টানা তিন দিন নীল আলোয় সাজবে কলকাতার বিড়লা প্ল্যানেটরিয়াম। কোনও উৎসবের জন্য নয়, মানুষকে ডায়াবেটিস রোগের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করতে। ক্রমশ মহামারির রূপ নিতে চলা ডায়াবেটিস সম্পর্কে সকলকে সজাগ করতে ‘ব্লু মনুমেন্ট চ্যালেঞ্জ’ প্রচলিত গোটা বিশ্বেই। এই অসুখের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয় নীল রং। সচেতনতা অভিযানের অঙ্গ হিসেবে নানা দেশের বিখ্যাত অভিজ্ঞানগুলিকে সাজানো হয় সেই রঙে। এতে এ বার সামিল হচ্ছে কলকাতাও। ডায়াবেটিস চিকিৎসকদের সংগঠন ‘রিসার্চ সোসাইটি ফর দ্য স্টাডি অফ ডায়াবেটিস ইন ইন্ডিয়া’-র কলকাতা শাখা উদ্যোগী হয়েছে এই সচেতনতা প্রক্রিয়ায়।
১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এই উপলক্ষে ১৩ থেকে ১৫ নভেম্বর ডায়াবেটিস সচেতনতা কর্মসূচিতে ‘মধুমেহ মেলা’ হবে নেতাজি ইন্ডোরে। মেলার উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। আয়োজকেরা জানান, সেখানে নিখরচায় রক্তে শর্করার পরিমাণ মাপা থেকে শুরু করে রক্তচাপ, শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কতটা, এ সব পরীক্ষা করা হবে। থাকবে ইসিজি এবং চোখ-পরীক্ষার ব্যবস্থাও।
মেলায় থাকবেন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বলে দেবেন এই রোগে আক্রান্তেরা কী ভাবে চোখ, কিডনি ও পায়ের যত্ন নেবেন (কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের এই অঙ্গগুলি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে), জীবনযাপন কেমন হওয়া দরকার, কী খাওয়া ভাল বা মন্দ। থাকবে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা ও আলোচনার সুযোগ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষ যোগব্যায়ামও শিখে নেওয়া যাবে। ১৪ নভেম্বর সকাল ৯টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের উত্তর গেট থেকে ডায়াবেটিস সচেতনতায় পদযাত্রাও হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীতে ভারত দ্বিতীয়, চিনের পরেই। এই মুহূর্তে ভারতে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি ডায়াবেটিক মানুষ রয়েছেন। ২০৩০-এর মধ্যে তা ১০ কোটিতে পৌঁছবে। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের ৪-৭ জন এ রোগে আক্রান্ত। কলকাতায় পরিসংখ্যানটা প্রতি ১০০ জনে ১২, বর্ধমানে ৯, হাওড়ায় প্রায় ১৪। শুভঙ্কর চৌধুরী, অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের মতো ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞেরা জানান, এখনও ভারতে যত লোকের ডায়াবেটিস হয় তাঁদের ৫০% জানতেই পারেন না। যাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের ৫০ শতাংশ চিকিৎসায় আগ্রহ দেখান না বা মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দেন। কারণ প্রথম-প্রথম ডায়াবেটিস বিশেষ কোনও অসুবিধে সৃষ্টি করে না। যখন তাঁরা টের পান তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। হয়তো তত দিনে তাঁদের চোখ বা কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের সমস্যা, হৃদরোগও হতে পারে। |