ঝাড়গ্রামে পুরভোট
রাজপুরুষের হাত ধরেই ঘাসফুল ফোটানোর চেষ্টা
ঝাড়গ্রাম রাজপরিবারের ইতিহাস সে প্রায় চারশো বছরের পুরনো। রাজতন্ত্রের অবসান হয়েছে বটে, কিন্তু রাজ আনুগত্য আজও অমলিন! ঝাড়গ্রাম রাজপরিবারের উত্তরসূরিদের এখনও ‘বিশেষ চোখে’ দেখেন পুরবাসী। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িকে ঘিরে জঙ্গলমহলের পর্যটন পরিকাঠামো ঢেলে সাজার উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রাজপুরুষের হাত ধরেই তিনদশকের লালমাটিতে ঘাসফুল ফোটানোর পরিকল্পনা ছকে ফেলেছে তৃণমূল।
দলীয় সূত্রের খবর, এবার ১৪নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দুর্গেশ মল্লদেবকে পুরপ্রধান হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ঝাড়গ্রামের শেষ রাজা নরসিংহ মল্ল-উগাল-ষণ্ডদেবের পৌত্র দুর্গেশবাবুর পোশাকি নাম শিবেন্দ্রবিজয় মল্লদেব। পুর-রাজনীতিতে তাঁর পুরনো অভিজ্ঞতাও রয়েছে। আগে ছিলেন কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম মহকুমা সভাপতি। পুরনো ১০ নম্বর (এখন ১৪) ওয়ার্ডে টানা পাঁচ বছর (২০০৩-২০০৮) পুরপিতা ছিলেন তিনি। রাজ্যের ক্ষমতার পালাবদলের পরে দলবদল করে দুর্গেশবাবু এখন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু তৃণমূলের সংস্কৃতিতে গোষ্ঠী রাজনীতির আকচা আকচির জেরে প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে নেতৃত্বকে হিমসিম খেতে হয়েছে। মাস খানেক আগে দুর্গেশবাবুর উদ্যোগে পুরনো ১০ নম্বর (এখন ১৪) ওয়ার্ডের কংগ্রেস পুরপিতা বিজয়প্রকাশ মাহাতো-সহ বেশ কয়েকজন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু বিজয়প্রকাশবাবু তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। নতুন ১০ নম্বর ওয়ার্ডে খোদ সিপিএম পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের বিপক্ষে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন দুর্গেশবাবুর স্নেহধন্য পেশায় ব্যবসায়ী ঘনশ্যাম সিংহ। ওই ওয়ার্ডে দলীয় কর্মীদের একাংশ অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন।

দুর্গেশ মল্লদেবের সমর্থনে প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।

পেশায় আইনজীবী অনিন্দ্যবাবু তাই জোড়াপাতা প্রতীকে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। এই দুই গোঁজ প্রার্থীর কাঁটা নিয়ে অবশ্য ভাবিত নন রাজা মশাইয়ের উত্তরসূরি। কারণ, অরণ্য শহরে তৃণমূলের দলীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রক যে তিনিই তা বিলক্ষণ বোঝাতে পেরেছেন দুর্গেশবাবু। দলের নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটিতে থাকা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদাকে রীতিমতো কোণঠাসা করে দিয়ে প্রার্থী তালিকায় কেবলই দুর্গেশবাবুর স্নেহধন্যদের আধিপত্য। মন্ত্রী সুকুমারবাবু নিজের মুখরক্ষার জন্য তাঁর দলীয় আপ্তসহায়ক দশরথ হেমব্রমকে প্রার্থী করার জন্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অনেক তদ্বির করেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয় নি। মন্ত্রী মুখে অবশ্য বলছেন, “প্রার্থী হিসেবে ১৮টি ওয়ার্ডে অনেকের নামই প্রস্তাব আকারে এসেছিল। সর্বসম্মত ভাবে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। নেত্রী-ই শেষকথা। দলে কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভের জায়গা নেই।” ঝাড়গ্রাম শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রশান্ত রায় টানা ১৫ বছরের পুরপিতা। এবার প্রশান্তবাবু ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী। পেশায় আইনজীবী প্রশান্তবাবু সোমবার আদালতের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর কথায়, “১৯৮২ সাল থেকে টানা ৩১ বছর ঝাড়গ্রাম পুরবোর্ডের ক্ষমতায় থেকেও বামেরা ন্যূনতম পরিষেবা দিতে পারে নি। ফলে পুরবাসীর ক্ষোভের আঁচে এবার ওরা পুড়ে খাক হয়ে যাবে।” প্রশান্তবাবু মানছেন, “পুরবাসীর ক্ষোভের আঁচ এতটাই তীব্র যে, এখানে আমরা প্রার্থীরা নিমিত্ত। দলের প্রতীক-ই শেষকথা।” প্রশান্তবাবু এ কথা বললেও বাস্তব ছবিটা কিন্তু অন্য। ইতিমধ্যেই ‘ঝাড়গ্রামের ত্রাতা’ দুর্গেশবাবুকে সপার্ষদ জেতানোর আবেদন জানাচ্ছেন তাঁর অনুগামীরা। বিনয়ী দুর্গেশবাবু করজোড়ে আবার বলছেন, “আমার পূর্ব পুরুষেরা ঝাড়গ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির মানোন্নয়নে এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। মানুষ সে কথা মনে রেখেছেন। ফলে আমার জেতাটা বড় কথা নয়। পুরবোর্ডের ক্ষমতায় আমরা (তৃণমূল) এলে অরণ্যশহরের খোলনলচে বদলে দেব। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।”
ক্ষাত্রতেজের শক্তি কতটা, সেটাই এখন দেখার!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.