সিনেমায় নামার টোপ দিয়ে তাঁর কিশোরী মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন বাবা। অথচ সেই মামলার চার্জশিটে অপহরণের উল্লেখই করা হয়নি। এই ব্যাপারে মেমারি থানার ওসি-র রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই রিপোর্ট হিসেবে মঙ্গলবার দায়সারা ভাবে হাতে লেখা কয়েকটি পাতা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই ওই ওসি-র বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলা করেন বিচারপতি। তাঁর নির্দেশ, ওই ওসি-কে হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে জানাতে হবে, কেন তাঁকে জেলে পাঠানো হবে না।
সিনেমা বা টিভি সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এক শ্রেণির লোক গ্রামে গ্রামে মেয়েদের নানা ভাবে প্রতারণা করছে। এ দিন হাইকোর্টে এই নিয়ে একটি মামলায় প্রতারকদের দুষ্কর্মের বৃত্তান্ত উঠে আসে। এই ধরনের দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশের অভিযোগও ওঠে।
মামলার সূত্রেই প্রতারকদের কাজকর্মের কথা জানা যায়। কিশোরী-তরুণীদের রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে ফাঁদ পাতে ওই সব প্রতারক। তাদের মুখে টালিগঞ্জের বাঘা বাঘা পরিচালক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীর কথা। সিনেমা ও টিভি ধারাবাহিকের নেপথ্যের নানা কাহিনি শুনিয়ে এবং কোন গ্রামের কে কী ভাবে তাদের সহায়তায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন, তার ফিরিস্তি দিয়ে মেয়েদের মন গলায় তারা। অনেক সময় পুলিশও এদের সহায়তা করে।
এ দিনের মামলার আবেদনকারী সালমা খাতুন নামে বর্ধমানের মেমারির এক তরুণী। রূপকুমার নামে এলাকারই এক যুবক সালমাকে টালিগঞ্জে অভিনয়ের সুযোগ করে দেবে বলে টোপ ফেলে। ২০১১-র ২২ নভেম্বর মেয়েটিকে কলকাতায় নিয়ে আসে রূপকুমার এবং নার্গিস বেগম নামে এক মহিলা। সালমা তখন নাবালিকা। আবেদনকারীর আইনজীবী উদয়শঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, এ ভাবে প্রায় রোজই গ্রাম থেকে মেয়েদের শহরে আনা হচ্ছে। অভিনেত্রী হওয়ার লোভে মেয়েরা বাড়ি ছাড়ার সময় পরিবারের টাকা এবং গয়নাও সঙ্গে নিচ্ছে। সালমাও কয়েক ভরি গয়না সঙ্গে নিয়েছিলেন। তিন দিন পরে সালমার বাবা কলকাতা থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন। মেমারি থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না-করেই চার্জশিট দিয়ে দেয়।
চার্জশিটে দেখা যায়, তাতে অপহরণের ধারা উল্লেখ করা হয়নি। অথচ অপহরণের অভিযোগেই এফআইআর করা হয়েছিল। এবং অপহরণের তদন্তের ভার সিআইডি-কে দেওয়ার আর্জি জানিয়েই মামলা করেন সালমার বাবা। বিচারপতি এই ব্যাপারে মেমারির ওসি-র রিপোর্ট তলব করেছিলেন। এ দিন সেই দায়সারা রিপোর্ট দেখেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। চার্জশিটে অপহরণের অভিযোগ নেই কেন, তা-ও জানতে চান তিনি। ওসি কোনও জবাব দিতে পারেননি।
|