প্রাণের ছোঁয়ায় জেগে উঠল মৃতের শহর
দ্যোজাতর কান্না চাপা পড়ে গেল হাততালির ঝড়ে। ঝড় আসা ইস্তক মুখের হাসিটা সেই যে মিলিয়ে গিয়েছিল, পাক্কা তিন দিন পর সেই মুখগুলোতেই ফুটল হাসির রেখা।
চর্তুদিক লণ্ডভণ্ড। ছবির মতো সাজানো গোছানো বিমানবন্দরটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে এক নিমেষে। উদ্ধারকারী বিমান ওঠানামার জন্য একটা আপৎকালীন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। আজ সেখানেই একটা ছোট জটলা। সকলের চোখে-মুখে টানটান উত্তেজনা। তাঁদের সামনেই যে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে বছর একুশের এক তরুণী। ভয়-উৎকণ্ঠা-উত্তেজনার ছবিটা অবশ্য বদলে গেল মুহূর্তেই। সকলকে আশ্বস্ত করে ধ্বংসস্তূপেই এল প্রাণের স্পন্দন। মা এমিলির কোল আলো করে জন্ম নিল ছোট্ট বিয়া জয়। ঝড়ে খোঁজ মিলছে না তার ঠাকুমার। ফলে নাম নিয়ে আর দু’বার ভাবেননি এমিলি, ঠাকুমা বিয়াত্রিচের নামের রেশ ধরেই মেয়ের নাম রেখেছেন বিয়া জয়। শত শত মৃত্যুর মধ্যে যে প্রাণের জিয়নকাঠি ছুঁইয়ে গেল, তার নামে ‘আনন্দ’ তো থাকবেই!
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে এই সতর্কবার্তা শুনেই ঘর ছেড়েছিলেন এমিলি। অন্তঃসত্ত্বা এই তরুণীর ঠাঁই হয়েছিল এক অস্থায়ী শিবিরে। কিন্তু সেই আশ্রয়ও বেশি ক্ষণ টেকেনি। নিজের প্রাণের মায়া তো আছেই, তার উপর তিলেতিলে এত দিন ধরে তারই ভিতরে বেড়ে উঠেছে আর একটা প্রাণ। এত সহজে সব ভেসে যাবে! হাল ছাড়েননি এমিলি। বিশাল ঢেউয়ের মধ্যেই সাঁতরাতে শুরু করেন এই আসন্নপ্রসবা। কী ভাবে যে এসে পৌঁছলেন বিমানবন্দরে, মুহূর্তগুলো আর ভাল করে মনে নেই। তার পর অচেনা মানুষগুলোই আগলেছেন তাঁকে।
হাইয়ানের ছোবল ছুঁতে পারেনি বিয়া জয়কে। শত ঝঞ্ঝার মধ্যেও টাকলোবান বিমানবন্দরেই জন্ম হল শিশুটির।
ঝড়ের তাণ্ডবে নিখোঁজ ঠাকুমা বিয়াত্রিচে। তাঁর নামানুসারেই শিশুটির নামকরণ। ছবি: এ পি।
এই অচেনা ছবিটা যে শহরের, তা কিন্তু গত ক’দিনে চেনা হয়ে গিয়েছে। হাইয়ান ফিলিপিন্সে আছড়ে পড়ার পর থেকেই একাধিক বার খবরের শিরোনামে উঠেছে টাকলোবান শহর। জলের মধ্যে ভেসেছে মৃতদেহ প্রকাশিত হয়েছে সেই ছবি। আজও খবরে টাকলোবান। মৃত্যুর খতিয়ান নিয়ে নয়, প্রাণের স্পর্শ দিয়ে।
এমনিতে অবশ্য তিন দিন কেটে যাওয়ার পরও খুব একটা বদলায়নি ফিলিপিন্সের ছবিটা। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ২৫০ হলেও রেড ক্রসের অনুমান মৃত্যু তাড়াতাড়ি ১০ হাজারের গণ্ডিও ছাড়িয়ে যাবে। টাকলোবানের মেয়র অলফ্রেড রোমুয়ালডেজের জানিয়েছেন, “এখনও এমন একটা পরিবারকে পেলাম না যাঁরা নিজেরদের আপনজনকে খোয়াননি।” আজও জলের তোড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে মৃতদেহ। আজ সেখানে গণ-কবরের আয়োজন করেছে প্রশাসন। শুধু টাকলোবানই নয়, ফিলিপিন্সের উপকূল বরাবর ধ্বংসের ছবিটা একই রকম। সে শহরের অধিকাংশই জল থইথই। তার মধ্যেই দেখা যাছে পানীয় জলের আকাল। এখনও বহু এলাকায় উদ্ধারকারী দল পৌঁছায়নি। বাধ্য হয়ে দূষিত জল পান করছেন অনেকে। প্রশাসনের আশঙ্কা, অবস্থা সামলানো তো দূরে থাক, এ ভাবে চললে দ্রুত মহামারী ছড়িয়ে পড়বে এলাকায়। তবে আশার কথা, উদ্ধারকাজে কিছুটা গতি এসেছে। হাত লাগিয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। পৌঁছেছে মার্কিন ত্রাণ। রাষ্ট্রপুঞ্জে পরিবেশ সংক্রান্ত বৈঠকে ফিলিপিন্সের প্রতিনিধিদলের প্রধান ঘোষণা করেছেন, দেশের পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অনশনে থাকবেন।
হাইয়ানের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আবার আশঙ্কার কালো মেঘ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রের আকাশে। এই এলাকায় তৈরি হয়েছে গভীর নিম্নচাপ। ফলে কাল সকাল থেকেই শুরু হবে ভারী বৃষ্টি।
ফিলিপিন্সে তাণ্ডব শেষ করে আজই ভিয়েতনামে ঢুকেছে হাইয়ান। এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে সেখানে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.