কালীপুজোতে দেদার শব্দবাজি ফাটল হুগলি জেলার বিভিন্ন জায়গায়। উত্তরপাড়া থেকে কোন্নগর, রিষড়া থেকে বৈদ্যবাটি, চণ্ডীতলা থেকে হরিপাল, বলাগড় থেকে গুপ্তিপাড়া বা তারকেশ্বর শনিবার সন্ধ্যা থেকে শব্দবাজির দাপটে কানে তালা লাগার জোগাড়।
উত্তরপাড়া শহরে পুলিশি নজরদারি চোখে পড়েনি। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেখানকার দোলতলা, সখের বাজার, ভদ্রকালী বা কোতরং সর্বত্রই যথেচ্ছ চকোলেট বোমা, দোদোমা ফেটেছে। শ্রীরামপুরে ছোট থেকে বড় সকলের হাতে হাতে ঘুরে বেড়িয়েছে চকোলেট বোমা। গুপ্তিপাড়া স্টেশন রোড, আর্যনগরে শনিবার সন্ধে থেকেই প্রচুর বাজি ফেটেছে। চণ্ডীতলা, সিঙ্গুর, বলরামবাটি বা তারকেশ্বরেও শব্দবাজির দাপট কম ছিল না। তবে জেলা সদর চুঁচুড়া, চন্দননগর, ব্যান্ডেল, মগরা বা আরামবাগ শহরের মতো জায়গায় শব্দবাজির দাপট ছিল তুলনায় অনেকটাই কম।
কোথাও কোথাও শব্দবাজির দাপট যে ভাল রকম ছিল পুলিশকর্তারা তা অস্বীকার করেননি। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “জেলার কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে শব্দবাজি ফেটেছে। কালীপুজোর আগে পুলিশের অভিযানে সর্বত্র তা হয়নি। নানা জায়গা থেকে প্রচুর বাজি আটক হয়েছে। ধরপাকড় হয়েছে।”
হুগলি জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় বাজি তৈরি হয়। চণ্ডীতলার বেগমপুর, কলাছড়া, ধনেখালি, হরিপালের নানা গ্রামে কুটির শিল্পের মতো বাজি তৈরি হয়। বিনা লাইসেন্সেই বারুদ নিয়ে ঘরের ভিতরেই ঘাঁটাঘাঁটি করেন গৃহবধূ মায় কচিকাঁচারাও। কয়েক দিন আগেই বেগমপুরে এমনই একটি বাড়িতে বাজি তৈরির সময় বিস্ফোরণে প্রাণ যায় দু’টি শিশু-সহ পাঁচ জনের। পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য এর পরে নড়েচড়ে বসে। লাগাতার অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে প্রচুর বাজি আটক করা হয়। তার মধ্যে শব্দবাজিও ছিল বিস্তর। ভাবা গিয়েছিল, বেআইনি শব্দবাজির বিক্রি আটকাতেও পুলিশ সচেষ্ট হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। হরিপালের মালপাড়ায় প্রচুর শব্দবাজি বিক্রি হয়েছে। চকোলেট বোমা থেকে প্রচুর আওয়াজ সৃষ্টি করা গাছবোম কোনও কিছুরই অভাব ছিল না সেখানে। পুলিশের নজর না থাকায় সে সব নিষিদ্ধ বাজি ঢেলে বিকিয়েছে। ট্রেনে-বাসে চেপে নানা জায়গায় ছড়িয়ে গিয়েছে ওই সব বাজি। শুধু হুগলিই নয়, আশপাশের জেলা থেকেও হুগলির বিভিন্ন জায়গায় এসে বাজি কিনে নিয়ে গিয়েছেন লোকেরা।
প্রসঙ্গত, হুগলি হচ্ছে রাজ্যের প্রথম শব্দ-শহিদের জেলা। বেশ কয়েক বছর আগে শব্দবাজির প্রতিবাদ করায় শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুরের যুবক দীপককুমার দাসকে খুন করা হয়েছিল। সেই মামলার আজও নিষ্পত্তি হয়নি। শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-প্রশাসন ফি-বছর প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের যে আদৌ কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, নিষিদ্ধ বাজির আকাশ ফাটানো শব্দই তার প্রমাণ। |