সম্প্রতি অবসর নেওয়া সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠায় তিন বিচারপতির তদন্ত কমিটি গড়েছেন প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম। এক মহিলা ইনটার্নের অভিযোগ, সম্প্রতি অবসর নেওয়া ওই বিচারপতি গত ডিসেম্বরে একটি হোটেলের ঘরে তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছিলেন। ওই বিচারপতির অধীনেই তিনি ইনটার্নশিপ করছিলেন। সময়টা তখন, যখন নির্ভয়া -কাণ্ড নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল।
সংবাদপত্রে এই বিবৃতির কথা পড়ে আজ সকালে প্রধান বিচারপতিকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল জি ই বাহনবতী। সদাশিবমের প্রতিক্রিয়া, “বিষয়টিকে একেবারেই হাল্কা ভাবে নেওয়া যায় না।” প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমি বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত।” বাহনবতীও তাঁকে ঘটনার কথা বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন, কর্মস্থলে কোনও মহিলা যৌন হেনস্থার শিকার হলে কী কী করা উচিত, তার হদিশ দেয় বিশাখা গাইডলাইন। যা ঠিক করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টই। আর সেখানকার বিচারপতির বিরুদ্ধেই যদি যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক।
যার প্রেক্ষিতে সদাশিবম পরে জানান, বিচারপতি আর এম লোঢা, বিচারপতি এইচ এল দাত্তু এবং বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাইকে নিয়ে তিন জনের কমিটি তৈরি করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যে থেকেই কমিটি কাজ শুরু করে দেবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, কমিটির মূল লক্ষ্য ওই ইনটার্নের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা।
কলকাতার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেসের স্নাতক ওই অভিযোগকারিনী এখন একটি প্রতিষ্ঠানে ফেলো হিসেবে কাজ করছেন। যৌন হেনস্থার ঘটনাটি তিনি জার্নাল অব ইন্ডিয়ান ল অ্যান্ড সোসাইটির ব্লগে লিখেছিলেন ৬ নভেম্বর। তিনি লিখেছেন, “গত ডিসেম্বরে নির্ভয়া আন্দোলনে গোটা দেশ উত্তাল। মহিলাদের উপরে হিংসা এবং সরকারি উদাসীনতার বিরুদ্ধে আম জনতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতির কী অদ্ভুত সমাপতন। সেই সময়েই আমার ওই অভিজ্ঞতা।” তরুণী জানিয়েছেন, “দিল্লিতে তখন শীতের ছুটিতে আমার ইন্টার্নশিপ চলছে। সব ক্লান্তি ভুলে মন দিয়ে তখন আমি সুপ্রিম কোর্টের ওই বিচারপতির কাছে কাজ করছি। তার প্রতিদান যৌন হেনস্থা। উনি শারীরিক ভাবে আমার ক্ষতি করেননি ঠিকই। কিন্তু দাদুর বয়সী এক জন কী ভাবে এমন করতে পারেন? আমি ঘটনার ভয়ঙ্কর বিবরণে যাচ্ছি না। কিন্তু সেই স্মৃতি ভুলতেই পারছি না। এখনও তাড়া করছে আমায়।”
পরে একটি ওয়েবসাইটেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওই তরুণী। তাঁর দাবি, ওই বিচারপতি আরও তিন জন মহিলাকে হেনস্থা করেছেন। তা ছাড়াও অন্য বিচারপতির কাছে এমন ব্যবহার পেতে হয়েছে আরও চার মহিলাকে। নিজের কথা বলতে গিয়ে তরুণী লিখছেন, হোটেলের ঘরে যখন বিচারপতি অশালীন আচরণ করেন, তখন সেখানে কেউ ছিল না। তাঁর কথায়, “হোটেলের ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম শান্ত ভাবে। ঘরটাই শুধু সাক্ষী। ওই দিন কাউকে কিছু বলিওনি।” কবে ঘটনাটি ঘটেছিল তা নিজের লেখায় না -জানালেও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ২৪ ডিসেম্বর ঘটনাটি ঘটে।
তিনি আফশোস করেছেন, “পাঁচ বছরের আইনের শিক্ষা আমায় শিখিয়েছিল সমস্যা সমাধানের জন্য আইনের পথই বেছে নেওয়া উচিত। কিন্তু ক্রমশ আমি বুঝলাম আইনও সব নয়। তাই বিচারপতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানোর ইচ্ছেও হয়নি। কিন্তু পরে মনে হল, অন্য মেয়েদেরও এই পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়। এর সমাধান কী আমি জানি না।”
তাঁর বক্তব্য, “সত্যি কথা বলতে কী আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। সুপ্রিম কোর্টের এক জন বিচারপতি ! কেউ কী করে বিশ্বাস করবে উনি এমন কাজ করতে পারেন।”
|