শিঙাড়া থেকে মাংসর ঝোল, ভাইফোঁটায় উধাও আলু
ভাইফোঁটার সকালে আজ ফুলকো লুচির সঙ্গে সাদা আলু-চচ্চড়ি নেই। মাংসের ঝোলেও নো আলু!
কেউ কেউ হয়তো আলু-চচ্চড়ির বদলে বেগুনভাজা, মাংসের বদলে চিংড়ি-ইলিশে ঝুঁকবেন। অগ্নিমূল্য, তবু গাঁটের কড়ি খরচ করলে বেগুন মিলবে, চিংড়ি মিলবে। কিন্তু আলু স্রেফ গায়েব।
সোমবার, ভাইফোঁটার আগের দিন শিলিগুড়ি থেকে সুন্দরবন ভায়া কলকাতা, মানুষ বাজারে-বাজারে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। যদি বা কোথাও আলু চোখে পড়ে, সে পাতে দেওয়ার নয়। সরকার দর বেঁধে দেওয়া ইস্তক দোকানিদের মেজাজ খিঁচিয়ে আছে। ঝেড়ে-বেছে নিতে গেলেই কড়া গলা ‘বাছবেন না, বাছবেন না। ও সব করলে বেশি লাগবে!’
সকাল ১০টা নাগাদ মানিকতলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আলুপট্টির প্রায় কোনও দোকানেই আলু নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, এ দিন জ্যোতি আলুর গাড়ি আসেনি। বাজারের বাইরে সরকার থেকে গাড়ি করে জ্যোতি আলু বিক্রি করেছে ১৩ টাকা কিলোয়। লাইন দিয়ে ক্রেতারা তা-ই কিনেছেন। তবে পাঁচ কিলোর বেশি কেনা যাবে না। শ্যামবাজার, গড়িয়াহাট বাজারেও একই ব্যবস্থা। জ্যোতি আলু কলেজ স্ট্রিটে ১৮ টাকা, লেক মার্কেটে ১৭ টাকা কিলো। শোভাবাজার জ্যোতি-হীন।
গায়েব জ্যোতি আলু। সোমবার মানিকতলা বাজারে স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
কোলে মার্কেটে পাইকারি বাজারে আলুর গুদাম ফাঁকা। ধর্মরাজ দাস নামে এক পাইকারি আলু ব্যবসায়ী বলেন, “গত দু’দিন ধরে তারকেশ্বর থেকে কোনও আলুর ট্রাক ঢোকেনি। যা আছে আগের স্টকের। সরকারের বেঁধে দেওয়া ১১ টাকা কিলোয় তা বিক্রি করা কার্যত অসম্ভব।”
তবে সব বাজারেই এ দিন রাঁচির নতুন আলুর দেখা মিলেছে। যাঁরা পেরেছেন, ৪০ টাকা কিলো দরে তা-ই কিনেছেন।
এই আকালে মহানগরের সঙ্গে ফারাক নেই পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকারও। পুরুলিয়া সদর থেকে শুরু করে আদ্রা, রঘুনাথপুর, কাশীপুরের বাজারে আলুর দেখা প্রায় মেলেইনি। যেটুকু মিলেছে, তা বিক্রি হয়েছে প্রায় ২০-২৫ টাকা কিলোয়। জেলায় আলুর চাষ প্রায় হয়ই না। গত দু’দিন ধরে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বর্ধমান থেকে আলু আসা প্রায় বন্ধ। সোমবারই মেদিনীপুর শহর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি গত পাঁচ দিন ধরে জেলায় কর্মবিরতি পালন করায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। ধৃতদের মধ্যে আড়তদার থেকে খুচরো বিক্রেতা, সব রকমই আছেন।
উত্তরবঙ্গের আর পাঁচটা জেলায় সরকারি আলু বিক্রির উদ্যোগ চোখে পড়লেও দার্জিলিঙের ছবিটা আলাদা। জ্যোতি আলু উধাও। রয়েছে শুধু ৩০ টাকা কেজির নতুন আলু। শিলিগুড়ির অবস্থাও তাই। মালদহে যতটুকু আলু পাওয়া যাচ্ছে তার বেশির ভাগই পচা ও কাটা। তা-ই ১৪-১৫ টাকা কিলোয় বিক্রি হচ্ছে। জেলাশাসকের সামনেই নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “আমার বাড়ির সামনে ১৬ টাকা কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে।”
জলপাইগুড়ির বাজারে স্থানীয় লাল আলু ২০ টাকা এবং সাদা আলু ১৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা নতুন আলু ৩০ টাকা এবং ভুটানের নতুন আলু ৩২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে আলু উৎপাদনের দুই অন্যতম প্রধান কেন্দ্র, ধূপগুড়ি ও ফালাকাটার ব্যবসায়ীরা জানান, মঙ্গলবার থেকেই সরকারি দরে তাঁরা আলু বিক্রি শুরু করবেন।
রাজ্যে আলু উৎপাদনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র বর্ধমানে অবশ্য অবস্থাটা ঈষৎ ভাল। সঙ্কট মেটাতে দু’টি হেল্পলাইন চালু করছে বর্ধমান জেলা প্রশাসন। সেখানে ফোন করে কোথায় অভাব রয়েছে, তা জানানো যাবে। অন্তত ২০০টি আলু বিক্রয় কেন্দ্র খুলতে জেলা কৃষি বিপণন দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও বর্ধমান শহরের বাজারেও নিম্নমানের আলু বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। হুগলিতেও ছবিটা অনেকটা একই। হাওড়ায় কিন্তু অভাবটা অনেক বেশি প্রকট। লুকিয়ে চুরিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেছেন কিছু ব্যবসায়ী। বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরে শিবির করে সরকারি দরে জ্যোতি আলু বিক্রি করা শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতিই। লম্বা লাইন পড়ছে।
এরই মধ্যে বাজার চষে ফেলতে দেখা গিয়েছে মিষ্টির দোকানের বাজারিদের। ভাইফোঁটার বিকেলে শিঙাড়া হবে কী দিয়ে?
সকালেই ভবানীপুরের এক মিষ্টির দোকানের কর্তা উদভ্রান্তের মতো ঘুরছিলেন। কিন্তু শিঙাড়া করার মতো ঠিকঠাক আলু আর মেলে না! দোকানের অন্যতম কর্ণধার সুদীপ মল্লিক বলেন, “ভাইফোঁটার দিনে আমাদের কয়েক হাজার শিঙাড়া তৈরি হয়। এ বার তো আলুই নেই। শিঙাড়ার পুর কী ভাবে হবে? সে যে তুবড়ির শুকনো খোল হয়ে যাবে মশাই!”
উত্তর কলকাতার একটি মিষ্টির দোকানে বহু দিন কাজ করছেন বিহার থেকে আসা এক কর্মী। গম্ভীর মুখের ভাঁজে চিলতে হাসি টেনে বললেন “বিহারমে লালু নেহি রহা, বঙ্গাল কা সমোসেমে আলু ভি নেহি রহা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.