দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে পুলিশি হেফাজতের আসামীর মৃত্যুর ঘটনা জেলায় গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।
রবিবার সকালে করিম গাজি (৩৫) নামে এক ব্যাক্তিকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করে কুলতলি থানার পুলিশ। থানায় আনার পর বুকে ব্যাথা বলে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। পৌনে ১১টা নাগাদ তাঁকে স্থানীয় জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালে (জামতলা) নিয়ে যাওয়া হয়। অম্বলজনিত কারণে বুকে ব্যাথা হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা ওষুধ দেন। একটি ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। থানায় ফিরে আসার পর ঘন্টা দুয়েক পরে ফের বুকে ব্যাথা অনুভব করে করিম। বেলা তিনটে নাগাদ তাকে ফেল জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আরেক জন চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করেন। করিমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে জানান ওই চিকিৎসক। স্যালাইনের ব্যবস্থা করেন তিনি। তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিকটতম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেন ওই চিকিৎসক। অ্যাম্বুল্যান্সে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে করিমের মৃত্যু হয়। জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক করিমকে দেখেছিলেন। সে ক্ষেত্রে সঠিক সময় তার রোগ নির্ণয় করার বিষয়ে গাফিলতি হয়েছিল কি না সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। আর সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে গ্রামীণ হাসপাতালে সুচিকিৎসার জন্য উপযুক্ত পরিষেবার পরিকাঠামো কতটা মজবুত?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ হাসপাতালগুলি হয় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক নয়তো সুপারের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতালে ইসিজি ও পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে করিমকে বুকের ব্যাথা জন্য শুধুমাত্র অম্বলের ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কোনওরকম পরীক্ষা করা হয়েছিল কি না প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, পুলিশি অথবা জেল হেফাজতে কোনও বন্দি অসুস্থ হলে সব রকম খুঁটিনাটি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। সে ক্ষেত্রে জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালে করিমের কোনওরকম পরীক্ষা করা হয়েছিল কি না সেই প্রশ্ন উঠছে। দ্বিতীয় দফায় স্যালাইন দিয়ে অচৈতন্য অবস্থায় করিমকে অ্যাম্বুল্যান্সে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ হেফাজতের কোনও বন্দিকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সুপারিশ করা হলে হাসপাতালের কোনও চিকিৎসকে সঙ্গে থাকতে হয়। এটাই নিয়ম। যদিও ওই দিন রুদ্রনগর হাসপাতালের তরফে কোনও চিকিৎসক করিমের সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সে ছিলেন না বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ৯টি গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে। সাগরের রুদ্রনগর, লক্ষ্মীকান্তপুর, পাথরপ্রতিমা, ফলতা, সোনারপুর, পদ্মেরহাট, আমতলা, মুচিশা, ও ভাঙড়ের নলমুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতালেই ইসিজি ও পোর্টেবল এক্স- রে মেশিন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পুলিশ হেফাজতে থাকা বন্দির বুকে ব্যাথা হওয়া সত্ত্বেও ইসিজি ও এক্স-রে কেন করা হল না সে প্রশ্ন উঠেছে। জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম মালাকার বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোনও চিকিৎসার গাফিলতির কোনও কোনও নিদিষ্ট অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে ওই হাসপাতালে করিমের কী চিকিৎসা হয়েছে। তাঁর রিপোর্ট আমরা খতিয়ে দেখব।”
জেলা পুলিশের এককর্তা বলেন, “ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা হাসপাতালের চিকিৎসার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছি। মৃতের ময়না তদন্তের পর আমরা প্রয়োজনে নিদিষ্ট অভিযোগও দায়ের করতে পারি।” ওই কর্তার কথায়, করিমের চিকিৎসার সব রকম রিপোর্ট নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
হাসপাতালে বন্দি মৃত্যুর ঘটনার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের পাশাপাশি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তরুণ রায়ও চিকিৎসার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন। |