কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির তাণ্ডবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খেতে হয়েছে প্রতিবন্ধী এক যুবক ও এক মহিলাকে। দু’টি ঘটনাই দক্ষিণ কলকাতার। এ বার একই কারণে মার খেয়ে রীতিমতো জখম হলেন তিন পুলিশকর্মী। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর থানা এলাকায়।
রবিবার রাতে ওই ঘটনায় দেখা গেল, রাস্তায় ট্রামলাইনের ধারে পড়ে রয়েছেন উর্দিধারী এক পুলিশ। তাঁকে ঘিরে ধরে কিল, চড়, লাথি, ঘুষি মারছে কয়েক জন দুষ্কৃতী!
অল্প দূরে গলির ভিতরে আর এক দল দুষ্কৃতী ঘিরে রেখেছে থানার এক সাব-ইনস্পেক্টর-সহ কয়েক জনকে। ভিড় থেকে পুলিশকর্মীদের দিকে ধেয়ে আসছে ইটপাটকেল। কখনও পুলিশকে লক্ষ করে ছেটানো হচ্ছে থুতু!
রবিবার রাতে ওই দু’টি ঘটনার সাক্ষী থাকল শ্যামপুকুর থানা এলাকার মায়ের ঘাট সংলগ্ন গোপাল নিয়োগী লেন। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীদের প্রহারে আহত হয়েছেন থানার তিন পুলিশকর্মী। বিভাস কুণ্ডু নামে এক কনস্টেবলের আঘাত গুরুতর। |
ওই রাতে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুষ্কৃতীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে, সোমবার এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার নাম রাজকুমার দাস। তার বিরুদ্ধে পুলিশকে মারধর, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়া এবং হামলা করার অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। ওই ঘটনায় আরও যারা জড়িত, তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
কী ঘটেছিল ওই রাতে?
পুলিশ জানায়, গোপাল নিয়োগী লেনে শব্দবাজি ফাটাচ্ছিলেন এলাকার কয়েক জন। বাজির আগুন ছিটকে পড়ে এক দর্জির দোকানে। দোকানে থাকা কিছু জামাকাপড় আগুনে পুড়ে যায় বলে দোকান-মালিকের অভিযোগ। তবে, আগুন ছড়ানোর আগেই স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য নিয়ে ওই দোকান-মালিক আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
দোকান-মালিক মলয় দাস সোমবার বলেন, “যারা বাজি পোড়াচ্ছিল, তাদের বাজি পোড়ানো বন্ধ করতে বলি। তাতে স্থানীয় বাসিন্দা অমরজিৎ শর্মা ও আরও কয়েক জন যুবক আমাকে মারে।” ওই যুবকেরা মলয়বাবুর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের গালিগালাজ করে ও দোকানের সেলাই মেশিন ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ।
লালবাজার সূত্রের খবর, বাজি পোড়ানো নিয়ে গোলমাল বেধেছে খবর পেয়ে শ্যামপুকুর থানার সাব-ইনস্পেক্টর শিবনাথ মজুমদার পুলিশবাহিনী নিয়ে রাত দশটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন। দোকান-মালিকের অভিযোগ পেয়ে শিবনাথবাবু দু’পক্ষকেই থানায় যেতে বলেন। বিপত্তি বাধে তাতেই।
অভিযোগ, এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ পুলিশকর্মীদের দিকে তেড়ে গিয়ে জানতে চান, তাঁরা কেন পাড়ায় ঢুকেছেন? বাজি ফাটানোর খবর তাঁদের কে দিয়েছে? থানা সূত্রের খবর, সেই সময়ে ঘটনাস্থলে পুরুষের চেয়ে মহিলার সংখ্যাই বেশি ছিল।
ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশকর্মী জানান, উত্তেজিত জনতার সঙ্গে যখন তাঁদের কথাবার্তা চলছে, ঠিক সেই সময়ে হাজির হন পাশের পাড়ার ‘মাতব্বর’ গোছের কয়েক জন। তারাই প্রথমে পুলিশকর্মীদের গালাগালি করে পোশাক ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। পুলিশকর্মীরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের দিকে থুতু ছেটায় কয়েক জন।
তদন্তকারীরা জানান, এর পরেই এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়। উত্তেজিত একদল যুবক পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে। কনস্টেবল বিভাস কুণ্ডু রবীন্দ্র সরণির দিকে পালানোর চেষ্টা করলে কয়েক জন যুবক তাঁকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং ইট মারে। পড়ে যান বিভাসবাবু। তখন রাস্তায় ফেলে তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়। তাঁর বুকে-পিঠে কিল, চড়, লাথি, ঘুষি মারা হয়।
পুলিশের অভিযোগ, গোপাল নিয়োগী লেন এবং রামকৃষ্ণ লেনের মোড়ে সাব-ইনস্পেক্টর শিবনাথ মজুমদার এবং কনস্টেবল উত্তম পালকে ঘিরে নিগ্রহ করা হয়। তাঁদের লক্ষ করে ইট, পাথর ছোড়া হয়। থুতু ছেটানো হয় তাঁদের গায়ে। মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। ছিড়ে দেওয়া হয় তাঁদের উর্দিও। আধ ঘণ্টা পরে থানার ওসি উজ্জ্বল রায় পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশকর্মীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। তত ক্ষণে অবশ্য এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে ওই দুষ্কৃতীরা। রাতেই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয় আহত পুলিশকর্মীদের।
লালবাজারের এক কর্তা এ দিন জানান, পরিস্থিতি এমন হয় যে, পুলিশ থানাতেও প্রথমে খবর দিতে পারেনি। পুলিশকর্মীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। |