প্রত্যন্ত এলাকার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন স্কুল পড়ুয়াদের হাতে-কলমে প্রকৃতি-পাঠ দিতে উদ্যোগী হল সর্বশিক্ষা মিশন। কোচবিহার জেলার ২০০ প্রতিবন্ধী পড়ুয়াকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডুয়ার্সের হাতিপোতা এলাকার জঙ্গলে। চার দিন তাঁবু খাটিয়ে রাখা হবে তাদের। কোচবিহার সর্বশিক্ষা মিশনের ওই কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন। ২১-২৭ নভেম্বর দু’দফায় ওই শিবির হবে। সর্বশিক্ষা মিশনের কোচবিহারের প্রকল্প আধিকারিক আমিনুল আহসান বলেন, “যেটা স্কুলে, হস্টেলে শেখাতে অনেক সময় লাগে, সেই কাজটাই মুক্ত পরিবেশে চট করে শেখে পড়ুয়ারা। এ বার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের নিয়ে প্রকৃতি পাঠ শিবির হচ্ছে। ন্যাফ সহযোগিতা করছে।”
প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই, ২০০জন পড়ুয়ার সঙ্গে থাকবেন ১২০জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী। এই শিশুদের যাঁরা স্কুলে পড়ান, তাঁরাও থাকবেন। |
প্রকৃতিপাঠ শিবির।—ফাইল চিত্র। |
কোচবিহার জেলার ওই উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে গোটা উত্তরবঙ্গেই। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলায় পড়ুয়া ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে এ ধরনের শিবিরের জন্য আর্জি জানানো হয়েছে প্রকল্পের অফিসারদের কাছে। একাধিক স্কুলের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ফি বছর শীতের সময়ে নানা এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে যে প্রকৃতি পাঠ শিবির হয়ে থাকে, সেখানে অংশ নেওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি সরকার অনুমোদিত স্কুলের সাধারণ পড়ুয়াদের অনেকের নেই। সর্বশিক্ষা প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ থেকে প্রকৃতি পাঠ শিবির করানোর কথা ভাবছেন অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষই। এ কাজে সামিল হতে আগ্রহী একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠনও।
সরকারি সূত্রের খবর, সর্বশিক্ষা মিশনের বরাদ্দ টাকায় প্রকৃতি পাঠ শিবির করানোর সুযোগ রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের একাধিক স্কুল ফি বছর ৩-৪ দিনের প্রকৃতি পাঠ শিবিরের আয়োজনও করে থাকে। এই রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গেও একাধিক জেলায় প্রকৃতি পাঠ শিবির আয়োজন করে থাকে সর্বশিক্ষা মিশন। তাতে পড়ুয়াদের বন্য ও বন্যপ্রাণী সম্পর্কে হাতে-কলমে নানা অভিজ্ঞতা হয়। ইদানীং কেন্দ্রের তরফে চার দেওয়ালের ঘেরাটোপের বাইরে পড়ুয়াদের নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।
সে কারণে গত বছর কোচবিহারের সিতাই ও শীতলখুচির দুটি সরকারি হস্টেলের ছাত্রীদের প্রকৃতি পাঠ শিবির করানোর আয়োজন হয়। অনগ্রসর সম্প্রদায়ের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন দিনের প্রকৃতি পাঠ শিবির সফল হওয়ার পরে এ বার বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের শিবিরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশনের কোচবিহার জেলার তরফে আয়োজিত প্রথম শিবিরেও সহযোগীর ভূমিকায় ছিল ন্যাফ।
ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু জানান, ঘুম থেকে ওঠা থেকে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত যাবতীয় কাজ ঘড়ি ধরে শৃঙ্খলা মেনে করা জরুরি। এ কথাটা পড়ুয়াদের স্কুলে, বাড়ি বা হস্টেলে শেখাতে নাস্তানাবুদ হন অনেকে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার অভিজ্ঞতা এমনই। কিন্তু, পাহাড়-নদী-জঙ্গল ঘেরা পরিবেশে গেলে সে কাজ অনেক সহজ হতে পারে। অনিমেষবাবু বলেন, “পাখি, গাছপালা, জানোয়ার, কীটপতঙ্গের সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা থেকে অনেক কিছু শিখে ফেলে পড়ুয়ারা। তা ছাড়া, দড়ি ধরে নদী পার হওয়া শিখে প্রতিকূলতায় মাথা ঠাণ্ডা রাখার কৌশল আয়ত্ত করার সুযোগ মেলে শিবিরে।” |