দক্ষিণবঙ্গের দরজায় কড়া নাড়ছে উত্তুরে হাওয়া। অথচ অদ্ভুত এক মেঘ হয়ে উঠেছে তার পথের কাঁটা।
মাঝ-কার্তিকেও মেঘ কেন? তা হলে কি বঙ্গোপসাগরে ফের কোনও নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে? স্কুল খোলার মুখে আবার কি দুর্যোগ ঘনিয়ে আসতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে? নতুন আশঙ্কায় মন ফের মেঘলা হয়ে উঠছে। তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আকাশ মেঘলা থাকার কারণ মেঘ নয়। দিনের অধিকাংশ সময়েই সূর্য যে ঢাকা পড়ে থাকছে, তার জন্য কোনও আবহাওয়াজনিত কারণকে বিশেষ দায়ী করা যায় না। তা হলে?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে অত্যধিক বৃষ্টি হয়েছে। তাই প্রচুর পরিমাণে জলকণা রয়ে গিয়েছে বাতাসে। মৌসুমি বায়ু বিদায় নেওয়ায় এবং পরিমণ্ডলে আপাতত কোনও ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ না-থাকায় সেই জলকণা মেঘ তৈরি করতে পারছে না, বৃষ্টিও নামাতে পারছে না। কিন্তু রাতে তাপমাত্রা নামতেই সেই জলকণা ভারী হয়ে নেমে আসছে নীচের দিকে। তৈরি হচ্ছে কুয়াশা। আর সেই কুয়াশার জন্য বাজির বিষ-ধোঁয়া উঠতে পারছে না উপরে। তা ধাক্কা খাচ্ছে, মিশে যাচ্ছে কুয়াশার আবরণের সঙ্গে। তৈরি হচ্ছে মোটা চাদর। সেটাই থেকে যাচ্ছে দিনভর। এই ধোঁয়াশাই অদ্ভুত এক মেঘের চেহারা নিয়েছে।
এই অবস্থায় উত্তুরে হাওয়া দক্ষিণবঙ্গের দরজায় পৌঁছেও কুয়াশা আর বাজির ধোঁয়ার মোটা চাদরে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাচ্ছে। এক আবহবিদের কথায়, “মাঝেমধ্যে ওই চাদর সরে গেলে সেই ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ছে উত্তুরে হাওয়া। শীত-শীত ভাবটা টের পাওয়া যাচ্ছে।” রাতের বেলা তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। কারণ, আকাশ বেশি পরিষ্কার থাকায় উত্তুরে হাওয়া বেশি করে ঢুকতে থাকে পরিমণ্ডলে। কিন্তু এখন যে-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে রাতের বেলা উত্তুরে হাওয়া কোনও ভাবেই পরিমণ্ডলে ঢুকতে পারছে না। রাতের তাপমাত্রা তুলনায় বেশি থেকে যাচ্ছে। অস্বস্তি বাড়ছে মানুষের। |
বছরের এই সময়টায় শীত-শীত ভাব এসে যাওয়ায় রোগজীবাণুর সক্রিয়তা কমে যায়। কমতে থাকে জীবাণুবাহক মশা-মাছির সংখ্যাও। তাই বর্ষা, শরতের পরে হেমন্ত আসায় বিভিন্ন সংক্রামক রোগের হার কমতে থাকে। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি উল্টো। সদ্য শেষ হওয়া মরসুমের অতিরিক্ত বৃষ্টি বাতাসে অত্যধিক জলীয় বাষ্প ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছে। এবং তার অনেকটাই রয়ে গিয়েছে এখনও।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “উত্তর ভারতে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। সেখান থেকে উত্তুরে হাওয়া ঝাড়খণ্ড হয়ে পৌঁছে গিয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু বাতাসে ধোঁয়াশার চাদর সরিয়ে তা পরিমণ্ডলে ঢুকতে পারছে না। তাই কার্তিকের এই সময়টায় রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যা থাকার কথা, তার থেকে তাপমাত্রা থাকছে অনেকটা বেশি।”
কবে শীতের পথ খুলবে?
গোকুলবাবু জানান, কালীপুজোর ভাসানের প্রক্রিয়া শেষ হলে বাজির দাপট কমবে। পরিষ্কার হতে শুরু করবে আকাশ। বাতাসে জলীয় বাষ্প কমে আসবে। টান ধরবে চামড়ায়। তবে উত্তর ভারত থেকে আসা প্রথম দফার উত্তুরে হাওয়া তত দিনে বিদায় নেবে। নতুন দফায় উত্তর ভারতের তীব্র উত্তুরে হাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বেশ কয়েক দিন। আবহবিদেরা বলছেন, ঋতু বদলের এই সময়টায় আবহাওয়া কিছুটা অস্থির থাকে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কখন কী ভাবে উত্তর ভারতে ঢুকছে, তাপমাত্রার ওঠানামা নির্ভর করে তার উপরে। জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে তাপমাত্রা স্থিতিশীল হলে উত্তুরে হাওয়ার তীব্রতা বাড়বে। তার পরেই শীত পড়বে পশ্চিমবঙ্গে।
মাস দেড়েকের আগে সেই পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। নভেম্বরের গোড়ায় যে শীত-শীত ভাবটা থাকে, তা কবে ফিরবে, এখন সেই অঙ্কই কষছেন আবহবিদেরা। |