স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের পুলিশ এখনও গ্রেফতার করেনি বলে দাবি করলেন মেয়েটির মা। শুক্রবার বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর আনন্দ রায়ের সঙ্গে দেখা করে এ কথা জানান তিনি ও এলাকার বাসিন্দারা।
নবাবহাটের ওই বাসিন্দারা দাবি করেন, পুলিশ এই মামলায় এ পর্যন্ত দু’দফায় যে ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে, তারা কেউ ঘটনায় জড়িত নয়। মেয়েটির মায়ের কথায়, “এই ঘটনায় প্রকৃত যে তিন জন জড়িত, পুলিশ তাদের এখনও ধরেনি। এলাকায় ওই তিন জন নেই, এটা ঘটনা। কিন্তু পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে মানুষই খুঁজে বের করে সাজা দেবে।”
গত ২৫ অক্টোবর রাতে টিউশন নিয়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায় দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। ২৭ অক্টোবর ডিভিসি-র সেচখালের পাড়ে তার বিবস্ত্র দেহ মেলে। ময়না-তদন্ত রিপোর্টে জানা যায়, গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে মেয়েটিকে। ঘটনার পর দিনই এই দুষ্কর্মে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় তিন যুবককে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন এলাকার লোকজন। পুলিশ জানায়, তাদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।
|
কামদুনি, খোরজুনার মতো এ ক্ষেত্রেও ওই ছাত্রীর পরিবার প্রশাসনের সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছেন। বর্ধমান ১ বিডিও দেবদুলাল বিশ্বাস পরিবারটিকে চাল-ডাল ও আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব দিলে তাঁরা তা ফিরিয়েছেন। মেয়েটির মায়ের দাবি, “পুলিশ আমার ছেলেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল। পরে আবার বলে, ছেলের বয়স হয়নি। তাই চাকরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বলেছি, চাকরি চাই না। দোষীদের সাজা চাই।”
ঘটনার উপযুক্ত তদন্তের দাবিতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বার বর্ধমান শহরে বিক্ষোভ, মিছিল করেছেন নবাবহাটের বাসিন্দারা। পুলিশ তদন্তে যথেষ্ট সক্রিয় নয় বলেও আন্দোলনকারীরা দাবি তুলেছেন। তবে বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় এই অভিযোগ মানেননি। তাঁর বক্তব্য, “স্থানীয় মানুষ তো বটেই, পুলিশের ভূমিকায় তাঁরাও সন্তুষ্ট বলে আমাদের জনিয়েছেন মৃতার বাবা-মা।’’ গত বুধবার সমীর আইচ নবাবহাটে মৃতার বাড়িতে যান। তিনি বলেন, “আগামী রবিবার কামদুনির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমি আসব। গোটা বাংলা এই ছাত্রীর পরিবারের পাশে রয়েছে। আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি, আপনারা কোনও রকম আপস করবেন না।”
এ দিন চারটি ম্যাটাডরে চড়ে এলাকার বেশ কিছু মহিলা পুলিশ সুপারের অফিসে যান। পুলিশ সুপার অফিসে ছিলেন না। সেই অফিসে ঢোকা নিয়ে ওই মহিলাদের সঙ্গে উপস্থিত মহিলা পুলিশকর্মীদের ধস্তাধস্তি বাধে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায় আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দলকে আলোচনায় ডাকেন। আনন্দবাবু বলেন, “ওঁরা আমার কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ জানাননি। তবে মূল অভিযুক্তদের ধরার দাবি জানিয়েছেন। আমি বলেছি, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। ওঁরা ঘটনার সিবিআই তদন্ত চান বলে জানিয়েছেন। আমি জানিয়েছি, সে তদন্ত করানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। এই তদন্ত চাইলে তাঁদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে বলে জানিয়েছি।” |