যে শহরে রাত দশটার পরে বাস কার্যত ‘ডুমুরের ফুল’ হয়ে যায়, সেই শহরেই রাত ১টা পর্যন্ত ট্রাম চালানোর কথা ভাবছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। কিন্তু কলকাতায় এখন কিছু নির্দিষ্ট রুটেই শুধু ট্রাম চলে। এমনকী, ট্রাম হাওড়া স্টেশন পর্যন্তও যায় না। সে ক্ষেত্রে, মধ্যরাতে ক’জন যাত্রীই বা থাকবেন ট্রামে ওঠার জন্য? এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।
শহর জুড়ে যানবাহনের গতি বাড়াতেই দিনের বেলা ট্রাম নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “দফতরের কাছে প্রস্তাব এসেছে, সারা দিনের পরিবর্তে ভোর সাড়ে ৪টে থেকে সকাল ৯টা এবং রাত ৮টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ট্রাম চলুক। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি। তবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও অনেক দিক খতিয়ে দেখতে হবে।”
ট্রাম-কর্মীরা অবশ্য এই খবর এখনও পাননি। যাঁরা শুনেছেন, তাঁদের মতে, এর ফলে ট্রামের পরিণতি আরও করুণ হবে। কারণ, অফিসের ব্যস্ত সময়েই ট্রামে যাত্রী বেশি হয়। ট্রামের রুট কমে যাওয়ায় ভোরের ট্রামে এখন আর এমনিতেই বেশি যাত্রী পাওয়া যায় না। কাজেই রাত আটটার পরেও বেশি যাত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, শহরে এখন ২৫টি রুটে রোজ ১২৫টি ট্রাম চলে। দৈনিক যাত্রী হয় গড়ে ৬০-৭০ হাজার। এখন ট্রাম কোম্পানির হাতে রয়েছে ২৬৭টি ট্রাম। কিন্তু রুট না থাকায় সবগুলিকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এ দিকে, কলকাতা পুলিশ উত্তর কলকাতা থেকে ধর্মতলা-বি বা দী বাগ পর্যন্ত চলাচল করে এমন ১ থেকে ৬ নম্বর রুটের ট্রামগুলিকে বিভিন্ন রুটে না চালিয়ে একটি রুটে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ট্রাম কোম্পানি এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
শহরের পাঁচটি রাস্তায় ট্রামলাইন কংক্রিট করার ভাবনাও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। তিনি জানান, এর জন্য খরচ হবে ৪০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, “বেহাল ট্রামরাস্তার জন্য যানবাহনের গতি কমে যায়। তা ছাড়া, এখন শহরে যে সব রাস্তায় ট্রাম চলে, তার প্রতিটিতে দ্রুত গতির যানও চলে। তাই নতুন করে কয়েকটি ট্রাম-রাস্তা কংক্রিট করার প্রস্তাব রয়েছে। এতে কয়েটি সুবিধা আছে। যেমন, পিচ-রাস্তার চেয়েও বেশি দিন টেকে কংক্রিটের পথ। অল্প বৃষ্টিতে কংক্রিটের রাস্তার ছাল-চামড়া উঠে যায় না।”
যে সব ট্রাম-রাস্তা কংক্রিট করার কথা ভাবা হয়েছে, সেগুলি হল: ওয়েলিংটন স্কোয়ার-রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড-ইলিয়ট রোড হয়ে নোনাপুকুর মোড় পর্যন্ত পথ, সূর্য সেন স্ট্রিট-আমহার্স্ট স্ট্রিট-বৌবাজার ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া রুট, আর জি কর থেকে ক্যানাল ব্রিজ পর্যন্ত পথ, শিয়ালদহ উড়ালপুলের কিছু অংশ ও মহাত্মা গাঁধী রোড।
তবে পরিবহণমন্ত্রী জানিয়েছেন, এমন প্রস্তাব থাকলেও আগামী বছরের জানুয়ারির আগে তা বাস্তবায়িত করা যাবে না। কারণ, এই সময়ে একের পর এক উৎসব রয়েছে এবং সেই সঙ্গে রাস্তা কংক্রিট করার জন্য আরও কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন। |