|
|
|
|
ঝাড়খণ্ডেও আলু দুষ্প্রাপ্য |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
ফাঁকা আলু মাণ্ডি। ভিন্ রাজ্য থেকে আলু এনে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে মাল খালাস করছে আট-দশটি ট্রাক। ব্যবসায়ীরা কেউ চিন্তিত মুখে বসে আছেন। কেউ আবার রাগে গজগজ করতে করতে মুন্ডুপাত করছেন সরকারের। কেউ আবার বণিকসভার কর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইছেন, আলু নিয়ে তাঁদের সরকার কী ভাবনা-চিন্তা করছে।
রাজ্যে আলুর সঙ্কট এবং আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে আজই বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিমাংশুশেখর চৌধুরী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজের মুখ্যসচিব রামসেবক শর্মা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব তাঁকে জানিয়েছেন, বাইরের রাজ্যে আলুর চালান বন্ধ করা নিয়ে তাঁদের সরকার কোনও নির্দেশ দেয়নি।” তিনি বলেন, “এই সঙ্কট মেটাতে ঝাড়খণ্ড সরকার পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।” উল্লেখ্য, ন্যাশনাল হর্টিকালচার বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী, ঝাড়খণ্ডে বছরে আলুর প্রয়োজন ১৫ লক্ষ ৮২ হাজার ৫০০ টন। ঝাড়খণ্ডের নিজের আলু উৎপাদনের ক্ষমতা ৬ লক্ষ ৫৯ হাজার টন। বাকি আলু পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর প্রদেশ থেকেই সাধারণত আসে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলুর সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় রাজ্যে আলুর দাম আকাশ ছুঁয়েছে। ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা কিলো দরে আলু বিকোচ্ছে রাঁচি-সহ ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন বাজারে। রাঁচির বরিয়াতু, লালপুর কিংবা কাঁটাটোলির মতো জায়গাগুলিতে তেলেভাজা বিক্রেতারা সিঙ্গারা, আলুর চপের দাম ইতিমধ্যেই ১ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে।
পন্ড্রায় আলুর পাইকারি বাজারের প্রাক্তন সভাপতি দীপু গুপ্তর ক্ষোভ, “শুধু যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলু আসা বন্ধ হয়েছে তাই নয়, এ রাজ্যের আলু ব্যবসায়ীরা, যাঁরা ওখানে হিমঘরে আলু রেখেছিল তাঁদেরও আলু আটকে রাখা হচ্ছে। নয়তো স্থানীয় বাজারে কম দামে জোর করে বিক্রি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত দু’দিন ধরে আগ্রা থেকে আলু আনা হচ্ছে। কিন্তু পরিবহণ খরচের কারণে তাও সাধারণ ক্রেতার কাছে অনেক বেশি দামে পৌঁছচ্ছে।” উল্লেখ্য, রাঁচি, রামগড়, খুঁটি, হাজারিবাগ এই চারটি জেলার আলু মূলত পণ্ড্রার মান্ডি থেকেই সরবরাহ করা হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, আজও এখানে ৫০ কিলোর আলুর বস্তা এক হাজার থেকে এগারোশো টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। অর্থাৎ কেজি হিসেবে দর পড়ছে ২০ থেকে ২২ টাকা। আঠারশো টাকা কুইন্ট্যাল দরে বাঁকুড়া থেকে আলু কিনে কয়েকটি ট্রাক আজ ‘কোনও ভাবে’ রাজ্য সীমা পার হয়ে পণ্ড্রা বাজারে এসেছে বলে জানিয়েছেন দিলীপ কুমার নামে এক পাইকারি আলু ব্যবসায়ী। এই ‘কোনও ভাবে’ ব্যাপারটা কী? উত্তর, চেকপোস্টে মোটা টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে।
ধানবাদে আলুর পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী মনোজ সিংহ জানান, “যদিও বা কিছু ট্রাক আসছে, তাও দুই রাজ্যের সীমায় গাড়ি পিছু দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা করে ঘুষ নিচ্ছে পুলিশ।” মনোজের কথায়, “পরিস্থিতি এমনই, দেখলে মনে হবে ট্রাকে করে আলু নয়, গোলা-বারুদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আলু-বোঝাই ট্রাক ধরে পুলিশ থানায় নিয়ে চলে যাচ্ছে।” |
|
|
|
|
|