সংসদীয় গণতন্ত্রে মানুষের দাবিদাওয়া তুলে ধরার আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দিলেন এক জন। আর এক জনের মতে, সরকারের কর্তব্যের পাশাপাশি বিরোধীদেরও দায়িত্ব আছে নিজেদের জন্য আস্থা অর্জন করার। সামনেই বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। তার আগে বিরোধী বামেদের সক্রিয় হওয়ার জন্য এমন জোড়া বার্তাই এল দুই প্রাক্তন স্পিকারের কাছ থেকে।
সিপিএমের সল্টলেক লোকাল কমিটির আয়োজনে ‘দিশারী’ ভবনে পাঁচ দিন ধরে চলছিল জ্যোতি বসুর শতবর্ষ ও নভেম্বর বিপ্লবের স্মরণ অনুষ্ঠান। সোমবার তার শেষ দিনে ‘সংসদীয় গণতন্ত্র ও জ্যোতি বসু’ শীর্ষক আলোচনাচক্রে বক্তা ছিলেন বিধানসভা ও লোকসভার দুই প্রাক্তন স্পিকার যথাক্রমে হাসিম আব্দুল হালিম ও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই হালিম বলেন, ১৯৪৬ থেকে ২০০১ এই দীর্ঘ সংসদীয় জীবনে জ্যোতিবাবু কী ভাবে বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে সরব ছিলেন। অনাস্থা প্রস্তাব আনার মতো পর্যাপ্ত বিধায়ক-সংখ্যা কংগ্রেসের নেই দেখে ওই শর্ত শিথিল করার জন্য স্পিকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। অথচ এখন হালিমের মতে, “বিচিত্র পরিস্থিতি চলছে! বিধানসভা বেশির ভাগ দিন চলেই না। মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নের জবাব দেন না! বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না!” মূল্যবৃদ্ধি বা নারী নির্যাতনের মতো জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে বিধানসভার ভিতরেই সরব হওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন হালিম। আড়াই বছরে বিরোধী বামেদের ভূমিকাকে কী চোখে দেখছেন? জবাবে হালিম বলেছেন, “একটু দুর্বল বলে মনে হয়। আরও সবল হওয়া উচিত!”
কমিউনিস্ট নেতা হিসাবেই এ দেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে প্রয়াত বসুর ভূমিকার কথা এ দিন বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন সোমনাথবাবু। পাশাপাশিই লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার বলেছেন, “জ্যোতিবাবু যে মর্যাদা পেয়েছেন, সেটা তো এমনি এমনি হয়নি! উনি সেই সম্মান অর্জন করেছিলেন। বিরোধীদেরও মানুষের সম্মানের যোগ্য হয়ে উঠতে হয়।” রাজারহাট-নিউটাউনের ‘জ্যোতি বসু নগর’ নাম যে রাজ্য সরকার মুছে ফেলতে চাইছে, তাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়েছেন সোমনাথবাবু। আর হালিমের মন্তব্য, “এ ভাবে জ্যোতিবাবুকে মুছে দেওয়া যাবে না!”
সোমনাথবাবু-হালিমেরা যে পথের পক্ষে সওয়াল করেছেন, সে ভাবেই এ বারের অধিবেশনে সব্জির দাম থেকে শুরু করে নারী নির্যাতন ও আইনশৃঙ্খলার মতো নানা প্রশ্নে সরকারকে কোণঠাসা করতে চায় বিরোধীরা। তার রণকৌশল ঠিক করতে অধিবেশন শুরুর দিন, ১৮ নভেম্বর বাম বিধায়কদের বৈঠক ডাকা হয়েছে আলিমুদ্দিনে। হালিমের মতো প্রাক্তনদের পরামর্শও নিতে চান বাম পরিষদীয় নেতারা।
|