বিদেশনীতি নিয়ে আক্রমণে বিদ্ধ কেন্দ্র
লোকসভা নির্বাচনের আগে বিদেশনীতির প্রশ্নে বিরোধী ও সরকার পক্ষে তরজা ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রীর শ্রীলঙ্কা সফর বাতিল করা নিয়ে গত ক’দিন ধরেই সরকারকে আক্রমণ করে যাচ্ছিল বিজেপি। বিতর্কের পারদ এ বার আরও চড়িয়ে দিল পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের উপদেষ্টা তথা বিদেশমন্ত্রী সরতাজ আজিজের সঙ্গে হুরিয়ত নেতাদের গত কালের বৈঠক।
এই প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি আজ ফের সরকারের বিদেশনীতিকে দুর্বল আখ্যা দিয়ে মুখর হয়ে ওঠে। সরকারের তরফে এই আক্রমণের জবাব দেওয়া হলেও সন্দেহ নেই প্রতিবেশী দেশগুলিকে নিয়ে যথেষ্টই অস্বস্তিতে মনমোহন সরকার। পাকিস্তান শুধু নয় কাশ্মীর নিয়ে চিনের ভূমিকাও কম বিব্রত করছে না ভারতকে। আজ জানা গিয়েছে, চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বাণিজ্য করিডর গড়ে তোলা নিয়ে দু’দেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং-ই ও সরতাজ গত কাল কথা বলেছেন এখানে। করিডর হলে সেটা যাবে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দিয়েই। যার অর্থ ভারতেরই একটি ভূখণ্ড দিয়ে চিন ও পাকিস্তান বাণিজ্য করিডর গড়া নিয়ে আলোচনা করছে, তা-ও ভারতেরই রাজধানীতে বসে!
নয়াদিল্লির পক্ষে এটা মেনে নেওয়া কঠিন। যে কারণে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের কথা না-রাখার অভ্যাস নিয়ে মুখর হন। একই সঙ্গে চিন যে বারবার সেনা অনুপ্রবেশের মতো প্ররোচনামূলক কাজ করে চলেছে, তা নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগের কথাও জানান তিনি। তাঁর কথায়, “চিন ধারাবাহিক ভাবে প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দু’দেশের মধ্যে ছোট খাটো কিছু বিরোধ শুধু নয়, দু’দেশের সেনাবিহিনীর সম্পর্ক চোখে চোখ রেখে চলার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছে।” সামরিক পরিভাষায় ‘আইবল টু আইবল’ অর্থাৎ চোখাচোখি হলে চোখ না নামানোর অনমনীয়তা সংঘাতেরই একটি স্তর। যদিও সাম্প্রতিক কালের মধ্যে দু’দেশের মধ্যে রক্তপাতের কোনও ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটছে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায়। ওই এলাকায় হিংসা, জঙ্গি নাশকতার পিছনে পাক সরকার, সরকারি সংস্থা বা সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা জানা সত্ত্বেও ইসলামবাদকে আপাতত ‘বেনিফিট অব ডাউট (বা নিশ্চিত প্রমাণাভাবে ছাড়)’ দিচ্ছে বলে খুরশিদ জানিয়েছেন এ দিন। এর কারণ হিসেবে বিদেশমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ভারত জানে পাকিস্তানের অন্দরের সঙ্কট গভীর। সে কারণে তাদের কিছুটা সময় দিতেই এটা করা হচ্ছে। কিন্তু ঘরোয়া রাজনীতিতে সেটাই বারবার চাপে ফেলছে মনমোহন সরকারকে।
এর আগে, আসিফ আলি জারদারির জমানায় পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন হিনা রব্বানি খার। তিনিও দ্বিপাক্ষিক সফরে এসে প্রথমেই হুরিয়তপন্থী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সে বার ইসলামাবাদকে অসন্তোষ জানিয়েছিল দিল্লি। সরতাজ-হুরিয়ত বৈঠকের ক্ষেত্রেও সেটাই করা হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
তবে ভোটের ক’মাস আগে বিজেপি যখন ‘দুর্বল বিদেশনীতি’র অভিযোগ তুলছে, তখন তার জবাবও দিতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতের যে কোনও নাগরিক বিদেশি দূতাবাসের আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারেন। তা নিয়ে কিছু বলার নেই। এ ক্ষেত্রে স্পর্শকাতরতা বিচার করে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি তোলা হবে।
বিজেপি-র আক্রমণের মুখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দেও আজ বলেন, “বিজেপি এখন বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ করছে, অথচ এনডিএ জমানায় পাক মন্ত্রীরা এসে ছ’বার হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তখন কেন টনক নড়েনি তাঁদের?” বাজপেয়ী জমানায় কোন কোন পাক নেতা কবে হুরিয়তের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তার একটি তালিকাও আজ সাংবাদিকদের সামনে পেশ করেন শিন্দে। তাঁর কথায় “বাজপেয়ী জমানায় এত বার বৈঠক হওয়ায় ব্যাপারটি একটি দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে গিয়েছে। এ বারে আমরা কী করব, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে!”
তবে সরতাজের ভূমিকায় স্পষ্ট, পাকিস্তানে নতুন সরকার ক্ষমতায় এলেও কাশ্মীর-নীতির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাঁর পুর্বসূরিদের থেকে এক চুলও সরছেন না। ফলে লোকসভা ভোটের আগে এমন একটি অস্ত্র হাতে পেয়ে যাওয়ায় তা ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে না প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। গত কালই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। আজ নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ নেত্রী মীনাক্ষী লেখি বিষয়টি নিয়ে রাজধানীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তাঁর কথায়, “পাকিস্তান নাশকতা চালিয়ে গেলেও মনমোহন সরকার তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে চলেছে। ভারতের নাকের ডগা দিয়ে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গেলেন আজিজ। অথচ সরকার তা বসে-বসে দেখল। যাদের সঙ্গে লড়া উচিত তাদেরই আস্কারা দেওয়া হচ্ছে।”
এমনিতেই মনমোহন সিংহের বিদেশনীতি বারবার দলের ভিতরে ও বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়ছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে সদ্যই বাতিল হয়েছে তাঁর শ্রীলঙ্কা সফর। প্রশ্ন উঠেছে গত সেপ্টেম্বরে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে মনমোহনের বৈঠক নিয়েও। সরতাজ আজিজ এ বার দিল্লি এসেছেন এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক আসেম-এ যোগ দিতে। আগামী কাল তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদের সঙ্গে। ওই আলোচনায় হুরিয়ত-বৈঠক নিয়ে ভারতের অসন্তোষ পাক নেতৃত্বের সামনে তুলে ধরবেন খুরশিদ। তাতে খুব কিছু সুফল যে আশা করা হচ্ছে না, সেটা খুরশিদ নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন আজ। তাঁর কথায়, “বারবার আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করি। ব্যক্তিগত ভাবে যথেষ্ট উষ্ণ প্রতিক্রিয়াই পেয়ে থাকি। কিন্তু বাস্তবে সেই বৈঠকের ফল যা দাঁড়ায়, সেটা খুবই হতাশাজনক।”
প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মনমোহনী নীতি যে মোটেই কাজে আসছে না, সেটা কংগ্রেসের কোর কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে স্পষ্ট ভাবেই জানিয়েছিলেন এ কে অ্যান্টনি বা সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলরা। খুরশিদের এ দিনের মন্তব্যেও মিলল তারই প্রতিফলন।
বৈঠক অবশ্য হচ্ছেই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.