বরাতে বিলম্ব, ফস্কে যেতে
পারে ১৭০ কোটি
ক্ষ্মী হাতে এসেও হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম! কারণ, তিন বছরেও পুরো কাজের বরাত দিয়ে উঠতে পারেনি রাজ্য সরকার।
পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্যকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হিসেবে তিনশো কোটি টাকা দিতে রাজি হয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। সে ২০১০ সালের কথা। শর্ত ছিল, ওই সুসংহত উপকূল পরিচালন (আইসিজেডএম) প্রকল্পটি রূপায়ণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে বরাত দেওয়ার কাজ সেরে ফেলতে হবে ২০১৩-র ডিসেম্বরের মধ্যে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০১৫।
কিন্তু রাজ্য প্রশাসন-সূত্রের খবর, এই তিন বছরে সাকুল্যে ১২২ কোটি টাকার কাজের বরাত দিতে পেরেছে রাজ্য। হাতে রয়েছে মোটে এক মাস। শর্ত মেনে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো বরাত মঞ্জুর না-হলে অন্তত ১৭০ কোটি অধরা থেকে যাবে। এবং পরিস্থিতি যা, তাতে এত অল্প সময়ে তা হওয়া কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছেন সরকারি কর্তাদের সিংহভাগ। তাঁদের মতে, টাকাটা হাতছাড়া হওয়া এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
বস্তুত মাস দুয়েক আগে এই কথাটাই সরকারকে চিঠি দিয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিশ্বব্যাঙ্কের এক কর্তা। প্রকল্পের অগ্রগতি যাচাই করতে গত জুনে বিশ্বব্যাঙ্কের বিশেষজ্ঞ দল রাজ্যে এসেছিল। তারা ফিরে যাওয়ার পরে এ দেশে বিশ্বব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকর্তা ওন্নো রাল গত ২৭ অগস্ট রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠিতে জানিয়ে দেন, বাকি সব কাজের (স্কিম) বরাত ডিসেম্বরের মধ্যে দেওয়া না-হলে প্রকল্প থেকে সংশ্লিষ্ট অংশ বাদ পড়বে। ‘যে ভাবে সব চলছে, তাতে সময়ে কাজ শেষ হওয়াটা অনিশ্চিত। প্রকল্পকে টেনে তুলতে হলে এখনই রাজ্যের প্রকল্প রূপায়ণ শাখাকে দ্রুত কাজে নামতে হবে। অন্যথায় প্রয়াস মাঠে মারা যাবে।’ লিখেছেন বিশ্বব্যাঙ্ক আধিকারিক।
আইসিজেডএম বাস্তবায়নের ভার যাদের, রাজ্যের সেই পরিবেশ দফতর-সূত্রের খবর, গুজরাত-ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গে উপকূলবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ২০১০-এ মোট ১৩৩০ কোটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ মঞ্জুর করেছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। পশ্চিমবঙ্গের ভাগে পড়েছে ৩০০ কোটি। নিকাশি, শৌচাগার, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, ম্যানগ্রোভ বনসৃজন, সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ ও আবহাওয়া-সতর্কতার মতো বেশ কিছু বিষয় রয়েছে প্রকল্পের আওতায়। পশ্চিমবঙ্গে মূলত পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার উপকূলে এটি রূপায়িত হওয়ার কথা।
২০১০-এর মে মাসে আইসিজেডএম প্রকল্প এ রাজ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করলেও পরিকল্পনামাফিক অর্থ খরচের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘ঢিলেমি’ দেখে কিছুটা বিস্মিতই হয়েছেন বিশ্বব্যাঙ্কের লোকজন। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্বব্যাঙ্কের সিনিয়র পরিবেশ-বিশেষজ্ঞ তাপস পালের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘা ও সাগরে গিয়ে বিবিধ উন্নয়ন উদ্যোগের তদারকি করছেন। তিনি চাইছেন, পশ্চিমবঙ্গে আইসিজেডএম প্রকল্প ঠিকঠাক হোক। আমরা ৪৫ বছরের জন্য বিনা সুদে ঋণ মঞ্জুর করেছি। তবু এখানে এই অবস্থা আশ্চর্যের।” তাপসবাবুর দাবি, ওড়িশা ও গুজরাত ইতিমধ্যে ১০০ কোটি করে খরচ করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, আগামী ছ’মাসে তারা আরও একশো কোটি খরচের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। উপরন্তু তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি এ বাবদ বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে টাকা চেয়েছে।
এমতাবস্থায় ডিসেম্বরের মধ্যে বরাত সম্পূর্ণ না-হলে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ অর্থ অন্য রাজ্যকে দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাপসবাবু। ওড়িশা বা গুজরাত যা পারল, পশ্চিমবঙ্গ তা পারল না কেন?
প্রশাসনের কর্তারা উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার অবশ্য আশাবাদী। সরকারের ব্যর্থতা মেনে নিয়েও তাঁর দৃঢ় ধারণা, শর্তমতো বরাত দেওয়া যাবে। সোমবার তিনি বলেন, “প্রকল্পটি করতে হবে বিভিন্ন দফতরে সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে। তাতেই দেরি হয়েছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি টাকার বরাত দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।” যদিও এক পরিবেশ-কর্তার বক্তব্য: ১৭০ কোটি টাকায় ৭৫টি স্কিমের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করে বরাত দিয়ে দিতে বলেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। অগস্টে সেই বার্তা এলেও বাস্তবে প্রক্রিয়া সে ভাবে এগোয়নি। “মনে হয় না, ডিসেম্বরের মধ্যে বরাতদান শেষ করা যাবে।” মন্তব্য ওই কর্তার। তাঁর আশঙ্কা সত্যি হলে ইতিমধ্যে মঞ্জুর হওয়া ১৩০ কোটি টাকা (প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ বাবদ ১২২ কোটি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বাবদ ৮ কোটি) পেয়েই রাজ্যকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
দফতর-সূত্রে এ-ও জানা যাচ্ছে, আইসিজেডএমের প্রথম দফায় পাওয়া প্রায় ৮০ কোটির মধ্যে গত আড়াই বছরে পশ্চিমবঙ্গে খরচ হয়েছে বড়জোর ৪৫ কোটি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.