বাজারে আলুর দাম কমাতে কোমর বেঁধেছে প্রশাসন। আর এই মাত্রাছাড়া দামের পিছনে মূলত বৃষ্টিকেই দুষছে চাষি থেকে ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট সব মহল। ভিন্ রাজ্যের মাত্রাছাড়া বৃষ্টিও পশ্চিমবঙ্গে আলুর বাজার দর বাড়ার ক্ষেত্রে সহায়কের ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
চাষিরা জানিয়েছেন, চলতি বছর রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় ‘জলদি আলু’র (মরসুমের শুরুতে যে আলু ওঠে) চাষ ভীষণ ভাবে মার খেয়েছে। প্রতি মরসুমে উত্তরপ্রদেশ এবং পঞ্জাব থেকেও এ রাজ্যে ‘জলদি আলু’আসে। কিন্তু ওই দুই রাজ্যে এ বার মাত্রাছাড়া বৃষ্টি হওয়ায় সে পথও বন্ধ। ফলে, আলুর জোগানে টান পড়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিমত, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে সব্জি চাষও ব্যাপক মার খেয়েছে। ফলে, শীতের মরসুমের শুরুতে ফুলকপি, বাঁধাকপি-সহ অন্যান্য সব্জির যে জোগান বাজারে থাকে, তা অন্যান্য বারের তুলনায় বেশ কম। দামও বেশি। ফলে, চাহিদামাফিক সব্জি না-মেলায় আলুর চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু সে ভাবে জোগান নেই। স্বাভাবিক ভাবেই আলুর দামে প্রভাব পড়ছে। সোমবার আলুর দেখা মেলেনি অধিকাংশ খুচরো এবং পাইকারি বাজারে। যেখানে মিলেছে, সেখানে ক্রেতাকে ১৭০০-১৮০০ টাকা দাম দিতে হয়েছে ৫০ কেজির জ্যোতি আলুর বস্তার। |
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক দিলীপ প্রতিহার বলেন, “বৃষ্টির জেরে শুধু এ রাজ্য নয়, ভিন্ রাজ্যেও জলদি আলুর চাষ এ বার মার খেয়েছে। এমন দু’টি রাজ্যে এ বার জলদি আলুর চাষ মার খেয়েছে যে দু’টি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে আলুর জোগানদার। ফলে, বাজারে প্রভাব ফেলেছে।” তবে আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা আশ্বস্ত করেছেন, আজ, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের হিমঘরগুলিতে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে।
এ ছাড়াও অবশ্য আলুর বাজার দরের চলতি পরিস্থিতি ঠেকাতে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপকে অনেকাংশে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোয় সরকারি নিষেধাজ্ঞার জেরে আলুর ট্রাক নানা এলাকায় আটকে রয়েছে। ফলে, বাজারে তা আসছে না। এর প্রতিবাদে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি বন্ধও ডেকেছে। আলুর দাম বৃদ্ধিকে এটাও কারণ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আলু ব্যবসায়ী বলেন, “প্রতি মরসুমে এ রাজ্যের আলু উৎপাদনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আলু ভিন্ রাজ্যে যায়। পাল্টা অন্য রাজ্যের জলদি আলুও এখানে আসে। কিন্তু সরকার অনড় থাকায় আলুর লেনদেনের যে স্বাভাবিক গতি থাকে সেটাই ভেঙে পড়েছে। জোগান ও চাহিদার স্বাভাবিকত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আলুর দাম লাগামছাড়া।”
এই পরিস্থিতির মাঝেই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন রাজ্যের হিমঘর মালিক অ্যাসোশিয়েসনের অন্যতম কর্তা রামপদ পাল। তিনি বলেন, “বন্ধে হিমঘরের মুটিয়াদের অধিকাংশই বাড়ি চলে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কেউ চাইলেও হিমঘর থেকে আলু দেওয়া যাবে না। আগামী বুধবার পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলবে।” তবে, ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখনও রাজ্যের হিমঘরগুলিতে ১৭ লক্ষ টন আলু মজুত রয়েছে। জোগান ও চাহিদা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলে দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ হবে। তবে তা ঠিক কবে, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এখনই কেউ দিতে পারেননি। |