মৃত ১০ হাজার, পৃথিবীটা যেন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে
লে ভেসে যাচ্ছে গির্জার হল ঘরটা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বেঞ্চগুলো। আর পাঁচটা রবিবারের চেনা ছবি নেই। ভক্তদের সমাগম নেই, নেই কোনও প্রার্থনার আয়োজন। জলের মধ্যেই হাঁটু মুড়ে উবু হয়ে বসে রয়েছেন মধ্যবয়সী মহিলা। সামনের বেঞ্চটায় পড়ে রয়েছে তাঁর একরত্তি ছেলেটার নিথর দেহ। এক হাতে চোখ মুছতে মুছতে ছেলের কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন মা।
হাইয়ানের তাণ্ডবে গুঁড়িয়ে যাওয়া ফিলিপিন্সের এটাই চেনা ছবি। পথেঘাটে দেহের স্তূপ। সমুদ্রসৈকত থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে একটা বাড়িঘরও আস্ত নেই। সুপার টাইফুন হাইয়ানের দাপটে সুনামির মতোই ঢেউ উঠেছিল। তাতে ভেসে গিয়েছে ফিলিপিন্সের একটা বড় অংশ। জানলা -দরজা -আসবাবপত্র খড়কুটোর মতো ভাসছে সমুদ্রের জলে। সে সঙ্গেই লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। গত দু’দিনের -১০০ -১২০০ থেকে আজ এক ধাক্কায় ১০,০০০। ঘরছাড়া লাখ পাঁচেক। ঘটনার পর থেকেই সন্ধান মিলছে না আরও কত লক্ষ মানুষের।
আবহবিদ্দের পূর্বাভাস মতোই ফিলিপিন্স পেরিয়ে ভিয়েতনামেও আছড়ে পড়েছিল হাইয়ান। তবে শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল অনেকটাই। তাতেও জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সে খতিয়ান ফিলিপিন্সের তুলনায় নগণ্য। হাইয়ান তার যাত্রাপথে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ফিলিপিন্সের লেইতে প্রদেশই তার প্রমাণ।
টাইফুন আছড়ে পড়ার পর থেকেই খোঁজ মিলছে না অনেকের। পাগলের মতো খুঁজে চলেছেন আপনজনেরা। এর একটা বড় কারণ, উত্তাল সমুদ্র গ্রাস করে ফেলেছিল দ্বীপরাষ্ট্রের অনেকটাই। তাতেই ভেসে গিয়েছে বহু মানুষ। পথঘাটের এখনও বেহাল দশা। চেষ্টা করেও উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছতে পারছেন না। দিকে খাদ্য -পানীয়ের আকাল। তাই দোকানপাট ভেঙে শুরু হয়েছে ব্যাপক লুঠপাটও। “লোকজন সব ভূতের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর পাগলের মতো খাবার খুঁজছে” বললেন অল্পবয়সী একটি ছেলে। লেইতে - টাকলোবান শহরে দেখাও গেল সে দৃশ্য। দোকানের সামনে ভিড়। যে যা পারছে, তুলে নিচ্ছে। আবার টাকলোবানের আর এক জায়গায় দেখা গেল সিঁড়ির উপর পড়ে আছে মৃতদেহ। পচন ধরে গিয়েছে। সে দিকে নজর নেই বিধ্বস্ত পথচারীদের। ঘরবাড়ির ভাঙাচোরা কঙ্কাল থেকে যদি কিছু মেলে, খুঁজে চলেছেন তাঁরা। পেশায় শিক্ষিকা অ্যান্ড্রিউ পোমেদা বললেন, “টাকলোবান পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। পরিজনকে হারিয়ে আর পেটের জ্বালায় কিছু লোক পাগলের মতো করছে।” তাঁর আশঙ্কা, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, আরও খারাপ দিকে গড়াবে। পোমেদার কথায়, “লোকজন হিংস্র হয়ে উঠছে। শুধুমাত্র খাবার, দুধ -পানীয়ের খোঁজে দোকানপাট -মলে হানা দিচ্ছে। ভাবে চললে এক সপ্তাহের মধ্যে মানুষ একে অপরকে খুন করতে শুরু করবে।”
জন্মসূত্রে ফিলিপিনো মিলা ওয়ার্ড অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। ছুটিতে এসেছিলেন নিজের দেশে। জানালেন, অন্তত কয়েকশো দেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন তিনি। চাদর, প্লাস্টিক দিয়ে বিকৃত শরীরগুলো ঢাকা। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিরা হেলিকপ্টারে করে ঘুরে দেখে জানিয়েছেন, “উপকূলবর্তী অঞ্চল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। বড় বড় জাহাজকে সৈকতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে উত্তাল সুমদ্র। ঘরবাড়ি সব তছনছ হয়ে গিয়েছে। চাষের জমি জলে ডুবে।” গুইউয়ান শহরে এখনও পৌঁছতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। ৪০,০০০ হাজার লোকের আস্তানা এই শহরই হাইয়ানের প্রথম শিকার ছিল। কী অবস্থা কেউ জানে না। বাকো শহরের ৮০ শতাংশই জলের তলায়।
ব্যবসার কাজে চিন থেকে টাকলোবানে এসেছিলেন ন্যান্সি চ্যাং। জানালেন, যে হোটেলে ছিলেন, তার দু’তলা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল সমুদ্রের জল। সেখান থেকে উদ্ধার হলেও দুর্দশা ঘোচেনি। তিন ঘণ্টা ধরে কাদা আর ভগ্নস্তূপের মধ্যে দিয়ে হেঁটে তবে পৌঁছন সেনার আশ্রয় শিবিরে। বললেন, “দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা যেন শেষ হয়ে গিয়েছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.