মমতার দেখানো পথে হাঁটতে গিয়েও পিছোলেন হেমন্ত
ঝাড়খণ্ডে আলুর সংকট কাটাতে মমতার দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেলেন হেমন্ত সোরেন। রাজ্যে উৎপাদিত আলু যাতে বাইরের রাজ্যে পাঠানো না হয় তার জন্য আলু ব্যবসায়ীদের কাছে স্রেফ মৌখিক অনুরোধ করেছিলেন রাজ্যের কৃষি সচিব নীতিনমদন কুলকার্নি। আর তার জেরেই আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ল সরকার। প্রায় ঘন্টা দুয়েক অবরুদ্ধ হল ২৩ নম্বর জাতীয় সড়ক। শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ‘দুর্ভোগ’-এর বিষয়টি পাশে সরিয়ে রেখে কৃষক ও আলু-ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ‘সরকারি অনুরোধ’ ফিরিয়ে নিল হেমন্ত সরকার। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে ‘মমতা দিদি’-র দ্বারস্থ হয়েছেন হেমন্ত সোরেন। আজই তিনি প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আলু সঙ্কট থেকে মুক্তি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন হেমন্ত।
গত কাল মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের উপস্থিতিতে রাজ্যের শীর্ষ কর্তারা আলু-সঙ্কট নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়: ঝাড়খণ্ডের নিজস্ব আলু (বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৭ লক্ষ টন) বাইরের কোনও রাজ্যে পাঠানো হবে না। সেই মর্মে লিখিত কোনও নির্দেশ নয়, আজ কৃষি সচিব রাঁচির পন্ড্রা বাজার সমিতির কর্তাদের কাছে সরকারের মনোভাব জানান। তাঁদের অনুরোধ করেন, পন্ড্রা বাজার সমিতি যেন রাজ্যে আলুর পাইকারি বাজারগুলিতে এই মর্মে নোটিশ পাঠিয়ে দেয়।
রাঁচি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে, বেরোতে আলুর বিরাট পাইকারি বাজার রয়েছে। সেখান থেকে রাঁচি-সহ ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জেলায় ও ঝাড়খণ্ডের বাইরে অন্যান্য রাজ্যে আলু সরবরাহ করা হয়। তখন বাজারে চাষিদের ভিড়ে থিক থিক করছে বেরো বাজার। পুরোদমে চলছে কেনাবেচা। পণ্ড্রা বাজার থেকে ওই নোটিশ বেরো বাজারে আসার পরেই কিন্তু বদলে যায় ছবিটা। ব্যবসায়ীরা ওই নোটিশের খবর পেয়েই আলু কেনা বন্ধ করে দেন। যার জেরে বিকেলে পথে নেমে পড়েন চাষিরা। ২৩ নম্বর জাতীয় সড়ক (স্থানীয় নাম রাঁচি-গুমলা রোড) অবরোধ করেন তাঁরা। বেলা তিনটে থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চাষিরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন।
বিক্ষোভ দেখানোর সময় তাঁরা বার বার পশ্চিমবঙ্গের নাম করে ঝাড়খণ্ড সরকারকে বিঁধতে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের মতো এ রাজ্যে আলুর ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে তার ফল সরকারকে ভোগ করতে হবে বলেই স্লোগান দিয়ে জানাতে থাকেন চাষিরা। বেরোর কোষা গ্রামের চাষি মহম্মদ নাসিরুদ্দিন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের লাইন অনুসরণ করা ঝাড়খণ্ড সরকারের উচিত নয়। তাতে আমরা, চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। নিজেদের পরিশ্রমের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হব।” উল্লেখ্য, নাসিরুদ্দিন আজ বেরো বাজারে ১৫০ বস্তা ( প্রতি বস্তায় ৫০ কিলো) আলু নিয়ে এসেছিলেন পাইকারি বাজারে কাছে বিক্রি করতে। আলু চাষিদের এই বিক্ষোভে এক সময় তাদের পাশে এসে রাস্তা অবরোধে যোগ দেন অনেক আলু ব্যবসায়ীও। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেরোতে আলু কিনতে এসেছিলেন বিকাশ গুপ্ত। তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্তে ওখানকার চাষিরা ক্ষুব্ধ। কিন্তু তাঁরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এর ফল পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অন্য ভাবে ভুগতে হবে।”
শেষ পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে চাষিদের বোঝানো হয়, ভিন রাজ্যে রফতানিতে কোনও নিষেধাজ্ঞা সরকার জারি করেনি। শুধু মাত্র রাজ্যে আলুর সংকটের কথা ভেবেই রফতানি সাময়িকভাবে কম করতে পণ্ড্রা বাজারের কাছে কৃষি দফতর আবেদন করেছিল। রাজ্যের কৃষি সচিব নীতিনমদন কুলকার্নি রফতানি বন্ধ রাখার প্রসঙ্গে তাঁর দফতরের অনুরোধের কথা স্বীকার করে নেন। রাজ্য সরকার যে রফতানির ওপরে এখনই কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করছে না তা স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিমাংশুশেখর চৌধুরীও। তিনি বলেন, “অগণতান্ত্রিক কোনও কাজ করব না। পশ্চিমবঙ্গে যাতে আলু রফতানির ওপরে নিষেধাজ্ঞা ওঠে তার জন্য অনুরোধ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.