অপরাধ আর ভুল কিন্তু এক নয়: প্রধানমন্ত্রী
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চট করে রা কাড়েন না। গত ন’বছরে হাতে গোনা কয়েক বার সংসদে বিরোধীদের সোজাসাপ্টা জবাব দেওয়া ছাড়া তাঁকে বিশেষ মুখ খুলতে দেখাও যায়নি। সেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সিবিআইকে তাদের কাজের গণ্ডিটা বুঝিয়ে দিতে বেছে নিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থারই সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের মঞ্চকে। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জটিল প্রক্রিয়া। সে ক্ষেত্রে যদি কোনও ভুল হয়, তাকে ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। তার তদন্ত করতে হবে সাবধানে। দলীয় নেতারা যে বক্তৃতা শুনে বলছেন, একই সঙ্গে মনমোহন জবাব দিলেন সমালোচকদেরও, যে তালিকায় বিরোধীরা তো আছেনই, বাদ দেওয়া যাচ্ছে না সুপ্রিম কোর্টকেও।
সর্বোচ্চ আদালত এক সময় সিবিআইকে ‘খাঁচার তোতা’ বলেছিল। সম্প্রতি কয়লা খনি বণ্টন কেলেঙ্কারির তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সর্বোচ্চ আদালতের অধীনেই তদন্ত চালাচ্ছে। সিবিআইয়ের স্বশাসন প্রয়োজন এই বিতর্কে দীর্ঘদিন ধরেই দেশ উত্তাল। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী আজ জানিয়ে দিলেন, তদন্তের ক্ষেত্রে সিবিআই এবং পুলিশের স্বাধীনতা আছে। থাকবেও। তিনি বলেন, “এ জন্য যদি আরও কিছু করতে হয়, তা-ও করব।” কিন্তু একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, সংবিধান অনুযায়ী অপরাধ দমন, তার তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব প্রশাসনের। “তাই পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) প্রশাসনের অঙ্গ। প্রশাসনিক নজরদারিতেই তাদের কাজ করতে হবে।”
এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল আর অপরাধ এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক করতে হবে সিবিআইকে।
টুজি এবং কয়লা খনি বণ্টনের ক্ষেত্রে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নীতিগত ভাবে ভুল ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক স্তরে লাগাতার আক্রমণ এবং বিচারবিভাগের কাছে বিস্তর নাকানিচোবানি খেতে হয়েছে সরকারকে। এই দুই কেলেঙ্কারির তদন্তের প্রসঙ্গে সরাসরি না ঢুকেও প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেন, “এখন অনিশ্চয়তার যুগ। তাই এই সময়ে যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়াই যথেষ্ট ঝুঁকির। আজ যা ঠিক বলে মনে হচ্ছে, পরে দেখা যাবে, সেটাই হয়তো ভুল।” এর পরেই সিবিআইয়ের প্রতি তাঁর বার্তা, “আমাদের এমন ভাবে প্রশাসন চালাতে হবে যাতে এই অনিশ্চয়তার ভয়ে নীতিপঙ্গুত্ব চলে না আসে।” সরকারি একটি মহলের ব্যাখ্যা, প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা যদি দেখেন, সঠিক মনে করে আজ যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কাল তার জন্যই জেলে যেতে হচ্ছে, তা হলে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতেই ভয় পাবেন। থেমে যাবে দেশের অগ্রগতি।
প্রধানমন্ত্রীর এই কথা শোনার পরে কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এত দিন ধরে মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ করা হয়েছে। আজ তার জবাবও দিলেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন, ঘাড়ের উপরে জেলে যাওয়ার ভয় থাকলে কেউ কাজ করতে চাইবেন না।
সম্প্রতি কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে প্রাক্তন কয়লা সচিব পি সি পারেখ ও শিল্পপতি কুমারমঙ্গলম বিড়লার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। যা নিয়ে আমলা এবং শিল্পমহল আতঙ্কে রয়েছে। এর আগে টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন তদন্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আন্দিমুথু রাজাকে জেলে যেতে হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে এমনই কোনও না কোনও ব্যক্তিবিশেষের উপর দায় চাপিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, সামগ্রিক ভাবে মনমোহন-সরকারের তরফে কোনও দুর্নীতি হয়নি। আজ সে কথাই প্রকারান্তরে আরও এক বার জানিয়ে দেন মনমোহন। একই সঙ্গে স্পষ্ট করে দেন, এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে কোন পথে তদন্ত করা উচিত সিবিআইয়ের। তিনি বলেন, “নীতিগত বা প্রশাসনিক বিষয়ের তদন্তে যথেষ্ট যত্ন নিতে হবে। প্রাথমিক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত অসৎ উদ্দেশ্যে বা আর্থিক স্বার্থে নেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ হলে প্রশ্ন তোলা উচিত। কিন্তু কোনও নীতিগত সিদ্ধান্তকে অপরাধের তালিকায় ফেলে দেওয়াটা ভুল এবং বাড়াবাড়ি।” কেন? তারও জবাব দিয়েছেন তিনি “নীতি তৈরিটা বহুস্তরীয় এবং জটিল প্রক্রিয়া। দিনদিন তা আরও জটিল হচ্ছে। তাই কোনও পুলিশ বাহিনী নীতি তৈরির বিচার করতে বসলে তা ঠিক হয় না বলেই আমার মত।”
সম্প্রতি তাঁকে বিশ্বের সব থেকে ক্ষমতাবান শিখ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর দলের লোকেরাই বলছেন, আজ যেন সেই সিংহবিক্রমই দেখালেন মনমোহন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মনমোহনের বক্তৃতার অন্তর্নিহিত অর্থ দু’টি। প্রথমত, তিনি আরও এক বার বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তিনি বা তাঁর সরকার সামগ্রিক ভাবে দুর্নীতিতে জড়িত নয়। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অধীনস্থ সিবিআইকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন না।
বিজ্ঞানভবনে এ দিনে অনুষ্ঠানে সিবিআই-প্রধান রঞ্জিত সিনহা তো বটেই, হাজির ছিল গোয়েন্দা সংস্থার গোটা বাহিনী। সেখানে বক্তৃতার শুরুতেই মনমোহন জানিয়ে দেন, তিনি দুর্নীতির তদন্ত, সিবিআইয়ের স্বশাসনের মতো বিষয় নিয়ে সামগ্রিক ভাবে আলোচনা করবেন। সে কথা শুনে তাঁর দিকে ঘুরে বসেন সিবিআই-প্রধান, যিনি সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন, মন্ত্রী অশ্বিনী কুমার এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের দুই আমলা কয়লা-দুর্নীতির চার্জশিটে কলম চালিয়েছিলেন। সেই অভিযোগের ধাক্কায় অশ্বিনী গদিচ্যুত হন। পরে নিজের বক্তৃতায় রঞ্জিত সিনহা বলেন, “দ্রুত আর্থিক বিকাশের স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়। যাঁরা নীতি তৈরি করেন, তাঁদের কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ, তাঁরা যেন তাড়াতাড়ি কাজ সারতে গিয়ে বেনিয়মের ফাঁদে পা না দেন।”
অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, প্রশাসক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কড়া বক্তব্যের পরেও এই ভাবে নিজেদের অবস্থানটা পরিষ্কার করে রাখলেন সিবিআই প্রধান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.