|
|
|
|
মৃত বেড়ে তিন, শোকের |
আঁধার নকশালবাড়ি জুড়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
অ্যাম্বুল্যান্সের ধাক্কায় দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রতি শোকজ্ঞাপন করে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১০ মিনিট অবধি নিস্প্রদীপ থাকল গোটা নকশালবাড়ি। এমনকী, স্থানীয় থানার আলোও ওই ১০ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা হয়। ৩৮টি কালীপুজোর মণ্ডপে বন্ধ রাখা হয় গানও। এ দিন দুপুরে থানায় এলাকার পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকের পর ওই সিদ্ধান্ত নেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। সেখানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ করা হয়। সন্ধ্যায় নকশালবাড়ি থানার ওসি দীপাঞ্জন দাস-সহ পুলিশ অফিসার, ক্লাবের উদ্যোক্তারা এলাকায় জড়ো হয়ে শোকজ্ঞাপন করেন।
এ দিন সকাল থেকে বাজারখোলা থাকলেও পরিস্থিতি ছিল থমথমে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে জখমদের দেখতে স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় করেন। তবে এ দিন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ সূত্রের খবর, একটি দুর্ঘটনা এবং অ্যাম্বুল্যান্স পোড়ানো, দমকল ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে তাতে নির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ করা নেই। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত চলছে।” |
|
আগুনে পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্স। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
প্রাথমিক তদন্তের পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার সময় অ্যাম্বুল্যান্সটিতে কোনও রোগী ছিল না। তার আগে চালক সুধীর লাকড়া ত্রিহানা চা বাগানের মোহরলাল ডিভিশনের স্থায়ী শ্রমিক অনিতা তামাঙ্গের গর্ভবতী পুত্রবধূ মনীশা তামাঙ্গকে নিয়ে নকশালবাড়ি হাসপাতালে গিয়েছিল। সেখান থেকে চালক একাই স্টেশনপাড়ার রাস্তা দিয়ে কোথাও, কী উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল তা পরিস্কার নয়। ওই রাতেই চালককে উত্তেজিত বাসিন্দাদের হাত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করায়। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, সুধীর লাকড়া সুস্থ হলেই তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ত্রিহানা বাগানের ম্যানেজার প্রদীপ ঘোষ বলেন, “আগামী ৭ নভেম্বর অবধি বাগান ছুটি রয়েছে। কিছু আপৎকালীন পরিষেবা চালু রয়েছে। রাতে ওই প্রসূতি মহিলাকে হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্সটি করে পাঠানো হয়েছিল। তার পরে চালক ঠিক কী করছিল তা বলতে পারছি না। পুলিশি তদন্তে নিশ্চয়ই বিষয়টি পরিস্কার হবে।”
রবিবার রাতে নকশালবাড়ি স্টেশনপাড়ার ঘটনার পর রাতেই দুই মহিলার মৃত্যু হয়। সোমবার দুপুরে মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে মারা গিয়েছেন নকশালবাড়ির বাসিন্দা ভানু রায় (৩৫)। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। উল্লেখ্য, রবিবার ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু ৩৫ জন জখম হতেই পুলিশের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার কার্যত খন্ডযুদ্ধ হয়। ঘাতক অ্যাম্বুল্যান্সটিকে পুড়িয়ে দেওয়া, পুলিশ কর্মীদের লক্ষ্য করে ইঁট, পাথর বৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ। সেই সময় এলাকার কিছু দোকানপাটও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ।
এদিন মেডিক্যাল কলেজে জখমদের দেখতে যান সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, জেলার কার্যনির্বাহী সাধারণ সম্পাদক জীবেশ সরকার। অশোকবাবু বলেন, “ঘটনার জন্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা দায়ী। ভিড় সামলাতে ওই এলাকায় কোনও ট্রাফিক পুলিশ ছিল না। কিছু এনসিসি’র যুবককে দিয়ে ট্রাফিকের কাজ করানো হচ্ছিল।”
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, বুড়াগঞ্জের খয়েরমণির বাসিন্দা জখম মনসা সিংহ নামে এক কিশোরীর অবস্থা সঙ্কটজনক। তাকে আইসিসিইউ-তে রাখা হয়েছে। মনসার বাবা ধরেন সিংহ জানান, ১৩ জন মিলে পুজো দেখতে বার হই। ৯ জনই জখম হয়েছে। স্ত্রী সুমিত্রাকে খালি ছাড়া রয়েছে। বাকিরা চিকিৎসাধীন। মেডিক্যাল কলেজে জখম ২৩ জন ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭ জন মহিলা ও ১৪ জন পুরুষ। জখম বিশু প্রসাদ নামে এক ব্যক্তির মাথায় চোট রয়েছে। তাঁকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। তাঁর স্ত্রী কিরণ দেবী বলেন, “কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসার করনোর সঙ্গতি নেই। কী করব জানি না।” |
|
|
|
|
|