দু’টো জয়, দু’টো ড্র। বাইরের মাঠে টানা তিনটে ম্যাচ অপরাজিত।
আত্মবিশ্বাসকে তুঙ্গে তুলে চব্বিশে নভেম্বর মার্কোস ফালোপার ইস্টবেঙ্গলের মুখোমুখি হতে চলেছে মোহনবাগান। তা সত্ত্বেও কোনও উচ্ছ্বাস নেই বাগানে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাঁটা নিয়েও যে করিম বেঞ্চারিফার দলকে ফিরতে হচ্ছে শিলং থেকে। লাল কার্ড দেখা ইচে খেলতে পারছেন না চিডি-মোগাদের বিরুদ্ধে। ম্যাচের পর মোহনবাগান কোচ করিম পেশাদার। হতাশা গোপন করে ফোনে অবশ্য বললেন, “ইচে নেই কী করা যাবে। এ সব তো বয়ে বেড়াচ্ছিই। তবে আমি চিন্তিত নই। কারণ ইচে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমার বাকি ডিফেন্ডাররা আজ খুবই ভাল খেলেছে। ইচের অভাবটা বুঝতেই দেয়নি। এক পয়েন্ট পেয়েও আমি খুশি।”
শিলংয়ে বুধবারের ম্যাচটি ছিল নাটকীয়তায় ভরা। উত্তেজনার রং-মশালে রঙিন। পেনাল্টি, জোড়া লাল কার্ড। বিরতির আগেই দু’দলেরই দশ জন হয়ে যাওয়া। চোরাগোপ্তা মারামারি। হলুদ কার্ডের ছড়াছড়ি। বারবার ফুটবলারদের চোট পেয়ে বসে যাওয়া। বাগান কিপার শিল্টন পালের অবিশ্বাস্য গোটা পাঁচেক নিশ্চিত গোল সেভ। আর কি চাই! “কত গোল বাঁচিয়েছি মনে নেই। পোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে সেটা ভাবিওনি। অপরাজিত থেকে ফিরছি সেটাই বড় ব্যাপার। তবে ইচের বড় ম্যাচ থেকে বেরিয়ে যাওয়াটা খারাপ হল,” বলছিলেন ম্যাচের সেরা শিল্টন। শিলং থেকে ফোনে।
ইস্টবেঙ্গল এখান থেকে চার গোলে জিতে ফিরেছিল। করিমও চেয়েছিলেন ম্যাচটা যে করেই হোক জিতে ফিরতে। লড়াইটাও চলছিল হাড্ডাহাড্ডি। প্রতিটি বল দখলের জন্য লড়াই চালাচ্ছিলেন ফুটবলাররা। কিন্তু হঠাৎ-ই ছন্দ কাটে বাগানের। মোহনবাগান বক্সে ঢুকে পড়া উইলিয়ামসকে টেনে ফেলে দেন ইচে। লাজংকে পেনাল্টি দেওয়ার পাশাপাশি ইচেকেও লালকার্ড দেখান মণিপুরের রেফারি খাম্বা সিংহ। ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ছত্রিশ মিনিট। লাজং ১-০ এগিয়ে যায়।
লাজং খেলছিল চার জন বিদেশি নিয়ে। মোহনবাগান দু’জন নিয়ে শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে যায় এক জন। এক মাত্র কাতসুমি ছাড়া কোনও বিদেশি ছিল না বাগানে। অপ্রত্যাশিত ভাবে ১-১ করে বাগান। জাকিরের তিরিশ গজের শট লাজংয়ের এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে দিক বদল করে গোলে ঢোকে। বিরতির ঠিক আগের মুহূর্তে লাজংও দশ জন হয়ে যায়। জীবন সিংহ লালকার্ড দেখেন বিশ্রী ফাউল করে। বিরতির পর দশ বনাম দশের লড়াইতে ক্রমশ পিছোতে থাকেন কাতসুমি-ডেনসনরা। তবে বাগান যে গোলের সুযোগ পায়নি তা নয়। সাবিথ এবং কাতসুমি দু’টো গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন।
ম্যাচের শেষ কুড়ি মিনিট লাজং কোণঠাসা করে ফেলে কিংশুকদের। ঠান্ডার মধ্যেও মাঠ ভর্তি দর্শক। তাঁদের চিৎকার আর উইলিয়ামস-গ্লেনদের দৌরাত্ম্যে প্রায় পুরো বাগান টিম তখন নীচে নেমে এসেছে। অতি-মানব হয়ে ওঠেন শিল্টন। তিনি না থাকলে ম্যাচটা হেরেই যেত বাগান। করিম অবশ্য ব্যখ্যা দিলেন, “আমার টিম শেষ কুড়ি মিনিট ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। সেই সুযোগটা লাজং নিয়েছে।” ইচেকে হারানোর পাশাপাশি বাগানের জন্য আরও একটা খারাপ খবর আসে রাতে। গোলদাতা জাকিরের কাঁধের হাড় সরে গিয়েছে। তিনি অনিশ্চিত।
মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম, ইচে, সৌভিক, কিংশুক, কাতসুমি, ডেনসন, জাকির (সাইজু), মণীশ (আদিল), সাবিথ, শঙ্কর (আইবর)। |