দেখানো রাস্তা অনুসরণ করেই গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে কোচ সরানোয় মোহনবাগান তাদের জয়ই দেখছে। মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র অসুস্থ। ফোন ধরলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু বললেন, “আমরা যখন নানা কারণে কোচ সরিয়েছি তখন অনেকেই সমালোচনা করত। এখন সবাই নিশ্চয়ই বুঝছে সাফল্য পাওয়ার জন্য কোনও কোনও সময় কোচ সরানো জরুরি হয়ে পড়ে।”

বুধবারে কলকাতা লিগ ফুটবল
ইস্টবেঙ্গল: পিয়ারলেস (ইস্টবেঙ্গল ২-০০)।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.