৪৮তম ওভারটা যখন শুরু হল, তখন থেকেই মনে হতে লাগল, ভারত ম্যাচটা জিতবে। কারণ, বোলারের নাম যে মহম্মদ সামি। একই ক্লাবের হয়ে মাঠে নামি আমরা। ও কী করতে পারে, তা খুব ভাল করেই জানি। যখন ওর বল আজমলের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে সোজা ধোনির গ্লাভসে ঢুকে পড়ল, তখন জয় নিয়ে আর কোনও সন্দেহ ছিল না। কারণ বিশ্বাস ছিল, সামি আবার ধাক্কা দেবে। নিজে আর উইকেট না নিলেও রান আউট একটা হল। সবচেয়ে বড় কথা সেই ওভারে সামি একটাও রান দেয়নি। ফলে পাকিস্তানের ওপর চাপটা মারাত্মক বেড়ে যায়।
বাংলার দুই পেসারকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে, সারা দেশের সংবাদমাধ্যমে বাংলার পেসারদের কথা লেখা হচ্ছে, দেখানো হচ্ছে, এমন ভাবতেই দারুণ লাগছে। অশোক দিন্দা তো নিজেকে প্রমাণ করেছেই। এ বার স্পট লাইটে চলে এল মহম্মদ সামিও। বাংলার ক্রিকেটে এমন সুদিন বড় একটা আসে না।
একেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। তার উপর ফিরোজ শাহ কোটলার গ্যালারিতে উপচে পড়া জনতা। আবার তুমুল ঠান্ডা, যে আবহাওয়ায় সাত-আট ঘন্টা মাঠে থেকে ক্রিকেট খেলাটা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। গোটা ভারতীয় দলটা প্রচন্ড চাপের মধ্যে। এই অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রেখে সামি যে কাজটা করে গেল, তাতে ওর সতীর্থ হিসাবে সত্যিই আমার দারুণ গর্ব হচ্ছে। |
কোটলায় সামি। ছবি:শঙ্কর নাগ দাস
|
সামিকে দেখে মনেই হল না জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে। আমার ক্লাবেরই ছেলে সামি। শনিবার রাতেই ফোনে কথা হয় ওর সঙ্গে। তখনই ইঙ্গিত ছিল, এগারোয় থাকতে পারে। ওকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলি, ‘নিজেকে উজাড় করে দিস। বাংলার সম্মানও এখন তোর হাতে।’ ও কথা রেখেছে।
সামির বড় গুণ হল, চাপের প্রভাবটা নিজের খেলায় একদম পড়তে দেয় না। জানি, তুলনাটা আসে না, তবু বলব ঘরোয়া ক্রিকেটেও ওর এই গুণটা আমাদের ম্যাচ জিততে সাহায্য করেছে অনেক বার।
এই তো সে দিন জে সি মুখোপাধ্যায় ট্রফির সেমিফাইনালে ভবানীপুরের বিরুদ্ধে এমনই পরিস্থিতি সামলে নিয়ে ম্যাচটা জিতিয়ে দিল। বিজয় হাজারে ট্রফিতেও ওর এই গুনটা দলকে জিততে সাহায্য করে। সব পাওয়ার প্লে-তেই ওকে বল দেওয়া হত। যে কোনও ‘ক্রাইসিস’-এর সময় ওকে ডাকা হত বল করার জন্য। ক্রিকেটের লেভেলটা যা-ই হোক না কেন, যে এক ধরনের ক্রিকেটে চাপ সামলাতে পারে, সে কিন্তু সব ধরনের ক্রিকেটেই পারবে। সামি-ই সেটা আর একবার বুঝিয়ে দিল।
তাই রবিবার খেলা শুরুর আগে যখন দেখলাম, ও এগারোয় আছে, তখনই জানতাম, জাতীয় দলে খেলার চাপটাও ও সামলে নেবে। এ ছাড়াও সামির আর একটা বড় গুণ আছে। যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারা। এ দিন কোটলায় যেটা করতে পারল।
শুধু ব্যাটিংয়ে নয়, বোলিংয়েও পার্টনারশিপ দরকার হয়, দু’দিক থেকেই একে অপরের পরিপূরক হয়ে বল করলে সেই পার্টনারশিপটা দাঁড়িয়ে যায়। রবিবারও আমরা এ রকম একটা সফল জুটি দেখলাম। ভুবনেশ্বর-সামি। ভুবি যখন একদিক থেকে উইকেট নিচ্ছে, তখন অন্য দিক থেকে ব্যাটসম্যানদের কম রানে বেঁধে রাখার কাজটা করছিল সামি। দু’জনের এই বোলিং পার্টনারশিপটাই ক্রমশ পাক ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিল।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে সামি ও দিন্দাদুজনকেই আশা করছি প্রথম এগারোয় দেখতে পাব। বাংলার দুই পেসারের যা পারফরম্যান্স, এমনটাই হওয়া উচিত।
|
এক নজরে |
• উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে বেড়ে ওঠা।
• কলকাতায় আসেন ২০০৫-’০৬ মরসুমে।
• প্রথম ক্লাব ডালহৌসি। তারপর টাউন। বর্তমানে মোহনবাগান।
• মোরাদাবাদে একটা সময় রোজ একুশ-একুশ বিয়াল্লিশ কিলোমিটাযাতায়াত করতেন ক্রিকেট খেলার জন্য।
• ডেল স্টেইনের অন্ধ ভক্ত।
• লক্ষ্মীরতন শুক্লর নজরে পড়ে অনূর্ধ্ব-২২ দলে সুযোগ। সামিকে নেটে দেখে লক্ষ্মীই সওয়াল করেন তখনকার বাংলা নির্বাচক প্রধান সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
• ২০১০-এ বাংলার হয়ে রঞ্জি অভিষেকে তিন উইকেট।
• রঞ্জিতে এ মরসুমে ৫ ম্যাচে ২৮ উইকেট এবং ডাক ভারতীয় দলে। |
|