পঞ্চায়েত পদাধিকারীদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব রাজ্য অর্থ দফতরকে দেবে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েতে পদাধিকারীদের কাজের চাপ বেড়েছে। সেই তুলনায় তাঁদের ভাতা বেশ কম। তা বাড়াতে অর্থ দফতরের কাছে প্রস্তাব দেব। অর্থের সংস্থান হলে পদাধিকারীদের ভাতা বাড়ানো যেতেই পারে।”
ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ১৪টি পদকে পূর্ণ সময়ের বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলি হল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং সহকারী সভাধিপতি, জেলা পরিষদের ৮ কর্মাধ্যক্ষ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপ-প্রধান। এই সব পদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অন্য কোনও সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করতে পারেন না। তাঁদের প্রতিদিন দফতরে আসতেও হয়। পূর্ণ সময় কাজ করতে হয় বলে তাঁদের নির্দিষ্ট হারে ভাতা দেওয়া হয়। জেলা সভাধিপতি ও সহ সভাধিপতির মাসিক ভাতা যথাক্রমে ৫,১০০ ও ৩৫০০ টাকা। কর্মাধ্যক্ষেরা পান ৩০০০ টাকা করে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি পেয়ে থাকেন যথাক্রমে ২৮০০ এবং ২৫০০ টাকা করে। অন্যদিকে, পঞ্চায়েত প্রধান আর উপ-প্রধানের মাসিক ভাতা যথাক্রমে ২২৫০ ও ১৫০০ টাকা। |
এ বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে সদ্য নির্বাচিত পদাধিকারীদের একটি বড় অংশ ভাতা বাড়ানোর জন্য দাবি করে আসছেন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাঁরা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের কাছেই এই দাবি জানাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ব্লকে উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকেও ভাতা বাড়ানোর প্রসঙ্গটি তুলতে ছাড়ছেন না সদ্য নির্বাচিত বিভিন্ন স্তরের পদাধিকারীরা। তাঁদের যুক্তি, গ্রামোন্নয়ণমূলক প্রকল্পের সিংহভাগ পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কাজের চাপে পদাধিকারীদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। পদাধিকারীদের একাংশের আরও বক্তব্য, বিধায়কেরাও তো নির্বাচিত জন প্রতিনিধি। তাঁদের ভাতা বিভিন্ন সময়ে সরকার বাড়িয়ে চলেছে।
এক সভাধিপতি বলেন, “আমাদের পদটি প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর তুলনায় আমরা ভাতা কতটুকু পাই?” পঞ্চায়েতের এক উপ-প্রধানের কথায়, “আমি গৃহশিক্ষকতা করি। এই পদে নির্বাচিত হয়ে কাজের চাপে পড়ানো লাটে উঠে রোজগার বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অথচ আমার ভাতা মাত্র দেড় হাজার টাকা। সংসার চলবে কী ভাবে, বলতে পারেন?”
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, ভাতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান কী ভাবে হবে। বস্তুত, সেই কারণে সুব্রতবাবু রাজ্য অর্থ দফতরের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাঁর কথায়, “কতটা ভাতা বাড়ানো যায় তার রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। তা চূড়ান্ত হলে প্রস্তাবাকারে অর্থ দফতরে পাঠানো হবে। তাদের ছাড়পত্র পেলে প্রস্তাব রাজ্য মন্ত্রিসভায় পেশ করা হবে।”
পদাধিকারীদের ভাতা বাড়ানোর দাবি অবশ্য নতুন নয়। বাম আমলেও ২০০৮ সালের শেষের দিকে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেছিল। সেই প্রস্তাবে শুধু পদাধিকারীদের ভাতা বাড়ানোই নয়, পঞ্চায়েতের সাধারণ সদস্যদের ভাতাবৃদ্ধির প্রস্তাবও রাখা হয়েছিল। বর্তমানে একজন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মাসে একবার সাধারণ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য ১০০ টাকা করে ভ্রমণ ভাতা পেয়ে থাকেন। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা বাড়িয়ে যেন অন্তত ৫০০ টাকা করা হয়।
দফতর সূত্রের খবর, এই কাজ সমাজসেবামূলক, এই যুক্তিতে প্রস্তাবটি খারিজ করে দেন তৎকালীন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র। যদিও সূর্যকান্তবাবুর বক্তব্য, “এই ধরনের কোনও প্রস্তাব আমাকে দেওয়া হয়েছিল কি না বলতে পারব না। আমরা পঞ্চায়েতের পদাধিকারীদের ভাতা বাড়ানোর বিপক্ষে কখনওই ছিলাম না।” সূর্যকান্তবাবু নিজেও এক সময়ে অবিভক্ত মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি ছিলেন। সে বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রথমের দিকে পদাধিকারীদের ভাতা খুবই অল্প ছিল। আমি নিজেই সভাধিপতি হিসাবে মাত্র সাড়ে চারশো টাকা পেতাম। ধাপে ধাপে আমরা তা বাড়াই। সভাপতিপতির পদকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিই।” একই সঙ্গে তিনি জানান, বর্তমান সরকার মন্ত্রীদের ভাতা যে হারে বাড়িয়েছে, তাঁরা তার বিরোধী। সম্মানজনকভাবে বাঁচার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, সেই হারে ভাতা দিতেই হবে। বামেরা সেই ব্যবস্থা করেই গিয়েছে বলে তাঁর দাবি।
বর্তমান পঞ্চায়েতমন্ত্রী আবার বলেন, “পদাধিকারীরা যে হারে ভাতা পান এবং যে পরিমাণ কাজ তাঁদের করতে হয়, তাতে দু’গুণ, তিন গুণ ভাতা বাড়ালেও তা কম বলেই মনে হবে। এক জন পার্শ্বশিক্ষকও জেলা-সভাধিপতির তুলনায় অনেক বেশি বেতন পান।” তবে, ভাতা বাড়ানোয় কিছু সমস্যার কথাও তিনি জানিয়েছেন। এ জন্য পঞ্চায়েত আইনকেই প্রধান প্রতিবন্ধক বলে মনে করেন তিনি। সুব্রতবাবুর কথায়, “পঞ্চায়েত আইনে সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী পদাধিকারীদের কাজটি এমন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার অর্থ দাঁড়ায় কাজটি দেশসেবামূলক। সেই ধারণার অনুসারী হয়েই কেন্দ্র পদাধিকারীদের ভাতা বাবদ সে ভাবে অর্থ বরাদ্দ করেনি।”
|
মাসিক ভাতা |
স্তর: জেলা পরিষদ |
স্তর: পঞ্চায়েত সমিতি |
স্তর: গ্রাম পঞ্চায়েত |
• সভাধিপতি: ৫১০০
• সহকারি সভাধিপতি: ৩৫০০
• কর্মাধ্যক্ষ ৩০০০ |
• সভাপতি: ২৮০০
• সহ-সভাপতি: ২৫০০ |
• প্রধান: ২২৫০
• উপ-প্রধান: ১৫০০ |
|