পানীয় জলে সংক্রমণের কারণে বিধাননগরের এক সরকারি আবাসনে প্রায় ৭০ জন পেটের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, টানা কয়েক দিন বৃষ্টির পর কোনও ভাবে পানীয় জলের লাইনের সঙ্গে নোংরা জলের সংক্রমণ থেকেই ওই বিপত্তি ফাল্গুনী আবাসনে। অসুস্থ কয়েক জনকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। কালীপুজোর সময় ওই ঘটনা হওয়ায় অনেকেই বিষয়টি জানতে পারেননি। সোমবার বিষয়টি জানাজানি হতেই তৎপরতা শুরু হয় প্রশাসনের। বিষয়টি কানে যায় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমেরও। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন নগরোন্নয়ন দফতরকে।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা ফাল্গুনী আবাসন কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক অসিত ভট্টাচার্য জানান, কালীপুজোর আগের দিন থেকে আবাসনের বেশ কয়েক জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৩ নম্বর বিল্ডিংয়ের এক মহিলার কথায়, “কালীপুজোর দিন সকাল থেকেই পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে থাকে। সঙ্গে পায়খানা।” এ ভাবেই আবাসনের প্রায় ৭০ জন পেটের রোগে আক্রান্ত হতেই টনক নড়ে সকলেরই। |
পানীয় জলে সংক্রমণের খবর পেয়েই সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছন এসডিও সঞ্জয়কুমার দাস। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন নগরোন্নয়ন ও পুরসভার স্বাস্থ্য ও ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের কর্মীরা। আবাসনে যান পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী-সহ পুরসভা ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরা। যান স্থানীয় কাউন্সিলর তপন তালুকদারও।
গোটা ঘটনায় নগরোন্নয়ন দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ নিয়মিত হয় না। তাঁদের দাবি, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সি আদৌ ঠিক ঠাক কাজ করেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, অনেক জায়গায় পাইপ ফাটা, ওভারহেড ট্যাঙ্কের ঢাকনা খোলা থাকলেও প্রশাসন উদাসীন। দাবি মানতে নারাজ নগরোন্নয়ন দফতর। তাঁদের একাংশের দাবি, সম্প্রতি ওভারহেড ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা হয়েছে।
ওই আবাসন দেখভালের দায়িত্বে নগরোন্নয়ন দফতর। মূলত পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ জল তুলেই ওই আবাসনে দেওয়া হয়। সেই জল পাইপের মাধ্যমে মাটির নীচে চারটি ছোট ছোট জলাধারে রাখা হয়। পরে তা পাম্পের সাহায্যে ছাদের উপরে পাঠানো হয়। জলের ট্যাঙ্ক ও মাটির নীচের জলাধার পরিষ্কার করার কাজ নগরোন্নয়ন দফতরই এজেন্সিকে দিয়ে করায়। মাটির নীচে একটি জলাধার পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখা যায় পলি জমে রয়েছে। দেখে চেয়ারপার্সন ও মহকুমাশাসক বকাঝকাও করেন ওই কাজের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। কৃষ্ণাদেবী বলেন, “পুরো পরিস্থিতি নিয়ে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁকে বলেছি, ওই আবাসন দেখভালের দায়িত্ব পুরসভার হাতে এলে ভাল হয়।” |
মন্ত্রী বলেন, “এ বারের ভারী বর্ষার পরে জলের গুণমান ঠিক রাখতে যা করার দরকার ছিল, সম্ভবত তা হয়নি। পাইপে ছিদ্র বা রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটিও থাকতে পারে। দোষ প্রমাণিত হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধাননগর পুরসভাকে আপৎকালীন ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন।”
দিনভর এলাকা সাফ, ওভারহেড ট্যাঙ্ক ও রিজার্ভার সাফ করে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামলান বিধাননগর পুর ও মহকুমা প্রশাসনের কর্মীরা। নগরোন্নয়ন দফতরের ইঞ্জিনিয়াররাও ছিলেন।
যদিও সাফাই করতে গিয়ে গাঢ় লাল জলও বেরোতে দেখা গিয়েছে। নিয়মিত সাফাই হলে এমন জল বেরোনো সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার মহলেই।
তবে মঙ্গলবার সরকারি ছুটি। তাই বুধবারের আগে জল পরীক্ষা করা কতটা সম্ভব, অথবা দু’দিন বাদে জল পরীক্ষা করে আদৌও লাভ হবে কি না, তা নিয়েও দ্বিধায় প্রশাসনিক মহল। |