|
|
|
|
হেঁশেলে কদর বাড়ছে পেঁপের |
অর্ঘ্য ঘোষ • ময়ূরেশ্বর |
ভাজা থেকে টক। প্রায় সব পাতেই বাঙালির আলু চাই। কিন্তু সেই আলুই ক্রমশ মহার্ঘ্য হয়ে উঠেছে। তাই ছাপোষা বাঙালি আলু জোগাড়ে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই রান্নার বিভিন্ন পদে গুরুত্ব দিচ্ছেন পেঁপেকেই। মধ্যবিত্ত বাঙালির হেঁশেল থেকে তেলেভাজা-ফুচকার দোকানেও পেঁপের কদর বাড়ছে।
মাস খানেক আগেও জেলার বিভিন্ন হাটেবাজারে আলুর খুচরো দাম ছিল প্রতি কেজি ৬-৮ টাকা। সরকারি আলুর (জ্যোতি) দর প্রতি কেজি ১৩ টাকা বেঁধে দিলেও সোমবারও বীরভূমের প্রায় সর্বত্রই ক্রেতাদের ধার্য মূল্যের তুলনায় বেশি দামে আলু কিনতে হয়েছে। এ দিন ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া হাটেই আলুর খুচরো দাম ছিল প্রতি কেজি ১৫-১৬ টাকা। এ দিন জেলার প্রায় সর্বত্র বহু ক্রেতাই আলু কিনতে পারেননি। কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনেছেন। এ দিন সব্জির দামও ছিল অনেক বেশি। তুলনায় পেঁপের দাম ছিল অনেক কম। গ্রামের হাটগুলিতে পেঁপে বিকিয়েছে প্রতি কেজি ৫-৭ টাকায়। শহর ও শহর লাগোয়া বাজারে পেঁপের দাম ছিল ১০-১১ প্রতি কেজি। লাভপুরের রেজিস্ট্রি অফিস পাড়ার সামসের আলম, নানুরের বুদ্ধদেব গড়াইরা বলছেন, “কী করব, অন্য সব্জির দাম তো আমাদের নাগালের বাইরে। তাই অন্য সব্জির চেয়ে পেঁপেই ভাল।” |
|
সাঁইথিয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
স্বাভাবিক ভাবেই গত কয়েক দিন ধরে বহু বাঙালির হেঁশেলে জায়গা করে নিয়েছে পেঁপে। ময়ূরেশ্বরের কুন্তলার আরতি মণ্ডল, নানুরের উচকরণের শ্যামলী থান্দাররা বলেন, “আগে মাংসের ঝোল কিংবা তরকারিতে তিন ভাগ আলুর সঙ্গে এক ভাগ পেঁপে দিতাম। এখন হিসেব উল্টেছে। আলুর বদলে পোস্ত ছিটিয়ে স্রেফ পেঁপে ভাজা দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। স্বাদে বৈচিত্রও আসছে।” গাঁ-গঞ্জে মানুষকে বাজার থেকে বিশেষ পেঁপেও কিনতে হয় না। অধিকাংশের বাড়িতেই পেঁপে গাছ রয়েছে। যাঁদের নেই, তাঁরা অন্য সব্জির বিনিময়ে অথবা আত্মীয়তার খাতিরে পেয়ে যাচ্ছেন পেঁপে।
শুধু হেঁশেলেই নয়, তেলেভাজা কিংবা ফুচকার ঠেলাতেও পেঁপের কদর বাড়ছে। ময়ূরেশ্বরের ঘুষকড়ার ফুচকা ব্যবসায়ী সন্তোষ ভল্লা বললেন, “দিন দিন দাম বেড়ে যাওয়ায় ফুচকার সঙ্গে পুরোপুরি আলু মশলা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আলুর সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি।” একই উপায় বেছেছেন কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ডের তেলেভাজা দোকানি সুজল দাসও। তিনি বলেন, “আলুর দাম বাড়লেও চপের দাম হঠাত্ করে বাড়াতে পারছি না। তাই আলুর সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে কিংবা পরিমাণ কমিয়ে চপ তৈরি করছি।” শুধু আলুর বদলেই নয়, পেঁয়াজ, বিট, গাজরের বিকল্প হিসেবেও পেঁপেকে কাজে লাগানো হচ্ছে। ঘুগনি, মোগলাই পরোটা-সহ যে সব খাবারে পেঁয়াজ অথবা বিট-গাজর দেওয়া হয়, পেঁপেকে যন্ত্রের সাহায্যে কেটে রঙ করে বিট-গাজরের পরিবর্ত হিসেবে ওই সব খাবারে ব্যবহার করছেন এলাকার অনেক ব্যবসায়ীই। এ দিকে আলুর সঙ্কট যে আরও বেশ কিছু দিন ধরে চলবে তা মেনে নিচ্ছেন খোদ জেলা কৃষি দফতরের কর্তারাই। দফতর সূত্রে খবর, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চলতি মরসুমে ভাল করে আলুচাষ শুরুই করা যায়নি। গত বছর জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল। হয়েছিল ১৯,৩৫০ হেক্টর জমিতে। এ বার ওই লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার হেক্টর রাখা হয়েছে। কিন্তু গত বার এই সময় যখন প্রায় ১০০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়ে গিয়েছিল, তখন এ বারে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০০ হেক্টরেই আলু চাষ হয়েছে। জেলা সহকারী কৃষি আধিকারিক (তথ্য) অমর মণ্ডল বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আশানুরূপ আলু চাষ করা সম্ভব হয়নি। দেরিতে চাষের কারণে এ বারের উত্পাদনে কিছুটা ঘাটতি হবে। পর্যাপ্ত নতুন আলু পেতেও দেরি হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|