|
|
|
|
পাত পেড়ে খাওয়ার আয়োজন |
অন্য হোমে ভাইফোঁটা, নিমন্ত্রণ, আপ্লুত সৌমিত্ররা
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
নিজের বোন নেই, নিজের বলেই কেউ নেই। তাই ভাইফোঁটার নিমন্ত্রণ পেয়ে বেজায় খুশি হয়েছিল তমলুক শহরের বৈকুণ্ঠ সরোবর এলাকার শিশুরক্ষা সমিতি পরিচালিত হোমের আবাসিকরা। যাদের কাছ থেকে নিমন্ত্রণ এসেছে, তারাও ওদের মতোই অন্য একটি হোমের আবাসিক জেনে ফোঁটা নেওয়ায় ইচ্ছেটা আরও বেড়েছে। কারণ তাদের মতোই তমলুকের নিমতৌড়ি এলাকার আবাসিক হোমের ওই বোনেরা জানে, আপনজন না থাকার দুঃখটা কত গভীর। আজ, ভাইফোঁটার মিলন সুরে সেই আক্ষেপ মোছার আশায় রয়েছে দু’পক্ষই।
নিমতৌড়ি আবাসিক হোমের ওই বোনেদের কেউ অনাথ, কেউ হারিয়ে গিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন আর কেউ বা পাচার হওয়ার পর উদ্ধার হওয়া কিশোরী। পরিবার বলে কিছু না থাকলেও হোমের মধ্যেই সম্পর্কের লতাপাতা বুনেছে ওরাকাউকে বোন পাতিয়েছে, কাউকে দিদি, কেউ সখী। কিন্তু প্রায় ৭০ জন মেয়েদের নিয়ে এই আবাসিক হোমে ভাইয়ের স্নেহ নেই। সেই অভাব পূরণ করতেই হোম কর্তৃপক্ষ তমলুক শহরের আর এক হোমের ভাইদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছে ভাইফোঁটায়। নিমতৌড়ির আবাসিক হোমের পরিচালনার দ্বায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিমতৌড়ি তমলুক উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক যোগেশ সামন্ত বলেন, “বোনেরা যে একা নয়, তাদের মতো অনেক ভাইও একই ভাবে হোমে থাকে, তা বোঝাতেই এই আয়োজন। আমাদের হোমের তরফে ভাইফোঁটা দেওয়ার জন্য তমলুক শহরের ওই আবাসিক হোমের শিশু-কিশোরদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওই আবাসিক হোম কর্তৃপক্ষ আমাদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। আমাদের হোমের মেয়েরা এই অনুষ্ঠান আয়োজনের পুরো দ্বায়িত্ব নিয়েছে। আমরা ওদের সাহায্য করছি।”
যোগেশবাবু জানান, ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার সকালে তমলুক শিশুরক্ষা সমিতি থেকে গাড়িতে করে অনাথ শিশু-কিশোরদের নিয়ে আসা হবে নিমতৌড়ির হোমে। ঠিক যেমন বোনের বাড়িতে আসে ভাইয়েরা। বোনেরা ধান, দূর্বা, চন্দনের ফোঁটা দিয়ে ভাইদের মঙ্গলকামনা করবে। প্রীতিভোজেরও ব্যবস্থা রয়েছে। হোমের আবাসিক গীতা, রেবা, সুষমা, রিঙ্কিরা জানান, ভাইফোঁটা দেওয়ার সময় লুচি, ছোলার ডাল, সিমাইয়ের পায়েস সহযোগে জলখাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে ভাইদের। দুপুরে ভাত, ডাল, সব্জি, মাছ, মাংস, পাঁপড় ভাজা, দই-মিষ্টি দিয়ে ভূরিভোজ। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর ফের নিজেদের আবাসিক হোমে ফিরে যাবে ভাইরা।
তমলুকের হোমে ৬০ জনের বেশি অনাথ শিশু-কিশোর রয়েছে। তমলুক শিশুরক্ষা সমিতির সম্পাদক আশুতোষ দাস বলেন, ‘‘আমাদের হোমে প্রতি বছরই ভাইফোঁটার দিনে অনুষ্ঠান হয়। তবে এ বছরই প্রথম বাইরে কোথাও গিয়ে ওরা ফোঁটা নেবে। আমাদের হোমে যেমন অনুষ্ঠান হয়, তেমন হবে। তারপর ওরা নিমতৌড়ির হোমে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাবে।” দু’-দু’বার ফোঁটা পাবে জেনে খুশি ধরে না হোমের আবাসিকদের। দশম শ্রেণির পড়ুয়া সৌমিত্র, শুভঙ্কররা জানায়, নিমন্ত্রণ পাওয়ার পর থেকেই দিন গুণছে তারা। |
|
|
|
|
|