বাঁকুড়ায় শুরু সরকারি মূল্যে আলু বিক্রি, চাহিদা তবু তুঙ্গে
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী বাঁকুড়ায় শিবির করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে জ্যোতি আলু বিক্রি করা শুরু করল ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’। সোমবার বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শহরে সমিতির উদ্যোগে এই ধরনের শিবির হয়। বাঁকুড়ার মাচানতলা চত্বরে পুরসভা ভবনের পাশেই আয়োজিত এই শিবিরে সকাল থেকেই ছিল আলু কেনার লম্বা লাইন। বয়স্ক থেকে খুদে, সবাই লাইন দিয়েছিলেন ১৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে। অনেকেই ব্যাগ ভর্তি করে আলু নিয়ে গিয়েছেন বাড়িতে।
সমিতির জেলা সভাপতি শান্তনু মান্না বলেন, “শুধু বাঁকুড়া শহরেই নয়, গোটা জেলার সব ক’টি ব্লকেই এই শিবির করার চিন্তা ভাবনা করছি আমরা।” সমিতি সূত্রের খবর, প্রথম দিনেই শিবির থেকে প্রায় ১৮ কুইন্টাল আলু বিক্রি হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার থেকে পুরসভা লাগোয়া ওই শিবিরটি-সহ শহরের চকবাজার, পুলিশলাইন ও আশ্রমপাড়া এলাকাতেও সরকারি মূল্যে আলু বিক্রির শিবির হওয়ার কথা। অন্য দিকে, বিষ্ণুপুর স্টেশন রোডের বাজারের শিবির থেকেও আলু কেনায় ক্রেতাদের উত্‌সাহ চোখে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির বিষ্ণুপুর শহর কমিটির সভাপতি রাজীব দে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনেই আমরা ১৩ টাকা দরে শিবির করে আলু বিক্রি করছি। এ দিন স্টেশন বাজারেই ১০ কুইন্টাল আলু বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার বিষ্ণুপুরের চকবাজারেও শিবির করার কথা ভাবা হচ্ছে।”
শিবির থেকে আলু কিনতে আসা বাঁকুড়া শহরের রথতলা এলাকার বাসিন্দা অভিজিত্‌ বিশ্বাস এ দিন বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি আলুর দাম ১৩ টাকা ধার্য করলেও আমরা এত দিন ১৪ থেকে ১৬ টাকার মধ্যেই আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছিলাম। সেই আলুর গুণগত মানও ভালও ছিল না। এই শিবিরে কম দামে ভাল আলু পেয়ে তাই বেশি করে আলু কিনে রাখলাম।” প্রতাপবাগানের বাসিন্দা সব্যসাচী চক্রবর্তীর মতে, এই ধরনের শিবির চললে সাধারণ ক্রেতারা ঠকবেন না।
এই শিবির অবশ্য জেলার মানুষের আলুর চাহিদার তুলনায় যত্‌সামান্য, বলছেন ক্রেতারাই। ঘটনা হল, জেলার বিভিন্ন খুচরো বাজারে কৃষি বিপণন দফতরের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ বাজারেই জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে কোথাও কেজি প্রতি ১৪ টাকা, কোথাও বা ১৬ টাকায়। বাঁকুড়া শহরের রামপুর এলাকার পরেশনাথ চট্টোপাধ্যায়, পাঠকপাড়ার সমরশেখর দাসদের ক্ষোভ, “প্রথমত বাজারে ভাল আলুই মিলছে না। অথচ সেই আলুই কিনতে হচ্ছে ১৪-১৬ টাকা প্রতি কেজি দামে। বেছে আলু নেওয়ার সুযোগ নেই। বাড়ি নিয়ে গিয়ে দেখছি, বেশ কয়েকটা আলু খারাপ। ফলে, সরকারি শিবির হলে এই সমস্যা থেকে হয়তো মুক্তি পাব।”
কিন্তু, এ রাজ্যের অন্যতম আলু উত্‌পাদক জেলায় কেন এই অবস্থা? মাচানতলা বাজারের খুচরো আলু ব্যবসায়ী সমর দাস, দুলাল পালদের যুক্তি, “পাইকারি ব্যবসায়ীরাই আমাদের আলু বেচছেন ন্যূনতম ১১ টাকা কেজি দরে। এর মধ্যে অনেক আলুই থাকে পচা। সেগুলি গরুকে খাওয়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবহণ খরচ। ফলে ১৩ টাকা কেজি দরে যদি আমাদের আলু বিক্রি করতে হয়, তা হলে মুনাফা তো হবেই না, উল্টে লোকসানের মুখে পড়তে হবে!” বস্তুত, খুচরো আলু বিক্রেতারা খুব একটা বাড়িয়ে বলছেন না, তা আড়ালে মানছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’-র একাধিক কর্মকর্তাও।
বিষ্ণুপুর মহকুমা কৃষি বিপণন আধিকারিক ক্ষুদিরাম সাঁতরা অবশ্য বলেন, “সোমবারও বাজারগুলিতে আমাদের অভিযান হয়েছে। ১৪ থেকে ১৬ টাকা দরে অনেকেই আলু বিক্রি করেছেন। তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।” কিন্তু, বাজারের রাশ যে পুরোপুরি সরকারের হাতে নেই, তা স্পষ্ট প্রশাসনের বক্তব্যেই। বাজারের মূল্যবৃদ্ধি রোখার টাস্কফোর্সের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মৌমিতা বসুর কথায়। তিনি বলেছেন, “বাজারে যত দিন না আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে, তত দিন পর্যন্ত আমরা আলু ব্যবসায়ী সমিতিকে মহকুমা সদর ও ব্লক সদরগুলিতে সরকারি মূল্যে আলু বিক্রির শিবির করতে বলেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.