অপেক্ষা আর দু’টো উইকেটের
চিন রমেশ তেন্ডুলকরের দুশোতম দেখতে পাচ্ছে না ইডেন।
সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের দুশোতম দেখে ফেলল ইডেন!
সচিনপ্রেমে দগ্ধ ক্রিকেটভক্তের দিবাস্বপ্ন নয়, ব্যাপারটা ঘোর বাস্তব। বুধবার সকাল আটটা থেকে যাঁরা ইডেনের গ্যালারি ভরাতে শুরু করে দিয়েছিলেন, তাঁরা যে বাস্তব হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি। ১৯৯তম টেস্টের বরাত পাওয়া ইডেনের আশা ছিল ব্যাটসম্যান সচিনের বিস্ফোরণ। বুধবারের ইডেন যখন সেই আশা মোটামুটি গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছে, চা-বিরতির মিনিটখানেক আগে প্রায় সেই সময়ে সাদা পানামা হ্যাট খুলে বোলিং ক্রিজে আবির্ভাব সাড়ে পাঁচ ফুটের শরীরের। ডান হাতের আঙুল থেকে যখন স্টিকিং প্লাস্টার খুলছেন সচিন, দুপুরের ভাতঘুম ঝেড়ে ফেলে ইডেন ততক্ষণে ফের জমজমাট।

মহাতারা আর নতুন তারা। ইডেনে বুধবার। ছবি: উৎপল সরকার।
প্রথম ডেলিভারিটা লেগব্রেক।
দ্বিতীয়টা গুগলি, লেগসাইড দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে।
তৃতীয়টা ডিফেন্ড করলেন ব্যাটসম্যান।
চার নম্বর বলের ফ্লাইট আর ডিপ বুঝতে না পেরে ব্যাটসম্যান পরিষ্কার এলবিডব্লিউ, আর ইডেন জুড়ে সেই পুরনো শব্দব্রহ্ম ‘স-চি-ন... স-চি-ন...।’
সচিনকে উইকেট দিয়ে যিনি ফিরে গেলেন, তাঁকে বুধবারের আগে শহরের বেশির ভাগ মানুষ চিনতেন কি না সন্দেহ। বুধবারের পরেও শেন শিলিংফোর্ড নামটা ক’জন মনে রাখবেন, প্রশ্ন থাকছে। তবে কয়েক মুহূর্তের জন্য অন্তত ইডেনের প্রাপ্তির সঙ্গে মিশে থাকল জনৈক ক্যারিবিয়ান স্পিনারের নাম। মিশে থাকল আরও একটা জাদু-সংখ্যা— দুশো।
শিলিংফোর্ডকে ফিরিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ছেচল্লিশতম উইকেটটা পেলেন সচিন। যার সঙ্গে তাঁর ওয়ান ডে শিকার যোগ করলে মোট অঙ্কটা দাঁড়াচ্ছে দুশো। দুশোতম টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস অধরা থাকল তো কী, দুশোর ম্যাজিক ফিগারটা ছুঁয়ে ফেলল ইডেন। জীবনের একমাত্র আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে একটা উইকেট আছে সচিনের নামের পাশে, কিন্তু ক্রিকেটের ‘কুলীন সমাজে’ (টেস্ট ও ওয়ান ডে) উইকেটের ডাবল সেঞ্চুরিটা এল সেই মাঠে, যেখানে বোলার সচিন বরাবরই সফল। তাঁর বিদায়লগ্নে নিশ্চয়ই শহরের স্মৃতিতে আরও বেশি উজ্জ্বল ১৯৯৩-এর হিরো কাপ সেমিফাইনালে বোলার সচিনের শেষ ওভারে টিমকে জেতানো। বা ২০০১-এর ঐতিহাসিক অস্ট্রেলিয়া-বধ যজ্ঞের দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ৩-৩১। বুধবার সচিনের নামের পাশে যে বোলিং হিসেব (২-১-৫-১) লেখা থাকল, ক্রিকেটের দাঁড়িপাল্লায় সেটা মাপতে বসা অর্থহীন। দু’ওভারের ওই ছোট্ট স্পেলটার প্রকৃত ওজন লুকিয়ে আছে গ্যালারির সমুদ্রগর্জনে, ইডেন-ফেরত হাজার চল্লিশেকের নিখাদ হাসিতে।

দিনের শুরু আর শেষ যদি হয় সচিন-ম্যানিয়া দিয়ে, তা হলে মধ্যিখানের সময়টা ছিল অন্য এক রূপকথার। যে রূপকথার নাম মহম্মদ সামি। ঘরের মাঠে জীবনের প্রথম টেস্টে চার-চারটে উইকেট— এমন রাজকীয় অভিষেক ১৯৯৬ লর্ডসের আগে বা পরে বাঙালি দেখেনি। অথচ সচিন-সুনামির ঢেউয়ে প্রায় ডুবে গিয়েছিল বাংলার পেসারের প্রথম কয়েকটা ওভার। ইডেনের মন্থর পিচ থেকে প্রথম দিকে সে ভাবে সাহায্যও পাননি সামি। প্রথম থেকেই কিপ করতে ধোনিকে অনেকটা কোমর ভাঙতে হচ্ছিল। ছবিটা ওল্টালো চল্লিশ ওভারের পর, দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। পরপর দু’ওভারে সামি তুলে নিলেন মার্লন স্যামুয়েলস আর দীনেশ রামদিনকে। যার পর গ্যালারির গর্জন ছিল ওই একজনকে ঘিরেই।
সামির পেস আর ক্যারিবিয়ান হারাকিরি— দুইয়ে মিলে লাঞ্চে ১০৭-২ থেকেও দেড়খানা সেশনের মধ্যে একশোরও কম রানে শেষ হয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস। তাতে অবশ্য এখনই সেলিব্রেট করার মতো কিছু দেখছে না ইডেন। সবে তো দশটা উইকেট পড়েছে।
মাহেন্দ্রক্ষণ এখনও দুটো উইকেট দূরে!

ওয়েস্ট ইন্ডিজ
গেইল ক বিজয় বো ভুবনেশ্বর ১৮
পাওয়েল ক ভুবনেশ্বর বো সামি ২৮
ব্রাভো রান আউট ২৩
স্যামুয়েলস বো সামি ৬৫
চন্দ্রপল বো অশ্বিন ৩৬
রামদিন বো সামি ৪
স্যামি ক ভুবনেশ্বর বো ওঝা ১৬
শিলিংফোর্ড এলবিডব্লু সচিন ৫
পারমল ক ও বো অশ্বিন ১৪
বেস্ট ন.আ ১৪
কটারেল বো সামি ০
অতিরিক্ত ১১
মোট ৭৮ ওভারে ২৩৪।
পতন: ৩৪, ৪৭, ১৩৮, ১৩৮, ১৪৩, ১৭২, ১৯২, ২১১, ২৩৩, ২৩৪।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ১৪-৬-৩৩-১, সামি ১৭-২-৭১-৪,
অশ্বিন ২১-৯-৫২-২, ওঝা ২৪-৬-৬২-১, সচিন ২-১-৫-১।

ভারত
ধবন ন.আ ২১
বিজয় ন.আ ১৬।
মোট ১২ ওভারে ৩৭।
বোলিং: বেস্ট ২-০-১৫-০, কটারেল ৫-২-১৩-০,
শিলিংফোর্ড ৪-২-৮-০, পারমল ১-০-১-০।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.