আলু-অভিযানে পশ্চিমে ধৃত ২৫, পূর্বে নিষ্ক্রিয় প্রশাসন
রকারি দামের থেকে বেশি দরে আলু বিক্রি ঠেকাতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার মেদিনীপুর শহর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি চালিয়ে মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আড়তদার থেকে খুচরো বিক্রেতা, সব ধরনের আলু ব্যবসায়ীই রয়েছে। মেদিনীপুর শহরের নিমতলাচকে আবার আলুর এক আড়তদারকে ধরতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক। বাদ যায়নি পুলিশও। সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় নামে ওই আড়তদারকে অবশ্য শেষমেশ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “রাজ্য সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই আলু বিক্রি করতে হবে। কেউ তা না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আগামী দিনেও এমন অভিযান চলবে বলে ভারতীদেবী জানিয়েছেন। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারিও বলেন, “সব বাজারে যাতে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হয়, সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। চড়া দামে আলু বিক্রি হচ্ছে পূর্বেও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এক জনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “নিয়মিত অভিযান চলছে জেলার বিভিন্ন বাজারে। ভিন্ রাজ্যে যাতে আলু যেতে না পারে, সেজন্য সীমানা এলাকায় অভিযান জোরদার হয়েছে।”

মেদিনীপুর শহরের দ্বারিবাঁধের আলুর গুদামে পুলিশের হানা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থান ও ধরপাকড়ের জেরে বিভিন্ন জেলাতেই আলুর দাম কমে এসেছিল। তবে ভাইফোঁটার বাজারে ফের দাম চড়ছে। তার উপর জেলা জুড়ে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্মবিরতির জেরে বেশিরভাগ বাজারে আলু বিক্রেতার সংখ্যাও কমে গিয়েছে। সেই সুযোগে অনেক বিক্রেতা আলুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। বেশি দামে আলু বিক্রির খবর পেয়ে সোমবার মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাজার ও গুদামে যৌথ ভাবে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ এবং কৃষি বিপণন দফতর। মেদিনীপুর শহরে অভিযানে ছিলেন কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক ব্রজেন সরকার, দুর্নীতিদমন শাখার ডিএসপি অঞ্জন রায়, কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী প্রমুখ। সঙ্গে সাদা পোশাকের পুলিশ। প্রথমে কোতয়ালি বাজারে হানা দেয় পরিদর্শক দল। সেখানে গিয়ে তো সকলের চক্ষুচড়কগাছ! দেখা যায়, সরকারের বেঁধে দেওয়া কিলো প্রতি ১৩ টাকা দরের বদলে প্রতি কেজি ১৭-১৮ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। পুলিশ খুচরো ব্যবসায়ীদের থেকে কয়েক বস্তা আলু বাজেয়াপ্ত করতেই দাম পড়তে শুরু করে। পুলিশের সামনে ১৩ টাকাতেও আলু বিক্রি হয়। কিন্তু পরিদর্শক দল বাজার ছাড়তেই ফের দাম বাড়ে। এরপর রাজাবাজারে অভিযান চলে। বেশ কয়েকজন খুচরো ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয়। কয়েকজন খুচরো বিক্রেতা অসন্তোষ জানিয়ে বলেন, “পাইকারি বাজারেই জ্যোতি আলুর দাম প্রতি কেজি ১৩-১৪ টাকা। তাহলে খুচরো বাজারে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি হবে কী ভাবে?”
