কাশ বনের ছন্নছাড়া চেহারা জানান দিচ্ছে শরৎ ফুরিয়েছে। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল কালীপুজোও। তাই বলে কাজ কিন্তু থেমে নেই পালপাড়া কিংবা স্থানীয় বাজারগুলোতে। সামনের উৎসবগুলোর দিকে তাকিয়ে ফের শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়।
পুজো মিটতেই নদিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে স্থানীয় উৎসবগুলোর কাউন্টডাউন। সেই তালিকার একদিকে যেমন রয়েছে জেলা সদরের জগদ্ধাত্রী, নবদ্বীপের রাস। অন্যদিকে রয়েছে শান্তিপুরের ভাঙা রাস বা মায়াপুর-নবদ্বীপের বৈষ্ণব উৎসব, নিয়মসেবা। সব মিলিয়ে জেলার ব্যবসা বাণিজ্যের তৎপরতা এখন তুঙ্গে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলের মতে দুর্গাপুজো নদিয়া জেলায় উৎসব মরসুমের সূচনা করে মাত্র। দুর্গাপুজোর থেকেও এখানকার স্থানীয় অর্থনীতি অনেক বেশি নির্ভর করে জেলার বিভিন্ন শহরের বড় বড় স্থানীয় উৎসবগুলোর উপর। |
কালীপুজোর পর ফিরছে ঢাকিরা। পাশেই চলছে জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপ তৈরি। কৃষ্ণনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
এই সময় নবদ্বীপ এবং মায়াপুরের মঠ-মন্দিরগুলোতে বহু বৈষ্ণব ভক্ত আসেন। পর্যটকের ভিড়ে উপচে পড়ে হোটেল, ধর্মশালা, অতিথি আবাস। সবমিলিয়ে জেলার ছোট বড় সব ধরণের ব্যবসায়ীদেরই এখন ভরা মরসুম।
নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “দুর্গাপুজো বা ঈদের মরসুমে যে ব্যবসা সেটা রাজ্যব্যাপী। নদিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমাদের জেলার প্রধান শহরগুলিতে পুজোর পরের একমাস ধরে যে স্থানীয় উৎসবগুলি হয় তারও একটা বিরাট বাণিজ্যিক দিক রয়েছে। বরং বলা যায়, দুর্গাপুজো শেষ হলেই নদিয়ার উৎসব শুরু।” নদিয়ার এই সব স্থানীয় উৎসবগুলি কেমন? নবদ্বীপের রাস, কৃষ্ণনাগরিকদের জগদ্ধাত্রী বা শান্তিপুরের রাঙা রাস সব মিলিয়ে কয়েকশো প্রতিমা তৈরি হয়। সঙ্গে চোখ ধাঁধানো মণ্ডপ, আলোকসজ্জা, মাইক এবং বাজনা। পুজোর ভোগ, নৈবেদ্য, উৎসব উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয় পরিজনদের ভিড় এবং লক্ষ লক্ষ বহিরাগত দর্শনার্থী। সব মিলিয়ে বাণিজ্যের পরিমাণ দুর্গাপুজোর বেশ কয়েক গুণ। নবদ্বীপের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “সব ধরণের ব্যবসায়ীদের কাছেই পুজোর পরের এই একটা মাস প্রধান বাণিজ্য মরসুম। তার প্রস্ত্ুতিও সেভাবেই নেওয়া হয়। পুজোর মরসুমের শুধু পোশাক বাদে বাকি সমস্ত ক্ষেত্রেই নদিয়ার ব্যবসায়ীরা পুজোর মরসুমের থেকেও বেশি বিনিয়োগ করেন।” হোটেল ব্যবসায়ীদের রাজ্য সংগঠনের সদস্য নদিয়ার প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, “লক্ষ্মীপুজোর পর থেকেই এখানে ভিড়টা বাড়তে থাকে। অনুমান, এবারের পর্যটন মরসুমে গত বারের তুলনায় অন্তত ত্রিশ শতাংশ বেশি ব্যবসা হবে।”
নবদ্বীপের মৃৎশিল্পী সুদেব পাল, কৃষ্ণনগরের প্রকাশ পাল বলেন, “আমাদের চাপের মরসুম চলছে এখন। নবদ্বীপের রাসেই তিনশোর কাছাকাছি বড় প্রতিমা হয়। কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রীতেও সংখ্যাটা শতাধিক। একই চিত্র শান্তিপুরেও।” |