কখনও রাস্তায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কখনও চলন্ত যানবাহনকে তোয়াক্কা না করে ওদের দল বেঁধে রাস্তা পার হতেও দেখা যায়। ওদের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না পথচারী, ব্যবসায়ীরাও। এক মাস ধরে এ ভাবেই গরুর অত্যাচারে রায়গঞ্জ শহরের নানা রাস্তায় যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। ব্যবসায়ী, পরিবহণ মালিক ও পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির নালিশ পুলিশ ও পুরসভার গাফিলতির জেরেই শহরে গরুর দৌরাত্ম্য বাড়ছে। পুর ভাইস চেয়ারম্যান রণজকুমার দাস বলেন, “পুরসভার গরু ধরার পরিকাঠামো নেই। তাই পুলিশকেই রাস্তা থেকে গরু সরানোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, প্রতি দিন সকালে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ তাঁদের পোষা গরুর দুধ দুইয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন। এর পরে দিন ভর গরুগুলি খাবারের খোঁজে শহরের বিভিন্ন রাস্তার ধারের হোটেল, ফলের দোকান, বাজার ও খাবারের দোকানের সামনে ভিড় করছে। গভীর রাতে তারা মালিকের বাড়িতে ফিরছে। তাঁর মতে, “পুলিশ গরুর মালিকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলেই শহরে গরুর অত্যাচার কমা সম্ভব। তিনি জানান, পুরসভার তরফে পুলিশকে সে প্রস্তাবই দেওয়া হচ্ছে। রায়গঞ্জ থানার আইসি দীনেশ প্রামাণিক বলেন, “শহরে সত্যিই গরুর অত্যাচারের জেরে দুর্ঘটনা ও যানজট বাড়ছে। গরুর মালিকদের এই ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। সমস্যার সমাধানে দেখা যাক কী করা যায়।” |
পথ জুড়ে এ ভাবেই থাকে গরুর পাল। ছবি: তরুণ দেবনাথ। |
প্রতিদিনই রায়গঞ্জের মোহনবাটি, নিউ মার্কেট, নেতাজি সুভাষ রোড, মহাত্মা গাঁধী রোড, বিদ্রোহী মোড়, রাসবিহারী মার্কেট, দেহশ্রী মোড়, সুপার মার্কেট, শিলিগুড়ি মোড়, হাসপাতাল রোড এবং পুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার নানা হোটেল ফলের দোকান, বাজার ও খাবারের দোকানের সামনের রাস্তার উপর দীর্ঘক্ষণ বসে ও দাঁড়িয়ে থাকছে। এ ছাড়া চলন্ত যানবাহনকে তোয়াক্কা না করে ওরা দল বেঁধে রাস্তা পার হচ্ছে। ফলে প্রতিটি এলাকাতেই যানজটের জেরে সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা। এক একটি দলে ৮ থেকে ১২টি করে গরু থাকছে।
গত দুই সপ্তাহে শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তার উপর আচমকা গরুর দল চলে আসায় সেগুলিকে বাঁচাতে গিয়ে চারটি মোটর বাইক, দুটি রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাওয়ায় ৯ জন বাসিন্দা জখম হয়েছেন। পাশাপাশি, পুর বাসস্ট্যান্ড ও রাসবিহারী মার্কেট এলাকায় ট্রেকার ও বাসের ধাক্কায় তিনটি গরু জখম হয়। যানজট কমাতে রাস্তার উপর থেকে গরু তাড়াতে গিয়ে গত কয়েক দিনে নিউ মার্কেট ও মোহনবাটি এলাকার চারজন ব্যবসায়ী ও আচমকা গরুর গুঁতোয় অন্তত চার জন পথচারী জখম হয়েছেন বলে জানা যায়। রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী ও পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্স সম্পাদক জয়ন্ত সোম বলেন, “পুরসভা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে গরু না ছাড়ার জন্য গরুর মালিকদের সতর্ক কররুক। তাতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে গরুর মালিকদের জরিমানা ও গ্রেফতার করা হোক। ব্যবসায়ীদের পথচলতি গরুদের খাবার না দেওয়ার অনুরোধ করেছি।” উত্তর দিনাজপুর বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক চন্দ জানান, শহরের বিভিন্ন রাস্তার উপর দিনভর গরুর দল দাঁড়িয়ে ও বসে থাকায় যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। চালকরা হর্ন বাজালেও গরুগুলি রাস্তা থেকে সরে না। গাড়ির ধাক্কায় গরু জখম হলে তার দায় ও চিকিৎসার ভার বাস মালিকদের নিতে হয়। পুরসভা ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জেরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পিপল ফর অ্যানিম্যালের জেলা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া বলেন, “পুরসভা ও পুলিশ কী ভাবে রাস্তা থেকে গরু সরাবে তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে এর পরে দুর্ঘটনায় কোনও গরু জখম হলে পথ অবরোধ করা হবে।” |