প্রাথমিকে শিক্ষক সমস্যা জেলা জুড়ে, দিশা পাচ্ছে না সংসদও
ক দিকে কিছু ছাত্রের অভাবে ধুঁকছে কিছু স্কুল, আবার বর্ধমানে ৫০-এর কাছাকাছি প্রাথমিক স্কুলে রয়েছেন এক জন করে শিক্ষক। গত জুন মাসে প্রকাশিত একটি তালিকায় এমনটাই জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। ফলে স্কুলগুলির পড়াশোনা কার্যত লাটে উঠেছে। অসহায় বোধ করছে জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদও। সংসদের সভাপতি দেবাশিস নাগ বলেন, “নতুন করে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সঙ্কট কাটানো খুব মুশকিল।” এ দিকে ডিসেম্বর মাসের আগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ফল বের হওয়া কঠিন। ফলে ততদিন পর্যন্ত শিক্ষক-সমস্যা সমাধান কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় সংসদ।
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ৫৯টি চক্রের মধ্যে ৪৯টি চক্রে প্রায় শতাধিক স্কুলে একজন করে শিক্ষক স্কুল সামলান। দেবাশিসবাবুর দাবি, “এর মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশ স্কুলে শিক্ষক দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু আর শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না।” তবে জেলার বারাবনি, চিত্তরঞ্জন, দুর্গাপুর, দুর্গাপুর ২, জামুড়িয়া ১, কাঁকসা ১, কাটোয়া পশ্চিম, পাণ্ডবেশ্বর, পূর্বস্থলী উত্তর ও রায়না ২ চক্রতে শিক্ষক সমস্যা নেই বলে জানা গিয়েছে।
জামুড়িয়ার একটি স্কুলে পড়ুয়া রয়েছে ১৩৩ জন। অথচ শিক্ষক এক। ফলে স্কুল সামলাতে হিমশিম দশা তাঁর। একই অবস্থা মঙ্গলকোট ১ চক্রের গোপীনাথপুর, মিরের পাড়া-সহ একাধিক স্কুলের। বেশির ভাগ স্কুলের ছাত্রসংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। ফলে পড়াশোনা তো বটেই, ব্যাঘাত ঘটছে মিড-ডে মিল প্রকল্পেও। বিভিন্ন স্কুলের অভিভাবকেরাও অভিযোগ করেছেন যে ওই সব স্কুলের শিক্ষকরা সরকারি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে স্কুল তালাবন্ধ হয়ে পড়ে থাকে। দাঁইহাট চক্রের পড়ুয়া শাহজাহান খান কিংবা মঙ্গলকোট ১ চক্রের দেবাশিস দাসদের অভিযোগ, “একজন শিক্ষক থাকায় পড়াশোনা প্রায় হয় না। অনেক দিন টিফিনের সময় ছুটি হয়ে যায়।” ওই সব স্কুলের শিক্ষকেরাও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে জানিয়েছেন, মিড-ডে মিল প্রকল্প চালাতে গিয়েই বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে পড়ুয়াদের দিকে তাঁরা নজর দিতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, প্রতিটি ঘরে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির তালিকা করতে গিয়েই প্রায় দিন দুপুর হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সংসদ নির্ধারিত রুটিন মেনে পড়াশোনা করানো যাচ্ছে না। এছাড়া তাঁদের ক্ষোভ, একজন শিক্ষক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট চক্রের স্কুল পরিদর্শক ছুটি দিতে পারছেন না। ফলে বিপদে পড়লেও ছুটি পাচ্ছেন না তাঁরা। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক সদস্য জানান, সম্প্রতি আসানসোল চক্রের এক শিক্ষকের এক আত্মীয় মারা যান। পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম তাঁকেই করতে হয়। ফলে স্কুলে আসতে পারেননি তিনি। কিন্তু খাতায়-কলমে স্কুল খোলা ছিল।”
এই পরিস্থিতিতে ‘গোঁজামিল’ দিয়ে আপাত ভাবে সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি দেবাশিস নাগ। যে সব স্কুলে তুলনামূলক ভাবে বেশি শিক্ষক আছেন, সেখান থেকে শিক্ষক তুলে এনে একজন শিক্ষক রয়েছে, এমন স্কুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে গত জুন-জুলাই মাস থেকে এই প্রক্রিয়া চালু করেও ৫০টির কাছাকাছি স্কুলের সমস্যা মেটানো যায়নি। একজন শিক্ষক বলেন, “আমাদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা করাচ্ছে। ওই কাজ করতে গিয়ে এমনিতেই সমস্যা হয়। এখন বেশ কিছু স্কুলে একজন শিক্ষক হয়ে যাওয়ায় অসুবিধা আরও বেড়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “নিয়ম মেনে স্কুলের কাজ হচ্ছে না। সে কারণে অনেকসময় পড়ুয়ারা আসছে না। আর আমরা অভিভাবকদের কোপের মুখে পড়ছি। অথচ আমাদের কিছু করার নেই।” তৃণমূল সমর্থিত পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি তপন পোড়েল বলেন, “শিক্ষক নিয়োগের জন্য দাবি করেছি। যত দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ হবে, তত তাড়াতাড়ি এ ধরণের সমস্যা মিটবে।”
বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, আড়াই থেকে তিন হাজার নতুন শিক্ষক নেওয়া হবে। যার ফল বেরোবে ডিসেম্বরে। আর নিয়োগের প্রক্রিয়া নতুন বছরের আগে শুরু হবে না, এটাও নিশ্চিত। ফলে শিক্ষক সমস্যাও নতুন বছরের আগে মেটার সম্ভাবনা ক্ষীণ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.