রাজাবাজারে তল্লাশি সেরে পরিদর্শক দল পৌঁছয় নিমতলাচকে সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় নামে এক আড়তদারের গুদামে। অভিযোগ, তিনি সরকারি দামের চেয়ে বেশি দরে আলু বিক্রি করছিলেন। ওই গুদাম থেকে ৮ বস্তা আলু বাজেয়াপ্ত করা হয়। আর ওই আড়তদারকে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। তখনই কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক ব্রজেনবাবুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় কয়েকজন। একজন ওই আধিকারিকের জামার কলারও ধরতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশকর্মীরা ওই আধিকারিককে জটলা থেকে এনে গাড়িতে ওঠার ব্যবস্থা করে দেন। ব্রজেনবাবু অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। বেশি দামে আলু বিক্রির অভিযোগে এ দিন শহরের বিভিন্ন বাজার থেকে ৬ জন খুচরো আলু ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কয়েক বস্তা আলু।
এ দিন খড়্গপুর টাউন ও লোকাল থানার পুলিশও অভিযান চালিয়ে ৪ জন আলু ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। ইন্দা বাজার থেকে সুনীল চিমনা ও কৌশল্যা বাজার থেকে মীরপুরের কেনারাম হুইকে গ্রেফতার করে খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ। লক্ষ্মীচক বাজার থেকে স্থানীয় আলু ব্যবসায়ী কানাইলাল দে ও বসন্তপুর বাজার থেকে সুলতানপুরের লক্ষ্মীকান্ত জানাকে গ্রেফতার করে খড়্গপুর লোকাল থানার পুলিশ। এঁরা সকলেই ১৩ টাকা কেজি দরের থেকে বেশি দামে আলু বিক্রি করছিলেন। একই অভিযোগে গড়বেতা থেকে এক জন ও চন্দ্রকোনা রোড থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বাজারে পরিদর্শক দলের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ।
চন্দ্রকোনাতেও এ দিন অভিযান চলে। সরকারি দামের থেকে দাম বেশি দরে আলু বিক্রির অভিযোগে ঠাকুরবাড়ি বাজার থেকে কুরানি সাহা নামে এক খুচরো বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্থানীয় ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এক ক্রেতা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন চন্দ্রকোনা শহরের ঠাকুরবাড়ি বাজার, রেগুলেটেড বাজার, গোঁসাইবাজার, জয়ন্তীপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় জ্যোতি আলু কিলো প্রতি ২০-২২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঘাটালের পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার সব্জিবাজার, কুঠিবাজারেও একই চিত্র। ধরপাকড়ের ঘটনায় সর্বত্রই আলু বিক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাটালের এক আলু বিক্রেতা বলেন, “আমাদের উপর চাপ দিয়ে কী লাভ? সরকার ফঁড়ে এবং বড় বড় আড়তদারদের কেন কিছু করছে না? আমরা তো ওদের থেকেই ১৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনছি। তাহলে চা ১৩ টাকায় বিক্রি করব কী ভাবে?”
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম শহরের জুবিলি বাজারের সব্জিপট্টি থেকে ৫ জনকে ধরে পুলিশ। এর মধ্যে ৪ জন খুচরো আলু বিক্রেতা ও একজন পাইকারি আলু ব্যবসায়ী। এর পর ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁরা সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দরে আলু কিনেছেন। ফলে তাঁদের পক্ষে ১৩ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি করা সম্ভব নয়। বেশি দামে আলু বিক্রির অভিযোগে মানিকপাড়া থেকে ৩ জন ও বিনপুর থেকে ২ জন আলু ব্যবসায়ীকে পাকড়াও করেছে পুলিশ।
এরই মধ্যে গত ৫ দিন ধরে জেলায় কর্মবিরতি পালন করছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। ফলে, হিমঘর থেকে আলু বেরোচ্ছে না। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার ৭২টি হিমঘরে এখনও ৭০ লক্ষ প্যাকেট (প্রতি প্যাকেট ৫০ কেজি করে) আলু রয়েছে। নিয়মানুযায়ী চলতি মাসেই হিমঘর থেকে আলু বের করে নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সম্পাদক বরেন মণ্ডলের বক্তব্য, “আমাদের অনুরোধ সরকার আমাদের দিকেও একটু নজর দিক। আমরা জেলা ও জেলার বাইরে আলু পাঠাতে রাজি আছি। কিন্তু অবশিষ্ট আলু বাইরের রাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে আমাদের লোকসান হয়ে যাবে।
কর্মবিরতি তুলতে প্রশাসন উদ্যোগী হচ্ছে না কেন? এ ব্যাপারে সকলেরই মুখে কুলুপ। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ শুধু বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে জেলার সর্বত্র সরকারি মূল্যে আলু বিক্রি করা যায়।” আর কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক ব্রজেন সরকারের বক্তব্য, “জেলা জুড়েই অভিযান চলছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.