আলু যেন গায়েব পুরুলিয়ার বাজারে
রাজ্য সরকার জ্যোতি আলুর দর বেঁধে দিয়েছে কেজি প্রতি ১৩ টাকায়। কিন্তু ঘটনা হল, ভাইফোঁটার আগে পুরুলিয়া জেলা জুড়েই বাজারে আলুর আকাল। পুরুলিয়া, আদ্রা, রঘুনাথপুর, কাশীপুরে সোমবার বাজারে গিয়ে বহু ক্রেতাই আলুর দেখা পাননি। যে টুকু মিলেছে, তা বিক্রি হয়েছে চড়া দামে প্রায় ২০-২৫ টাকা কেজিতে।
আজ, মঙ্গলবার ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। সকালে ভাইয়ের জন্য লুচি আলুর দমের প্রাতঃরাশ ভেবে রেখেছেন অনেক বোন-দিদিই। আর দুপুরের মেনুতে খাসির মাংসের বাটিতে উঁকি দেওয়া লালচে করে ভাজা ডুমো আলু ছাড়া কি ভাইফোঁটা সম্পূর্ণ হয়? রঘুনাথপুরের এক কলেজছাত্রীর কথায়, “এ দিন সকাল থেকে বাজার ঘুরে সামান্য আলু পেয়েছি। তার মানও বিশেষ ভাল নয়। ভেবেছিলাম, দাদার জন্য আলুর দমটা আমিই রাঁধব। কিন্তু, এই আলু দিয়ে কি আর দম হয়! তাই চড়া দামে বেগুন কিনেছি। লুচির সঙ্গে পাতে বেগুনভাজাটাই দেব! বাকি যতটুকু আলু আছে, তা মাংস রান্নার জন্য রেখে দিয়েছি।”
বস্তুত, এক সপ্তাহ আগেই জেলার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার টাস্কফোর্সের সদস্যেরা দেখেছিলেন, আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬ টাকা কেজি দরে। তখনই শুরু হয়েছিল কড়াকড়ি। তাতে ক্ষোভ বাড়ছিল আলু ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খুচরো বাজারের ছোটখাটো বিক্রেতাদের। তার দিন কয়েকের মধ্যেই বাজার থেকে আলু কার্যত উধাও! শনিবার থেকেই জেলার বাজারগুলিতে আলুর জোগান কমতে শুরু করেছিল। রবিবার কিছু এলাকায় আলু মিললেও সোমবার থেকে বাজারগুলিতে হাতেগোনা দোকানে আলু বিক্রি হয়েছে। এ দিন সকালে বাজার করতে যাওয়া পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা তাপস দাস, রাজু সরকার, বিপ্লব তরঙ্গ মল্লিক বা আদ্রার বাসিন্দা দিলীপ মোদী, রঘুনাথপুরের বিজয় মহান্তসকলের অভিজ্ঞতা একইরকম। তাঁদের বক্তব্য, “গুটিকয়েক দোকানে আলু বিক্রি হয়েছে। কিনতে হচ্ছে কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকায়।”
কিন্তু কেন এই অবস্থা?
আলু ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, পুরুলিয়ার বড় বাজারগুলিতে আলুর জোগানের সিংহভাগই আসে বাঁকুড়া থেকে। এ ছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুর ও বর্ধমানের কিছু এলাকা থেকেও আলু জেলায় ঢোকে। গত দুই-তিন ধরে ওই সব জেলা থেকে আলুর জোগান একেবারেই নেই। অথচ এই জেলায় আলুর চাহিদা প্রতিদিন ৪৫-৫০ টন। তিন দিনে চাহিদার দশ শতাংশ আলুরও জোগান নেই! পাইকারি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, পুরুলিয়ায় আলুর চাষ হয় না। কিছু ব্লকের সামান্য কিছু এলাকায় আলু উত্‌পাদন হলেও তা বিক্রি হয়ে যায় স্থানীয় বাজারেই। ফলে বাইরের তিন জেলা থেকে আমদানি করা আলুই ভরসা। কিন্তু যে টাকা খরচ করে আলু এনে বিক্রি করলে সামান্য লাভ থাকবে, সেই মূল্যে আলু মিলছে না।
ব্যবসায়ীদের কথায়, “টাস্কফোর্স ও প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে, প্রতি কেজি ১৩ টাকায় জ্যোতি আলু বিক্রি করতে হবে। কিন্তু, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই দামে খুচরো বাজারে আলু বিক্রি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাতে লাভ তো হবেই না। উল্টে লোকসানের মুখে পড়ব আমরা।” অন্য দিকে, খুচরো ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, টাস্কফোর্সের নির্দেশের পরে বেশি দামে আলু বিক্রি করার ঝুঁকি নিতে রাজি নন তাঁরা।
অন্য দিকে, এ দিন পুরুলিয়া বাজারে পাইকারি বিক্রেতারাই আলু বিক্রি করেছেন সরকার নির্ধারিত ১৩ টাকা কেজি দরে। খুচরো বাজারে আলুর আকাল থাকায় ওই আলু কিনতে সকাল থেকেই লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। যদিও ক্রেতাদের অভিযোগ উঠেছে, যে ক্রেতারা ন্যূনতম ১০ কেজি আলু কিনেছেন, কেবলমাত্র তাঁদেরই আলু বিক্রি করা হয়েছে। জেলা আলু পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির দুই কর্তা গৌরহরি সেন এবং অরবিন্দ সেনের অবশ্য দাবি, “খুচরো বাজারে ১৩ টাকায় আলু বিক্রি সম্ভব নয় বলেই তাঁরা এ দিন ওই দামে আলু বিক্রি করেছেন। রবিবারই সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ন্যূনতমন ১০ কেজি করে আলু বিক্রি করা হবে। আলুর জোগান হলে মঙ্গলবার থেকে সেটি ন্যূনতম ৫ কেজি করে দেওয়া হবে।” টাস্কফোর্সের দায়িত্বে থাকা পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার বলেন, “ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর থেকে আলু না আসায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.